একসময় মানুষ ভাবত, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, শিল্প-সাহিত্য, নৃত্য-সঙ্গীত, দর্শন আর মানবিকতা—এসবই হবে আধুনিক পৃথিবীর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এই প্রতিযোগিতা হবে কল্যাণের, সৃষ্টির, ভালোবাসার।
কিন্তু বাস্তবতা বড় নির্মম!
আজকের দিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে—কে বানাতে পারে সবচেয়ে বিধ্বংসী ড্রোন, সবচেয়ে গতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র, সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক বোমা, সবচেয়ে নিঃশব্দ সাবমেরিন। যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রগুলো মুখে শান্তির বুলি ছড়ালেও, আড়ালে চলে ভয়াল অস্ত্রের গোপন গবেষণা ও প্রদর্শনী। তাদের জাতীয় গর্ব এখন আর রবীন্দ্রনাথ, ফুকো, কিংবা আইন্সটাইনের মত মনীষীদের নিয়ে নয়, বরং পৃথিবীতে কে কতটা "আধিপত্য" বিস্তার করতে পারে, সেটিই মূল লক্ষ্য!
পৃথিবীর এই দৃশ্যপট দেখে মনে হয়, সভ্যতা এখনো আধুনিক হয়নি। কারণ পৃথিবীর মানুষই আধুনিক হতে পারেনি। প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হলেও মানসিকতা রয়ে গেছে সেই আদিম যুগেই।
আগে মানুষ তীর-ধনুক নিয়ে লড়তো বেঁচে থাকার জন্য—খাবারের জন্য। আর এখন যুদ্ধ হয় "জাতীয় মর্যাদা", "ভূখণ্ড রক্ষা" কিংবা "শক্তি প্রদর্শন" এর নামে, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন কোনো মূল্যই রাখে না। পার্থক্য কেবল কার কত আধুনিক অস্ত্রের ভান্ডার আছে, কে কত বেশি আগ্রাসন চালাতে পারে, নৈতিকতা বা মনুষ্যত্বে নয়।
সত্যি বলতে কি, আধুনিক সভ্যতা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মুখোশে এক ধরণের বন্যতা লুকিয়ে রেখেছে। এখন আর গুহাবাসী মানুষ নেই, কিন্তু মনোজগতে সেই বর্বরতা এখনো বেঁচে আছে, কেবল রূপ পাল্টে ফেলেছে।
মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গলে যাবে, সূর্যে যান পাঠাচ্ছে অথচ নিজের হৃদয়ে এখনো আলোই পৌঁছায়নি।
এই পৃথিবীকে যদি সত্যিকার অর্থে আধুনিক করতে হয়, তবে প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত মানুষের মঙ্গল নিয়ে—প্রযুক্তি হোক জীবনের সহায়ক, অস্ত্র নয়; বিজ্ঞান হোক সৃষ্টির জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়; আর জাতীয়তাবাদ হোক মানবতাবাদের ধারক, বিভেদের বাহক নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭