বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ সচিব ড. আকবর আলী খানের একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম অনেক আগে, “সেখানে তিনি বলেছিলেন প্রশাসনের ভালো কর্মকর্তাদের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা সর্বদাই তাড়িয়ে বেড়ায়। ” কথাটি যে কতটা সঠিক তা আমরা খালি চোখেই এখন দেখতে পাই। যারা প্রশাসনে আছে তারা আমাদের চেয়ে আরো বেশি বুঝতে পারে। আমি এর আগে বহুবার বলেছি, আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলারা বহুগুণ বেশি দুর্নীতিবাজ। সমস্যা হচ্ছে আমাদের অদক্ষ রাজনীতিবিদদের ছোটখাটো দুর্নীতির ব্লু প্রিন্ট দুষ্টু আমলাদের হাতে থাকে। আর এটাকেই তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। রাজনীতিবিদদের চাপে রেখে নিজেরা বড় ধরনের দুর্নীতি করে।
রাজনীতিবিদদের জবাবদিহি করতে হয় জনগণের কাছে, আর আমলাদের জবাবদিহি করতে হয় রাজনীতিবিদদের কাছে। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা অদক্ষ ও আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালনার সাথে খুব বেশি পরিচিত নয় বলে, দুষ্ট আমলারা তাদের উপর ছড়ি ঘুরায়!
অদক্ষ রাজনীতিবিদ, দুষ্ট আমলাদের সাথে যখন ভয়ঙ্কর সাংবাদিকরা জোট বাদে তখন বুঝতে পারেন সে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন থাকবে! রাজনীতিবিদদের কাছে আমলাদের এবং জনগণের কাছে রাজনীতিবিদদের ন্যূনতম হলেও জবাবদিহিতার কিছু ব্যাপার থাকে, কিন্তু সাংবাদিকদের জবাবদিহিতার জায়গা এ দেশে কোথাও নেই। প্রথম প্যারায় যেমনটি বলছিলাম, সৎ কর্মকর্তাদের অসৎ কর্মকর্তারা তাড়িয়ে বেড়ায়। ঠিক তেমনি সৎ রাজনীতিবিদ ও সৎ আমলা, উভয়কে তাড়িয়ে বেড়ায় এসব ভয়ংকর সাংবাদিকরা! এছাড়াও এদের রোষানলে পরে সৎ ব্যবসায়ী ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান! অবশ্য বাংলাদেশে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যারা মালিক তারা আবার স্বনামধন্য সব গণমাধ্যমেরও মালিক। এরা এদের ছোট ছোট প্রতিযোগীদের তাদের গণমাধ্যম ব্যবহার করে কিভাবে পথে বসিয়ে দেয় এর উদাহরণ চাইলে অনেক টানা যাবে!
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মান যে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা আপনি এদের নিউজ গুলি ফলো করে ধারণা নিতে পারবেন। তবে শুধু নিউজ পড়ে/দেখে আপনি পুরো বিষয়টি বুঝবেন না। নিউজ যখন পড়বেন তখন সেই গণমাধ্যমটির মালিক কে, তার কি কি ধরনের ব্যবসা আছে, সেগুলি সম্পর্কে যদি ধারণা থাকে তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন সাংবাদিকতার নামে সেখানে কি হচ্ছে! এছাড়াও দেখবেন তাদের জেলা, উপজেলা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের কোন প্রকার বেতন ভাতা দেওয়া হয় না। তারপরেও তারা বছরের পর বছর সাংবাদিকতা করে যাচ্ছে। এগুলির পিছনের রহস্য কি, সেগুলি বুঝতে পারলে বুঝবেন সাংবাদিকতার নামে কি চলছে!
ছোট্ট একটি উদাহরণ নিন, অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে সারাদেশে ২০০২/০৩ সালে র্যাব অনেক গুলো অপারেশন চালিয়েছিল। তখন পত্রিকাগুলি, টিভি চ্যানেল গুলি হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষগুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপনা করেছে যে, মানুষের মৌন সমর্থন আদায় করতে তৎকালীন সরকার সমর্থ হয়েছে। ওইসব ঘটনায় পত্রিকাগুলির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তখন বিভিন্ন নিরপরাধ প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সম্পর্কে গণমাধ্যমে মিথ্যে খবর রটিয়ে দিবে বলে কোটি কোটি টাকা তাদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছে অনেক সাংবাদিক! কিছু এমএলএম ব্যবসায় ধ্বস নামানোর ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে। কেননা এমএলএম ব্যবসায় বিজ্ঞাপনের জন্য গণমাধ্যমের শরণাপন্ন হতে হয় না। যার জন্য মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসাগুলোকে গণমাধ্যম দুই চোখে দেখতে পারেনা।
সর্বশেষ বলি, আজ পর্যন্ত এদেশে কোনো গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করার পর সে মামলায় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জিতেছে কিনা? কিংবা জিতলেও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পেরেছে কিনা? অন্তত আমার জানা নেই!
ভালো সাংবাদিক যে নেই সেটা অবশ্য বলবো না। আগের মতোই বলব, এই সেক্টরেও ভালো সাংবাদিকদের অসৎ সাংবাদিকরা সর্বদায় তাড়িয়ে বেড়ায়!