গত নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন এবার ক্ষমতায় আসলে তিনি দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স দেখাবে। জিরো মানে জিরো, এই জিরো আবার আমাদের ব্লগার মহাজাগতিক চিন্তার জিরো নয়, যে জিরোর ভিতরে আবার কিছু থাকে। যাইহোক শেখ হাসিনার ওই কমিটমেন্টের পরে বেশ আশান্বিত হয়েছিলাম দেশে দুর্নীতি কমে আসবে। কিন্তু দুর্নীতি কমার চেয়ে বেড়েছে মনে হচ্ছে। উনি জিরো টলারেন্স না বলে যদি বলতেন, দুর্নীতি আর বাড়তে দেবেন না, তাও ভালো হতো।
আসলে সবদিকে তাকালে, যোগ বিয়োগ করলে দুর্নীতি যে কমেনি বরং বেড়েছে তা স্পষ্ট বুঝা যায়! আমাদের রাজনীতিবিদদের অদক্ষতার কারণে আমলারা দুর্নীতির আরো নতুন ১০১টি উপায় বের করেছে!
দুর্নীতি বলতে আমরা অনেকেই শুধু বুঝি, অবৈধ উপায়ে টাকা রোজগার করা আর সে টাকা বিদেশে পাচার করা কিংবা কাজ বা সেবার বিনিময় ঘুষ নেওয়া। দুর্নীতি মানে হচ্ছে নীতি বহির্ভূত কাজ। নীতি বহির্ভূত সকল কাজই দুর্নীতি, শুধুমাত্র অর্থ সংশ্লিষ্ট কাজ দুর্নীতি নয়। খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান থেকে জনগণকে সঠিক সেবা না দেওয়া, জনগণ থেকে সঠিক তথ্য লুকানো, সরকারি তথা জনগণের অর্থের অপচয় করা, সঠিক বিচার না করা, এমনকি নিজের আট ঘন্টা ডিউটির সময়টুকু সঠিকভাবে না করা, এসকলই দুর্নীতি! এখন এই বিষয়ে গুলি মাথায় রেখে এটা কি বলা সম্ভব, শেখ হাসিনা সরকার দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স দেখানোর চেষ্টা করেছে?
উনার সরকারের একজন মন্ত্রী বলছেন “এদেশে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব নয়!” মন্ত্রীর সেই স্টেটমেন্ট আবার প্রধানমন্ত্রী জানেনা! পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছে “আমরা ব্রিকসে যোগদান করবো” এদিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন ব্রিকসে যোগ দেওয়ার জন্য কোনো আবেদনই করা হয়নি! এই হলো আমাদের মন্ত্রী পরিষদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর সমন্বয়! সমন্বয় হীনতা অবশ্যই দুর্নীতি বাড়ায়।
সামনে নির্বাচন আসছে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়তো আবারো বলবেন দুর্নীতিতে উনি জিরো টলারেন্স দেখাবেন এবং অনেকে সেটা বিশ্বাস করবে। আমাদের সরকার গুলি ক্ষমতায় আসার আগে যে সকল কমিটমেন্ট করে সেগুলি কতটুকু রক্ষা করতে পারে সে নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়না। যার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিটমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি চিন্তাভাবনা করতে হয় না। শেখ হাসিনা সরকার যেভাবে অবকাঠামগত উন্নয়ন করেছে তার সাথেসাথে যদি দুর্নীতি বন্ধ কিংবা কমিয়ে আনতে পারতেন, তাহলে মানুষ বিএনপি-জামাত বা বিরোধী পক্ষগুলোকে ভুলে যেতো। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির সেবার মান ও সঠিক বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারতো, তাহলে মানুষ শেখ হাসিনাকে আজীবন ভালোভাবে মনে রাখতো।
ক্ষমতা থাকার সময় উনি ক্ষমতা ধরে রাখতে কি কি করেছেন সেগুলি এখন স্পষ্ট বোঝা সম্ভব নয়। উনি যখন থাকবেন না সেগুলি নিশ্চয়ই বের হয়ে আসবে। আর তখন উনার ইমেজ নিম্নমুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আগামী নির্বাচনে উনার দল এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে আবার ক্ষমতায় আসবে। উনি যে সময়টুকু পাবেন সেই সময়টুকুতে উনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন উপহার দেওয়া উচিত। এতে মানুষ উনার অতীতের অনেক ভুল ত্রুটি ভুলে গিয়ে, উনাকে আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।