somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারতকে করিডোর দেয়ার প্রস্তাব চূড়ান্ত : ভারত থেকে ভারত বেনাপোল-ঢাকা-তামাবিল রুটই হচ্ছে। না মানলে বিশ্বব্যাংকের অর্থ দেয়া বন্ধ করার হুমকি

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার নামে ভারতকে করিডোর asian_highwayদেয়ার ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলেছে সরকার। দেশের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক স্বার্থ উপেক্ষা করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যুক্ত হবে হাইওয়ে। সেভেন সিস্টারখ্যাত বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলোতে পণ্য, অস্ত্র সবই পরিবহনের সুবিধা নিয়ে লাভবান হবে ভারত। হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব চুড়ান্ত করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। যোগাযোগ সচিব এসএম আলী কবিরের স্বাক্ষরের পর এ সংক্রান্ত ৬০টি ফাইল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে তিনটি রুটের কথা উল্লেখ থাকলেও ভারত থেকে ভারতে (বেনাপোল-তামাবিল) যাওয়ার রুটটি প্রাধান্য পেয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সুত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রস্তাবে ১নং রুট হিসেবে দেখানো হয়েছে পশ্চিম দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের যশোরের বেনাপোল হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে সিলেটের তামাবিল হয়ে ভারতের আসামে। ২নং রুট হিসেবে ভারতের শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে আবার সিলেট তামাবিল হয়ে ভারতের আসাম। ৩নং রুট হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে, ভারত থেকে মংলা হয়ে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল। হাটিকুমরুল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার। প্রস্তাবে ১নং রুটকে এএইচ-১, ২নং রুটকে এএইচ-২ এবং ৩নং রুটকে এএইচ-৪১ রুট হিসেবে দেখানো হয়েছে। এএইচ-১ এবং এএইচ-২ (ভারত থেকে ভারত) আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর এএইচ-৪১ (ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার) রুটকে উপ-আঞ্চলিক রুট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৮ জুন যোগাযোগ সচিব এসএম আলী কবিরের স্বাক্ষর করা ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক (এসকাপ) নির্ধারিত রুট অনুযায়ী এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত না হলে রুট নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থ দেবে না। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
যোগাযোগ সচিবের নোটে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে বিলম্বের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউএন-এসকাপের নির্ধারিত রুটে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত ট্রানজিট ও করিডোর পেয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ওই সরকারের (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের) গৃহীত প্রাচ্যমুখী নীতি ব্যাহত হবে এবং চীনসহ প্রাচ্যের দেশগুলো অসন্তুুষ্ট হবে এই ভয়ে বিগত জোট সরকার এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে চায়নি।

২০০৫ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়া এবং ইউএন-এসকাপের ঠিক করে দেয়া রুটগুলোর ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, এএই-১ ও এএইচ-২ রুট দুটি অনুমোদন করা হলে লাভ হওয়া তো দুরের কথা, অর্থনৈতিকভাবে ও জাতীয় নিরাপত্তার দিক দিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বুলগেরিয়াসহ অন্যান্য দেশে সড়ক পথে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হলে এএইচ-৪১-কে উপ-আঞ্চলিক রুটকে আন্তর্জাতিক রুটে রুপান্তর করতে হবে। কেননা, এএইচ-১ ও এএইচ-২ রুট দুটি ভারত থেকে ভারতে যাওয়ার জন্যই নির্ধারিত। মাঝখান দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। এতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছে না। রুট পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ইউএন-এসকাপের কাছে আবেদন করবে বলে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এএইচ-৪১ রুটটিকে (ভারত থেকে মংলা হয়ে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, হাটিকুমরুল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ) মূল রুট এএইচ-১ হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশের এ প্রস্তাবে প্রবল আপত্তি দিয়ে ভারত আগের রুট অনুযায়ী এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে বাধ্য করতে ইউএন-এসকেপের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের প্রস্তাব এখনো ইউএন-এসকাপে অমীমাংসিত অবস্হায় রয়েছে।
বিএনপি জোট সরকারের বিদায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর এ নিয়ে আলোচনা বন্ধ থাকে। গত ২১ মে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ইউএন-এসকাপের আগের প্রস্তাব অনুযায়ী এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দু’দিন পর ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন এ বিষয়টি নিয়ে। বৈঠক শেষে যোগাযোগমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ প্রস্তাবিত রুট অনুযায়ীই এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। বিগত সরকার গড়িমসি করে দেশের অনেক ক্ষতি করেছে।
অন্যদিকে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ আমার দেশকে বলেছেন, আমাদের সময়ও ভারত ইউএন-এসকাপের দেয়া রুট অনুযায়ী এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রচণ্ড চাপ দিয়েছিল। আমরা তা প্রত্যাখ্যান করে এএই-৪১-কে মূল ও আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে অনুমোদন করার প্রস্তাব পেশ করেছি। ভারত ওই সময় আমাদের প্রস্তাবে জোরালো আপত্তি দিয়েছে। এসকাপের প্রস্তাবিত রুটটি কোনো আন্তর্জাতিক রুট নয়। এটি মুলত ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর করে দেয়ার একটি নীলনকশা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নয়, বরং বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতেই আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে দুই দেশের মধ্যে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। ওটা সম্পন্ন হলে বিশ্বের যে কোনো দেশেই যাওয়াটা আমাদের জন্য উন্মুক্ত হবে। তিনি বলেন, এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের লাভবান হওয়া। এখন এটি বাংলাদেশের স্বার্থে না হয়ে যদি ভারতের একক স্বার্থে হয়, তাহলে বাংলাদেশ কেন এ ফাঁদে পা দেবে? জেনেশুনে কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকই এটা সমর্থন করতে পারেন না
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:১২
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×