somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহিত্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী ফরাসি কবি সুলি প্রুদোম'র ১৮০তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা

১৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রখ্যাত ফরাসি সাহিত্যিক সুলি প্রুদোম। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তিসুলি প্রুদোম। ফরাসি এই সাহিত্যিক ১৯০১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। উল্লেখ্য ১৯০১ সাল থেকেই নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি কেবলমাত্র কবিতাই লিখেছেন। পরবর্তীকালে তিনি দার্শনিক প্রবন্ধও রচনা করতে শুরু করেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তাঁর ‘স্ট্রাঁসেস প্যোমেস’ নামে কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়। ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘লা বলিউর’ কবিতাটি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে। কবিতাটির মাধ্যমে তিনি পাঠকের মনে সুখ, আনন্দ ও আত্মত্যাগেরও ভাব উদ্রেক করতে সমর্থ হন। আজ এই মহান সাহিত্যিকের ১৮০তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৩৯ সালের আজকের দিনে তিনি ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। নোবেল বিজয়ী ফরাসি কবি সুলি প্রুদোম'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


সুলি প্রুদোম ১৮৩৯ সালের ১৬ই মার্চ ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম (René Armand François Sully Prudhomme) রনে আরমঁ ফ্রাঁসোয়া (সুলি) প্রুদোম। দু’বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। তার শৈশব কাটে মা আর বড় বোনের সান্নিধ্যে। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন প্রুদোম। স্কুলের পাঠ শেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন উচ্চতর গণিতে। এরপর ভর্তি হন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু অপথ্যালমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার পড়াশোনা ব্যাহত হয়। ফলে শিক্ষাজীবনের ইতি টেনে তিনি প্যারিসে এক নোটারি অফিসে চাকরি নেন। সারাদিন অফিসের কাজ শেষে রাতে কবিতা লিখতেন। একই সঙ্গে ধর্মতত্ত্ব নিয়েও উত্সাহিত হয়ে পড়েন। তবে ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো ধর্মের ব্যাখ্যাই তার মনঃপূত হয়নি। সুন্দরী খালাতো বোনের সঙ্গে তার শৈশব কাটে। খালাতো বোনের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে প্রুদোম একেবারে ভেঙে পড়েন। সিদ্ধান্ত নেন জীবনে কখনও বিয়ে করবেন না।


১৮৬৯ সালে সুলি প্রুদোম লুক্রাতিউসের ‘লে সলিটুডে’র ফরাসী অনুবাদ করেন। ১৮৭০ সাল ছিল তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের বছর। এ বছর তার মা, বড় বোন এবং যে চাচার কাছে তিনি থাকতেন তারা সবাই একে একে মৃত্যুবরণ করেন। প্রুদোম হয়ে পড়েন সম্পূর্ণ স্নেহহীন। এ বছরই তিনি ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধে যোগ দেন। এই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি "ইমপ্রেশন্‌স অফ ওয়ার" নামক কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। ১৮৭০ সালেই মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে প্রুদোম চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান, যদিও তার লেখনী সচল থাকে। সুলি প্রুদোমের কবিতার বিষয়বস্তু বেশ জটিল। তার কবিতায় প্রেম ও ব্যর্থতা ঘুরেফিরে আসে। জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা তার কবিতায় পরিস্ফুটিত ছিল। এতে বিশেষ স্থান ছিল অচেনা বাস্তব ও চেনা অভিজ্ঞতার। এর সাথে জীবন আর শূন্যতার জন্য তার হৃদয়ে যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করতো তার প্রভাব সুস্পষ্ট ছিল তার কবিতাতে।


১৮৮৮ সালে তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হ্যাপিনেস প্রকাশিত হয়। এটি অমর মহাকাব্যের মর্যাদা পেয়েছে। ১৯০১ সালে তিনি সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ফরাসী কবি সুলি প্রুদোম। তার জীবনের শেষ রচনা ছিল "দ্য সাইকোলজি অফ ফ্রি উইল" যা ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯০৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে প্যারিসের দক্ষিণে অবস্থিত নিজ বাসভবন "Chatenay Malabry"-তে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর। মৃত্যুর পূর্বে তার নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত সব অর্থ দিয়ে একটি অনুদানমূলক পুরস্কারের ব্যবস্থা করে যান। এটি নবীন লেখকদের উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রদান করা হয়। ফ্রান্সে এখনও এই পুরস্কারের রীতি চালু আছে। সাহিত্যে প্রথম নোবেল বিজয়ী হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকা এই মহান সাহিত্যিকের আজ ১৮০তম জন্মবার্ষিকী। নোবেল বিজয়ী ফরাসি কবি সুলি প্রুদোম'র জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:০২
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×