বর্তমান সময়ে আওয়ামীলীগ সরকার যে অবস্থানে আছে এবং বিএনপি যে দাবি নিয়ে বসে আছে, তাতে বিএনপি'র নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সম্ভাবনাই বেশি। আওয়ামীলীগ চাচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে নির্বাচন করাতে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে এটি একটি সুন্দর ও কার্যকর প্রক্রিয়া। সমস্যা হচ্ছে আওয়ামীলীগ গত দুইবারের নির্বাচনে এই প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি। সরাসরি বললে নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে এবার হিসেব কিছুটা ভিন্ন, গত দুইবারের মতো নির্বাচন করা আওয়ামীলীগের পক্ষে কঠিনই হবে। নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায় হবে সেটা এখনো আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতাও সম্ভবত মালুম করতে পারছেনা। তবে নির্বাচন যে নির্বাচন কমিশনের অধীনে হতে যাচ্ছে এটা একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপি তাদের দাবিতে অনড় এবং আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনের প্যাটার্নও পরিবর্তন করবেনা। তাহলে এমন অবস্থায় নির্বাচন করলে কি সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে!
আসলে বিএনপি নির্বাচনে আসলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং তারা না আসলে নির্বাচন কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মানুষের ভোটে অংশগ্রহণ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে ভাবতে হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। তাদের জন্য নিয়ম-কানুন গুলো কিছুটা শিথিল করা যেতে পারে এবং আওয়ামীলীগের মাফিয়া দের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তারা যেন নির্বাচনের প্রার্থীদের উপর নিজেদের বল প্রয়োগ না করে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করতে ১% ভোটারদের সমর্থনের যে স্বাক্ষরের দরকার হয়, সেটাকে বাদ দিয়ে ৫০০ বা ১০০০ জন স্বাক্ষর দিলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে এমন নিয়ম করা।
আরেকটি ব্যবস্থাও অবলম্বন করা যায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে preferential voting methods বা পছন্দানুক্রম ব্যবস্থা চালু করা। এক্ষেত্রে ভোটারগণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তার পছন্দের প্রার্থীদেরকে পর্যায়ক্রমে ভোট দেবে। যে ১ নম্বর পছন্দের তালিকায় সবচেয়ে বেশি থাকবে সে সরাসরি সংসদে প্রবেশ করবে। দ্বিতীয় যে হবে তাকেও সংসদে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে তবে সে সরাসরি বিল উত্থাপন করতে পারবে না। আমি হয়তো একটি ধারণার কথা বললাম তবে এটিকে কাস্টোমাইজ করে আরো সুন্দর করে এক্সিকিউট করা গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উৎসাহ বাড়বে।
যাইহোক এত কিছু বলার প্রয়োজন হতোনা যদি আমরা একটি শক্তিশালী, দক্ষ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিরোধীদল পেতাম। বিএনপি ও জামাত জোট যে ধরনের বিরোধী দল, তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখা আপাতত সঠিক হবে। আমার এ কথায় ব্লগার তানভীর জুমার, ঢাবিয়ান রেগে যেতে পারেন হয়তো! কিন্তু বিএনপি-জামাত জোটকে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করার আগে তাদের সময় ঘটা ১৭ই আগস্ট, ২১শে আগস্ট, এসএম কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টার, মুফতি হান্নান, জজ মিয়া এগুলির সম্বন্ধে স্পষ্ট স্টেটমেন্ট দেওয়া উচিত। কারণ এই ঘটনাগুলি আমাদের জাতির জন্য একটি খারাপ সিগনেচার বহন করছে। এর সুরাহ না করে বা তারা ক্ষমতায় আসলে এই ব্যাপার গুলির যে পুরনাবৃত্তি হবেনা তার নিশ্চয়তা না নিয়ে তাদের জন্য সঠিক নির্বাচন করার আপাতত প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বুঝাই যাচ্ছে আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচন করার প্যাটার্ন পরিবর্তন করবেনা। আর এই ধরনের ব্যবস্থায় বিএনপিও নির্বাচনে আসবেনা। সেক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের আকৃষ্ট করার জন্য যা যা করার দরকার সকল কার্যকর পদক্ষেপ এখন থেকে নেওয়া উচিত। সাথেসাথে আওয়ামীলীগের, যুবলীগের, ছাত্রলীগের পান্ডারা যেনো স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হয়রানি করতে না পারে তার জন্য শক্ত অবস্থান নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২১