somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম বাংলা সংবাদপত্র

০৯ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পটভূমি

প্রাচীন ভারতে কোন সংবাদপত্র ছিল না। তখন সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে রাজার আদালতে প্রেরণ newspaperকরত। এগুলো মুদ্রিত ছিল না এবং জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করা হত না। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গেই সাময়িক পত্রের প্রচলন শুরু হয়। বাঙালী মধ্যবিত্ত সমাজের আত্মপ্রকাশের বাহন হচ্ছে গদ্য সাহিত্য। আর গদ্য অবলম্বনে প্রচারিত বলে সাময়িক পত্রগুলো মধ্যবিত্ত সমাজের বাহন হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট ইংরেজি সাময়িক পত্রটি জেমস আগাস্টাস হিকি কর্তৃক ১৭৮০ সালের ২৯ জানুয়ারি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদপত্র প্রকাশের ব্যাপারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সন্তুষ্ট ছিল না। এটি কোম্পানির বিঘোষিত নীতি ও শাসন পদ্ধতি এবং কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিদের কার্যকলাপকে ক্রমাগত আক্রমণ করে চলছিল। ফলে লর্ড ওয়েলেসলি সংবাদপত্র শাসনের উদ্দেশ্যে ১৭৯৯ সালে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সঙ্কোচন করে কঠোর সেন্সর ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থায় সকল সংবাদপত্র সেক্রেটারি কর্তৃক পরীক্ষিত হয়ে প্রকাশিত হত এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীকে ইউরোপে নির্বাসন দেওয়া হত। গভর্নর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস ১৮১৮ সালের আগস্ট মাসে এই ব্যবস্থা রহিত করেন। এর তিনমাস পূর্বে প্রথম বাংলা সাময়িকপত্র সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়।

সমাচার দর্পণ


সমাচার দর্পণ হল প্রথম বাংলা সংবাদপত্র যা জে.সি. মার্শম্যানের সম্পাদনায় শ্রীরামপুর খ্রিস্টান মিশন থেকে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। জন মার্শম্যান নামে মাত্র সম্পাদক থাকলেও বাঙালি পণ্ডিতরাই আসলে সমাচার দর্পণ সম্পাদনা করতেন। পরবর্তীকালে এই পত্রিকাটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হত। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার বাংলা সংবাদ রচনা ও সংকলনে সম্পাদককে সহায়তা করতেন বলে তা উন্নতমানের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। সংবাদ, ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বিষয়াদি এতে স্থান পেত। পত্রিকায় নিয়মিত সাতটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হত। যথা- সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংবাদ, সরকারি বিজ্ঞপ্তি, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সংবাদ, জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহের সংবাদ, নতুন নতুন বিষয়াবলী এবং ভারতের ইতিহাস-ঐতিহ্য। পত্রিকাটি যদিও খ্রিস্টান মিশন কর্তৃক প্রকাশিত হত কিন্তু এতে ধর্মীয় গোঁড়ামী ছিল না। এটা ভারতের হিন্দুদের সংবাদ এবং ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক বিষয়াবলী এবং সাহিত্য সংক্রান্ত বিষয় প্রকাশ করত। ফলে পত্রিকাটি শিক্ষিত সমাজের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। সে আমলে প্রগতিশীল পত্রিকা হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব ছিল। সমাচার দর্পণের ভাষায় সরলতা ছিল এবং লেখায় তথ্যবোধ ও মাত্রাজ্ঞান লক্ষ্য করা যায়।
১৮৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পত্রিকাটি অস্তিত্ব রক্ষা করেছিল। তবে পরেও কয়েকবার এই পত্রিকা পুন: প্রকাশিত হয়।
সমাচার দর্পণের মত সাময়িক পত্রের মধ্য দিয়ে শিক্ষিত বাঙালী সমাজ প্রথম গদ্য রচনার রস গ্রহণ করতে শিখে। তখনকার বাংলা সাহিত্য বলতে সবই পদ্য রচনা ছিল। সমাচার দর্পণ প্রকাশ হওয়ার ফলে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং আরোও সাময়িক পত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে লাগল। এর ফলে বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যত উন্নতির পথও খুলে গেল। সমাচার দর্পণের জনপ্রিয়তার ফলে এর পথ ধরে পরবর্তীতে আরোও কিছু সংবাদপত্র বিকাশ লাভ করে।
::::::এক নজরে :::::::

নাম : সমাচার দর্পণ
প্রথম প্রকাশ : ২৩ মে ১৮১৮
সম্পাদক : জে.সি. মার্শম্যান
পরিচালনা : শ্রীরামপুর খ্রিস্টান মিশন
পত্রিকার ধরণ : সাপ্তাহিক
বৈশিষ্ট্য : বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম পত্রিকা
স্থায়িত্ব : ১৮১৮-১৮৪১
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:৩২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×