somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পঞ্চাশ-ষাট দশকের নিবেদিত প্রাণ এক কলম সৈনিক জহুর হোসেন চৌধুরী ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রখ্যাত সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী, সাংবাদিকতায় এক অবিসংবাদিত নাম। প্রগতিশীল চিন্তাধারার এই কলম সৈনিক তাঁর জীবদ্দশায় বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরন্তর লিখে গেছেন। পেয়েছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক, সম্পাদক, কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ। জহুর হোসেন চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের হতভাগ্য মেহনতি মানুষের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন তা আমাদের সাংবাদিকতার ইতিহাসের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি পূর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে তাররভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। জহুর হোসেন চৌধুরী তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় সংবাদপত্র জগতে ব্যয় করেছেন। তার সাংবাদিক জীবনের সূচনা হয় প্রয়াত হাবীবুল্লাহ বাহার সম্পাদিত ‘বুলবুল’ পত্রিকায়। ১৯৫১ সালে ” সংবাদ “-এ সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৫৪ সালে সম্পাদক নিযুক্ত হন। আজীবন তিনি দৈনিক সংবাদের অন্যতম পরিচালক ছিলেন। দৈনিক সংবাদের পাতায় তিনি ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে যে কলাম লিখতেন, তা খুবই জনপ্রিয় ছিল। মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংবাদ-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংবাদ নির্ভীক খবর পরিবেশন ও আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছে। যার কারণে মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী ঢাকার বংশালস্থ সংবাদ অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিলো। সাংবাদিকতা বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক এবং ১৯৮২ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। আজ প্রখ্যাত সাংবাদিক, সম্পাদক ও কলামিস্ট জহুর হোসেনের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮০ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিংবদন্তি সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯২২ সালের ২৭ জুন। বর্তমান ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার রামনগর গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন সিরাজগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট। পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে। তারপর পাঠশালা ও প্রাইমারী। এরপর তিনি ভর্তি হন সিরাজগঞ্জের এক উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয় থেকে জহুর হোসেন চৌধুরী ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর জহুর হোসেন চৌধুরী কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএ ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪০ সালে আইএ পাসের স্বীকৃতি অর্জন করেন এবং ১৯৪২ সালে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর শারীরিক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অনেক দিন পর এ অবস্থার উন্নতি হয়। এই অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি এমএ পরীক্ষা দিতে পারেননি। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই পেশাগত জীবনের শুরু করেন জহুর হোসেন চৌধুরী। প্রথমে যোগ দেন কলকাতার বিখ্যাত পত্রিকা ‘স্টেটসম্যান’-এ। এরপর কাজ করেছেন দৈনিক ‘আজাদ’ এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘কমরেড’ পত্রিকায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কিছুকাল জহুর হোসেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ‘পাকিস্তান অবজারভার’-এ কাজ করেন। তবে সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘকাল কেটেছে দৈনিক সংবাদ-এ। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সতেরো বছর তিনি এই পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তীক্ষন মেধাবী এবং বলিষ্ঠ ও সাহসী সম্পাদক হিসেবে তিনি তৎকালীন রাজনীতি নিয়ে সম্পাদকীয় ও বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাঁর ক্ষুরধার কলম চলেছে পাকিস্তানি চক্রান্তের বিরুদ্ধে, অসামপ্রদায়িকতা আর মানবতাবিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে। দৈনিক সংবাদের পাতায় তিনি ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে যে কলাম লিখতেন, তা খুবই জনপ্রিয় ছিল। স্বাধীনতার পরে এসব নিবন্ধেরই বাছাই করা সঙ্কলন ‘দরবার-ই-জহুর’ নামে ১৯৮৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। জহুর হোসেন চৌধুরী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।


রাজনৈতিক জীবনে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ, পরে এমএন রায়ের ‘র‌্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ সদস্য হন। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে পঞ্চাশের দশকে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হন। তৎকালীন পাক-চীন মৈত্রী সমিতি এবং পাক-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও সদস্যও ছিলেন তিনি। এছাড়া সাবেক পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাবেরও তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। পরে তিনি নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের মধ্যে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের লক্ষ্যে ঐক্যমোর্চা গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিবেদিতপ্রাণ এক কলম সৈনিক জহুর হোসেন চৌধুরীর আজ ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিংবদন্তি সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×