
ইসরাইল, হামাস, আমেরিকা এসব নিয়ে ব্লগে এটি আমার প্রথম পোস্ট। আমি আসলে এসব নিয়ে খুব বেশি ভাবতে পারিনা কারণ এগুলি এতটাই জটিল যে মিডিয়ার উপর নির্ভর করে সঠিক স্টেটমেন্ট দেওয়া, ধারণা করা কিংবা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া বেশ কঠিন। তারপরেও কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা করতে চাই। কয়েকদিন আগে ইসরাইল হামাস বিষয়টি সামনে আসে হামাস যখন ইসরাইলের সাধারণ নাগরিকদের বসতির মধ্যে অতর্কিত মিসাইল হামলা করে। সে হামলায় ১৪০০ ইসরাইলি নিহত হওয়ার খবর মিডিয়ায় আসে। এই হামলার প্রেক্ষিতে ইসরাইলের আর্মি গাজায় পাল্টা আক্রমণ করে। সে আক্রমণ এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে এবং প্রায় সাড়ে বারো হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও নারী সাথে হামাসের কিছু সদস্য থাকতে পারে। তবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ ইজরাইলের হামলার সাথে সাথে হামাসের সদস্যরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়, যারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে পারেনি তারা সাধারণ মানুষের সাথে মিশে গিয়েছে।
যেদিন হামাস ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলিদের নিহতের সংখ্যা সেই ১৪শই আছে, এরপর হয়তো কিছু সেনা মারা যেতে পারে। কিন্তু গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রতিদিনই হুহু করে বাড়ছে! এর কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে হামাস ইসরাইলে হামলা করার পর ইসরাইলের পাল্টা হামলার জন্য নূন্যতম প্রস্তুতি নেয়নি কিংবা নেওয়া সম্ভবও না, কারণ হামাস কোনো ট্রেইন্ড আর্মি বাহিনী নয়।
হামাস ইসরাইলকে বুঝাতে চেয়েছে তাদের মিসাইল ধ্বংসকারী আয়রন ডোমের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব। আসলে তারা যে প্রক্রিয়ায় আয়রন ডোমের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙেছে এটার কথা ইসরাইলও জানতো। কেননা তাদের আয়রন ডোম হয়তো একসাথে ৫০০ মিসাইল ধ্বংস করতে পারে কিন্তু হামাস একসাথে পাঁচ হাজার মিসাইল ছোড়ার কারণে সবগুলোকে ধ্বংস করতে পারেনি। যার জন্য কিছু মিসাইল ইজরাইলের ভূখণ্ডে গিয়ে আঘাত করতে পেরেছে। কিন্তু হামাস এই পরীক্ষাটি করতে গিয়ে পুরো গাজাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তারা নিজেরাও জানতো ইসরাইলের পাল্টা হামলার প্রেক্ষিতে তাদের আর কিছুই করার থাকবেনা। তারা ইসরাইলিদের পাল্টা হামলা রোধ করতে কিছু ইহুদীদের বন্দি করে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। কিন্তু ইসরাইল এবার প্রথমবারের মতো তাদের বন্দিদের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন ছিল। যারজন্য তারা গাজার মধ্যে ব্যাপক হারে ধ্বংসযোগ্য চালায় এবং স্পষ্টত এটি যুদ্ধাপরাধ।
এখন আসুন এই যুদ্ধাপরাধ, নারী ও শিশু নির্বিচারে হত্যা এগুলি কি আমেরিকা দেখছে না? অবশ্যই দেখছে! এই নৃশংসতা বন্ধ করার মত ক্ষমতা একমাত্র আমেরিকার হাতেই আছে কিন্তু তারপরও তারা করছে না, কেনো?
এটা বুঝতে হলে আমাদের অনেক দূর পিছনে যেতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল, যুদ্ধ যখন শেষের দিকে জার্মানির পতন অলরেডি হয়ে গেছে, হিটলারের সাড়াশব্দ নেই তখন মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, ফাইটার বিমান সব জাপানের দিকে তেড়ে আসছে। সে সময় জাপানের প্রেসিডেন্ট প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূতাবাসে আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠায়। যুদ্ধে যখন আপনার শত্রুপক্ষ আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠাবে তখন আপনার করণীয় কি? এটা অবশ্যই আমাদের ব্লগাররা বলতে পারবে। কিন্তু জাপানের আত্মসমর্পণের বার্তার তোয়াক্কা না করে আমেরিকা জাপানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরপর দ্বিতীয়বার জাপানের প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আমেরিকার কাছে আবারো আত্মসমর্পণের বার্তা পাঠায়, এবারও আমেরিকা সেটা কানে নেয়নি! সর্বশেষ জাপানের সম্রাট আবারও আত্মসমর্পণের কথা আমেরিকাকে জানায় কিন্তু আমেরিকা সেটাকে বিবেচনায় নেয়নি। এর একদিন পরেই আমেরিকা হিরোশিমায় এটম বোমা ফেলে এবং তার তিনদিন পর নাগাশিকোতে আরেকটি এটম বোমা ফেলে! তারপর গিয়ে আমেরিকা যুদ্ধ বন্ধ ঘোষণা করে। এবার ভাবুন, এই হচ্ছে সেই আমেরিকা!
একটু কর্কশ ভাবে বললে ইজরাইল হলো আমেরিকার অবৈধ সন্তানের মত। ইসরাইলের উপর কোনো আঘাত আসলে আমেরিকা সেখানে সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখাবেই!
এখন আসুন হামাসের কথায়। হামাসকে ইসরাইল এবং আমেরিকা এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক মুসলিম দেশগুলিও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে মনে করে। মনে করার কিছু কারণ অবশ্যই আছে কিন্তু আপনি ভাবুন মাতৃভূমিতে পরাধীনতার কষ্ট, বিভীষিকা মানুষকে কতটা বেপরোয়া করে তুলে দিতে পারে! যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ করেছে বা সেই প্রজন্মের মানুষ তারা অবশ্যই জানেন পরাধীনতা কতটা যন্ত্রণা দেয় মানুষকে! হামাস ও গাজার মানুষেরাও তার ব্যতিক্রম নয়। হামাস যদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গাজাকে মুক্ত করতে পারতো কিংবা তাদের সেই সামর্থ্য থাকতো তাহলে তারা বিশ্বের অনেক দেশেরই সমর্থন পেতো। সে সামর্থ্য নেই দেখেই তাদের বিপক্ষে অনেকগুলি যুক্তি দাড় করানো সম্ভব হচ্ছে। তবে দিনশেষে নিজ মাতৃভূমিতে পরাধীনতার শিকল যে কতটা যন্ত্রণার সেটা যারা পড়েছে কিংবা সেই শিকল ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে কেবলমাত্র তারাই জানে!
আমেরিকা ইসরাইলকে এখানে যখন সেটেল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে তেমনি তাদেরকে রক্ষা করতেও ভূমিকা রাখবে। তার জন্য যদি নৈতিকতা বিসর্জন দিতে হয় সেটাও তারা করবে। হামাস ও গাজাবাসীর কি করা উচিত, কি করা উচিত নয় এ সম্পর্কে অনেক কথাই বলা সম্ভব! কিন্তু দিনশেষে লাশের সারি গুনে গুনে তাদেরই তাদের আপনজনকে দাফন করতে হয়! এই যন্ত্রনা আমি আপনি হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে পুরোপুরি অনুভব করতে পারবো না!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



