somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিখ্যাত রুশ ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর ১৫৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রুশ চিকিৎসক, ছোটগল্পকার এবং নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। আন্তন চেখভ নামে যিনি সমাাধিক পরিচিত। আন্তন চেখভকে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৮০ থেকে ১৯০৩ সালের মধ্যে তিনি সর্বমোট ৬০০টি সাহিত্যকর্ম রচনা ও প্রকাশ করেন। তাঁর ছোটগল্পগুলো লেখক, সমালোচক সমাজে প্রভূত সমাদর অর্জন করেছে। নাট্যকার হিসেবে পেশাজীবনে চেখভ চারটি ক্ল্যাসিক রচনা করেন। ১৮৮৭ সালে চেখভের ছোটগল্প সংকলন ‘অ্যাট ডাস্ক’ পুশকিন পুরস্কার লাভ করে। শুরুতে নাট্যকার হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান থ্রি সিস্টারস, দ্য সীগাল এবং দ্য চেরি অরচার্ড এই তিনটি নাটকের মাধ্যমে। সেই সময়ে সাহিত্য জগতের কীর্তিমান ব্যক্তিদের মধ্যে চেখভ ছিলেন দ্বিতীয়। তলস্তয়ের পরপরই ছিল তাঁর অবস্থান। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে এমন নাট্যকারদের মাঝে শেকসপিয়র ও ইবসেনের পাশাপাশি চেখভের নামও উল্লেখ করা হয়। আজ এই নাট্যকারের ১৫৫তম জন্মদিন। ১৮৬০সালের আজকের দিনে তিনি রাশিয়ার তাগানরোগ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। ছোটগল্প লেখক ও চিকিৎসক আন্তন পাভলোভিচ চেখভের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।


আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ১৮৬০ সালের ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ রাশিয়ার তাগানরোগ শহরে এক সওদাগরের পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। চেখভের পিতা, পাভেল জেগোরোভিচ চেখভ ছিলেন ভোরোনেজ প্রদেশের একজন প্রাক্তন ভূমিদাস কৃষক। পাভেল চেখভের ছয় সন্তানের মধ্যে আন্তন চেখভ ছিলেন তৃতীয়। চেখভের পিতা চেখভকে ও তাঁর এক ভাই নিকোলাইকে গ্রিক স্কুলে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলটি চলছিল অসফলভাবে এবং দুই বছর পরেই এটি পরিণত হয় তাগানরোগ শরীরচর্চা কেন্দ্রে, আর এখন একে বলা হয় “চেখভ জিমনেসিয়াম”। স্কুলে চেখভের কৃতিত্ব ছিল গড়পড়তা মানের। প্রথমে তিনি গ্রীক পদ্ধতির স্কুল শেষ করেন, তার পর রুশ ধারার স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন এবং একই সঙ্গে বাবার দোকানে কাজ করা শুরু করেন। ১৮৭৬ সালে বাবার ব্যবসায় ক্ষতি হয় ও তিনি সপরিবারে মস্কো চলে যান। চেখভ এর পর তিন বছর তাগানরোগে ছিলেন। মস্কো এসে তিনি অনতিবিলম্বে মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা বিদ্যার শাখায় যোগ দেন। এই সময়ে সাহিত্যিক কাজকর্ম থেকেই তাঁর প্রধান আয় হত। ১৮৮৪ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সাঙ্গ করে মস্কোর উপকন্ঠে ডাক্তারী করা শুরু করেন। একই সঙ্গে চালু রাখেন সাহিত্য চর্চা। তিনি বলতেনঃ " ডাক্তারী হল আমার বৈধ স্ত্রী আর সাহিত্য হল অবৈধ প্রেম"।


১৮৯০ সালের শুরুতে বাস্তবেই রাশিয়ার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হয়ে ওঠেন আন্তন পাভলোভিচ চেখভ। তাঁর নামের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জুড়ে গিয়েছিল "জীবন মুখী" লেখকের উপাধি। যিনি সমাজের সমস্যার কথা বলেন. ১৮৯০ সালে চেখভ সাখালিন দ্বীপের নির্বাসিত দের শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, সেখানে তিন মাস সময়ের মধ্যে আন্তন পাভলোভিচ ডাক্তার, সমাজ বিদ ও গবেষকের কাজ করে এখানের অসংখ্য বন্দীর কথা লিপিবদ্ধ করেন। জন গণনার কাজ করে প্রায় দশ হাজার লোকের হিসাব করেন। ১৮৯২ সালে চেখভ মস্কোর উপকন্ঠে মেলিখোভো বলে একটি গ্রামের জমিদারী কিনে নেন এবং সেখানে তাঁর সামাজিক কাজকর্ম শুরু করেন। এখানে তিনি নিজের খরচে ডাক্তার খানা, চাষীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তিনটি স্কুল খোলেন ও একটি পোস্ট অফিস ও টেলিগ্রাফের জন্য সুপারিশ করে তা বহাল করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি তাঁর বিখ্যাত রচনাঃ
১। ছয় নম্বর ওয়ার্ড, ২। খোলসের মানুষ, ৩। ইওনীচ, ৪। রাস্প বেরী ও ৫। গ্রামের ইতিকথা নামে ধারাবাহিক লেখা শেষ করেন। সাথে তিন বছর নামের উপন্যাস এবং ১। চাইকা (গাঙচিল), ও ২। ইভান খুড়ো (চাচা ভানিয়া) নামের নাটক লেখেন।


(১৯০১ সালে মধুচন্দ্রিমায় চেখভ এবং ওলগা)
১৮৯৭ সালে চেখভের যক্ষা রোগ বেড়ে যায়, আর তিনি হেমন্ত ও শীত কাল নিতসে ও প্যারিসে কাটিয়ে ১৮৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৃষ্ণ সাগর তীরের ইয়ালতা শহরে ফিরে আসেন। সেখানে স্বাস্থ্য বজায় রেখে চেখভের পক্ষে যতটা সম্ভব হয়েছিল, ততটাই তিনি সমাজ সেবা করতে থাকেন। বিবাহভীতিতে ভোগা আন্তন পাভলোভিচ চেখভ ১৯০১ সালের ২৫ মে মস্কো আর্ট থিয়েটারের অভিনেত্রী ওলগা ক্নিপ্পের বিয়ে করেন। তার সঙ্গে চেখভের প্রথম দেখা হয় ‘দ্য সীগাল’ নাটকের মহড়ায়। এই সময়ে চেখভের স্বাস্থ্য খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে চেখভ লেখক ইভান বুনিনকে বলেছিলেন যে তাঁর ধারণা লোকে তাঁর লেখা আর সাত বছর পড়বে। বুনিনের প্রশ্ন ছিল, "সাত কেন?" "ঠিক আছে, সাড়ে সাত", চেখভের জবাব। "মন্দ নয়। আমি বেঁচে আছি আর বছর ছয়েক।" ১৯০১ সাল থেকেই যক্ষা রোগ তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। ১৯০৪ সালে তাঁর লেখা আরও একটি নাটকের মঞ্চাভিনয়ের ব্যবস্থা হয়। সে বিখ্যাত নাটকের নাম মঞ্জরী আমের মঞ্জরী (চেরি ফলের বাগান)। এই নাটকটি চেখভের লেখা শেষ শিল্প কর্ম। ১৯০৪ সালের ১৫ই জুলাই রাতে তাঁর খুব খারাপ লাগতে থাকে, দেখতে আসা ডাক্তারকে তিনি শান্ত গলায় আত্ম বিশ্বাসের সঙ্গে বলেনঃ "আমি মারা যাচ্ছি"। তার পর আস্তে ধীরে শ্যাম্পেন ঢেলে খেয়ে শুয়ে পড়েন ও তাঁর দেহাবসান হয়। মস্কোর নভোদেভিচি কবর খানায় চেখভ কে কবর দেওয়া হয়। বিনয়ী ও নিরহঙ্কার চেখভ তাঁর মরণোত্তর খ্যাতির এই ব্যাপ্তির কথা কল্পনাও করতে পারেননি। যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন, সে বছরে দ্য চেরি অরচার্ডের বিপুল সংবর্ধনা এ কথাই প্রকাশ করে যে রুশ জনগণের মনের কতটা উচ্চাসনে তিনি স্থান করে নিয়েছেন।


বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা ছোটগল্প লেখক ও নাট্যকার আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর আজ ১৫৫তম জন্মবার্ষিকী। বিখ্যাত রুশ ছোটগল্পকার ও চিকিৎসক আন্তন পাভলোভিচ চেখভ এর জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×