আমাদের একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন আছে। এটার নাম বৃত্ত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। উক্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি অনেকদিন থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছি। মূলত আমরা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি থাকি। বাচ্চাদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট নিয়েও সেমিনার সিম্পোজিয়াম করি। এছাড়া গরিব অসহায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করি।
যাক আলোচনা সেটা নয়, আলোচনা হচ্ছে গত মাসে আমরা আমাদের এই সংগঠনের নিয়মিত আয়োজন আন্তঃ ইউনিয়ন স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার তৃতীয় সিজন আয়োজন করেছি। ফাইনালে দুটি স্কুলের মাঝে যে বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল সেটার বিষয়বস্তু ছিল “দন্ডবিধিতে মৃত্যুদণ্ড থাকা অনুচিত” বিষয়টি আমি আয়োজক কমিটির কাছে উপস্থাপন করি এবং সবাই এটা গ্রহণ করে। উক্ত বিষয়বস্তু নিয়ে যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক করার এলিমেন্ট আছে বলেই এটা বিষয় হিসবে নির্ধারিত হয়।
যাইহোক দুই ইউনিয়নের দুটি স্বনামধন্য স্কুল ফাইনালে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয় বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তারা উক্ত বিষয়বস্তুর পক্ষে ছিল। এতটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিল, সমস্যা শুরু হয়েছে যখন আমরা অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যকলাপের ছবি এবং বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা শুরু করি। তখনই এলাকার কিছু মোল্লা এটা নিয়ে ঘোর আপত্তি তোলা শুরু করে। তাদের যুক্তি হল আমরা ইসলাম বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি এবং আমাদের ভিতর কোন গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। ইসলামে যেখানে দন্ডবিধিতে মৃত্যুদণ্ড বিধান আছে সেখানে আমরা কোন যুক্তিতে দন্ডবিধিতে মৃত্যুদণ্ড থাকা অনুচিত এই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক আয়োজন করি!
এলাকায় আমাদের কিছু হেটার্স আছে যারা এই সুযোগে তাদের সাথে হালে বাতাস দিতে থাকে। অবস্থা পুরোপরি বেগতিক হয়ে যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে বাকি সবাইকে বাদ রেখে আমাকেই কঠিনভাবে দোষী করা হয়। ফেসবুকে ফেইক আইডি থেকে আবার কেউ কেউ সরাসরিও হুমকি-ধমকি দিতে থাকে এবং সর্বশেষ আমার ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছেও অভিযোগ জানাতে শুরু করে।
আমি অবশ্য নির্বিকার ছিলাম, কারণ এদের আচরণের সম্পর্কে আমার ধারণা অনেক আগে থেকেই ছিল। এরা কখনোই জ্ঞানের চর্চা করার পক্ষে ছিল না, ওদের জ্ঞান বলতে শুধুই ইসলামী জ্ঞান বুঝায়। এর বাইরে কেউ কিছু করতে গেলে তাদেরকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য নানারকম ঘৃণ্য কাজ করে। কিন্তু সর্বশেষ যখন পরিবারের কাছে অভিযোগ অনবরত যেতে থাকে, এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি ও বিচারকদেরকেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করা শুরু করে তখন আমি হতাশ হয়ে পড়ি।
যাইহোক, জল যখন অনেক দূর গড়িয়ে গিয়েছে তখন তারা প্রস্তাব দিয়েছে আমরা যদি আমাদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চাই তাহলে তারা তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে। এলাকাবাসীকে এক করে আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং আমাদেরকে বৃত্তের ভিতরেই ঢুকিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটিতে যারা ছিল তারাও হতাশ হয়ে যেতে থাকলো এবং সর্বশেষ আমি সিদ্ধান্ত দিলাম ভুল স্বীকার করে একটি পোস্ট দেওয়ার জন্য এবং সেটি দেওয়া হলে তারা কিছুটা শান্ত হয়। তারপরেও জানিনা ঈদের সময় বাড়িতে গেলে এটা নিয়ে আবার কোনো কিছু ঘটে কিনা আল্লাহই ভাল জানেন!
আমি, বৃত্ত ফাউন্ডেশন এবং বিতর্ক আয়োজনের আহ্বায়ক কমিটি পরাজিত হলাম!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:২০