দিল্লি তথা ভারত এই উপমহাদেশের আশেপাশের সকল দেশের রাজনীতিতেই প্রভাব রাখে। ভারতের এই প্রভাবকে অস্বীকার কিংবা অবহেলা করার কোন উপায় নেই। মুঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি বাদশা হুমায়ন যখন এই বাংলা আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা শুরু করে তখন বাংলা ছিল শের খাঁ'র দখলে।
বাদশা হুমায়ুনের বাংলা আক্রমণের কথা শুনে শের খাঁ সম্রাটের উদ্দেশ্যে একটি পত্র লিখেন। পত্রটি পড়লে বুঝতে পারবেন ভারত তথা দিল্লিকে অবজ্ঞা করা খুবই কঠিন সিদ্বান্ত ছিল সবসময়।
প্রেরক: দাসানুদাস সেবক শের খাঁ।
প্রাপক : আল সুলতান আল আজম ওয়াল খাকাল আল মুকাররাম, জামিই সুলতানাত-ই-হাকিকি ওয়া মাজাজি, সৈয়দ আল সালাতিন, আবুল মোজাফফর নাসির উদ্দিন মোহাম্মদ হুমায়ূন পাদশাহ, গাজি জিল্লুল্লাহ।
হে মহান সম্রাট, হিন্দুস্থানের রক্ষাকর্তা ও মালিক। আল্লাহ্পাকের অনুগ্রহের ফুটন্ত গোলাপ। মহান কবি ও চিত্রকর হুমায়ূন।
হে বাদশাহ, আপনি কি অধম শের খাঁ'র উপর নারাজ হয়েছেন? হিন্দুস্থান হলো গুজবের বাজার। সেই বাজারের বর্তমান দুর্গন্ধময় গুজব হলো— আপনি অধম শের খাঁ'র বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।
হে সম্রাট! আমি কি এমন কিছু করেছি যার জন্যে আপনার বিরাগভাজন হয়েছি? চুনারের দুর্গ আমার পুত্র কুতুব খাঁর দখলে, এটা সত্য। সম্রাটের আদেশ পাওয়ামাত্র কুতুব খাঁ দুর্গের চাবি আপনার পবিত্র হাতে তুলে দিয়ে আপনার পদচুম্বন করবে। তবে আপনার কোনো প্রতিনিধির হাতে না। আপনি স্বয়ং উপস্থিত হলে তবেই দুর্গের চাবি আপনার হস্ত মোবারকে দেওয়া হবে। আমি পুত্রকে নিয়ে বঙ্গদেশের ভেতরে চলে যাব। এর অন্যথা কখনো হবে না।
হে পবিত্র সম্রাট, আপনি গুপ্তচর মারফত খবর নিয়ে নিশ্চয়ই জেনেছেন আমি আমার নিজের নামে খুৎবা পাঠ করাই না। মহান মোঘল সম্রাট হুমায়ূনের নামেই জুমার নামাজে খুৎবা পাঠ করা হয়। টাকশাল থেকে আমার নামে কোনো মুদ্ৰা তৈরি হচ্ছে না।
এই অধম যেখানে সম্রাটের সেবায় নিযুক্ত তখন আপনি তার উপর বিরাগ হচ্ছেন, অথচ আমি যতদূর জানি আপনার ভাই আসকারি মীর্জা এবং কামরান মীর্জা তাঁদের নামে খুৎবা পাঠ করছেন। টাকশালে তাঁদের নামে স্বর্ণমুদ্রা তৈরি হচ্ছে। এরকম কিছু মুদ্রা আপনার কাছে পাঠালাম।
মহান সম্রাট, আপনার দুই ভাইয়ের নাম এখানে এনে যদি অপরাধ করে থাকি তাহলে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আপনার মহান পিতা বঙ্গদেশের ফল আম অত্যন্ত পছন্দ করতেন। আমি আম এবং আরও কিছু বঙ্গদেশীয় ফল আপনার সেবার জন্যে পাঠালাম । সে সঙ্গে সোনার তৈরি একটি বিষ্ণুমূর্তি।
বিষ্ণুমূর্তিটির ওজন এগারো সের। সম্পূর্ণ স্বর্ণনির্মিত, এর চোখ নীলকান্তমণির। এই বিষ্ণুমূর্তি বিষয়ে প্রচলিত গল্প হলো, ভয়াবহ বিপদের আগে আগে সে অশ্রুবর্ষণ করে। রহস্যময় বিষয়ে আপনার আগ্রহের কথা জানি বলেই বিষ্ণুমূর্তি বিষয়ে প্রচলিত গল্পটি জানালাম।
ইতি
শের খাঁ
আপনার দাসানুদাস সেবক ।
পত্রের অনুবাদক:
হুমায়ূন আহমেদ