
পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যখন একটি কোম্পানি ধীরে ধীরে বড় হতে হতে জায়ান্ট কোম্পানিতে রূপ নেয়, তখনই শুরু হয় এক নতুন খেলা, কর ফাঁকির খেলা। এই খেলাটা শুধুমাত্র অস্বচ্ছ নীতির আশ্রয়ে নয়, বরং অনেক সময় "ক্রিয়েটিভ একাউন্টিং" নামের এক সুপরিচিত শিল্পকলার মাধ্যমে চলে। হ্যাঁ, এটিকে শিল্পই বলা যায়, কারণ কর ফাঁকি দেওয়ার কৌশল শেখানোর জন্য রয়েছে বিশেষ অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা, এমনকি নামিদামি অডিট ফার্মগুলো পর্যন্ত এই খেলা শেখায়।
কর ফাঁকি দেওয়ার এই কৌশলগুলোর মধ্যে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো—সম্পদকে ট্রাস্টে রূপান্তর করা। এতে করে ব্যক্তি বা কোম্পানি একটি ‘আইনসঙ্গত’ অবকাঠামো গড়ে তোলে, যার আড়ালে বিশাল অংকের কর ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে যতটা সম্ভব ‘আইনি কাঠামোর’ মধ্যে রেখে চালানো হয়, যেন দেখলে মনে হয় সবকিছু স্বচ্ছ এবং বৈধ।
এই প্রসঙ্গে আলোচনায় চলে আসে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনুসের নাম। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের পাশাপাশি গ্রামীণফোন এবং আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অভিযোগ আছে, তিনি এই তথাকথিত ‘ক্রিয়েটিভ একাউন্টিং’-এর মাধ্যমেই তার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর মওকুফ করিয়ে নিয়েছেন।
প্রশ্ন করছি উনাকে, যদি এই কর মওকুফ বা কর ফাঁকি দেওয়ার কৌশলটি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে কেন তিনি ব্র্যাক, আশা, টিএমএস, কিংবা অন্যান্য এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একই ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না? এবং তারা যদি তার মত করে এমন করে উনি মেনে নিবেন? এই দ্বৈত নীতিমালাই প্রমাণ করে, এখানে কোনো স্বচ্ছতা নেই। বরং এটি একটি সুচারু পরিকল্পনায় সাজানো কর ফাঁকির চিত্র।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আজকে যেটি ‘ক্রিয়েটিভ একাউন্টিং’ বলে বৈধতার ছায়ায় লুকানো হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটিই হয়তো ‘রিভার্স ক্রিয়েটিভ একাউন্টিং’-এর মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তখন তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে, দিতে হতে পারে জবাবদিহি।
বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু গ্রামীণফোনের কর সংক্রান্ত মামলাগুলোর সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হলে সরকার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারতো। এই অর্থ দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় করা যেত। এক কথায়, কর ফাঁকি কেবল একটি নীতিহীন কাজই নয়, এটি সরাসরি সাধারণ জনগণের অধিকার হরণ।
একজন ব্যক্তি যত বড়ই হোন না কেন, তার প্রতিষ্ঠান যতই জনকল্যাণের গল্প বলুক না কেন জাতির প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি কর প্রদান একটি মৌলিক দায়িত্ব। কর ফাঁকি দেওয়া কখনোই “ক্রিয়েটিভ” নয়, এটি জনগণের অর্থ থেকে নিজেকে গোপন করার এক নিষ্ঠুর ও আত্মকেন্দ্রিক প্রচেষ্টা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





