somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথার কিংবদন্তি লেখক হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের ২১৪তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিংবদন্তি শিশুসাহিত্যিক হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন (Hans Christian Andersen)। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, নাট্যকার ও কবি। এ্যান্ডারসন বিখ্যাত মূলত দু’টি কারণে, তার রূপকথার জন্য তো তিনি বিখ্যাতই, আরেকটি তার ভ্রমণ ডায়েরির জন্য (ট্রাভেলগ)। তার বিখ্যাত কিছু কবিতাও আছে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটার নাম জেগ এর এন স্ক্যান্ডিনেভ, ইংরেজি করলে হয় আই এম এ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান। তবে শিশুসাহিত্যিক হিসাবেই তিনি অধিক পরিচিত। রূপকথার জাদুকর বলা হয় তাকে। ছোটদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন কল্পনার এক আশ্চর্য জগৎ। শিশুদের জগত বড়দের চেয়ে আলাদাই শুধু নয়, অনেক অনেক রঙিন আর প্রাণবন্তও। বিশ্বের ও বাংলা ভাষার অনেক শিশুসাহিত্যিক এই রংদার জগতটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন আকর্ষণীয় করে। আমাদের সকলের মনে আছে তার সেই কুৎসিত হাঁসের ছানা কিংবা থাম্বেলিনা, স্নো হোয়াইট অথবা ছোট্ট মৎস্যকুমারীর গল্প। ডেনমার্কের হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডারসন তার রূপকথাগুলোর জন্যই অমর হয়ে আছেন। তাঁর রূপকথাগুলো একেবারেই মৌলিক। তাঁরলেখার ভেতর দিয়ে নতুন একটি ধারার সৃষ্টি হয়। ১৮০৫ সালের সালের আজকের দিনে ডেনমার্কের অডেন্সে জন্মগ্রহন করেন। আজ শিশুসাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন ২১৪তম জন্মবার্ষিকী। রূপকথার শিশুসাহিত্যিকের জন্মদিনে তাকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায়।


(হান্স কিশ্চিয়ান এন্ডারসন, মা এনা মারি এন্ডারসন এবং খালা ম্যাগডালিন জুলিয়ান রাসমুসেন, ছবিটি ১৯১৪ সালে আমেরিকাতে আগমনের সময় তোলা)
হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসন ১৮০৫ সালের ০২ এপ্রিল ডেনমার্কের অডেন্সে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা হ্যান্স এন্ডারসন (Hans Andersen) ছিলেন জুতোর কারিগর, আর মা এনি মারি এন্ডারসন (Anne Marie Andersen) ধোয়ামোছার কাজ করতেন। এ্যান্ডারসন ছিলেন বাবা-মার একমাত্র সন্তান। ছোট্ট থাকতেই ওদের পড়াশোনা করা বাদ দিয়ে চাকরির খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়। শিক্ষানবিস হিসেবে প্রথমে কাজ করলেন এক কাপড়ের কারিগরের কাছে, এরপর এক নাবিকের কাছে। এর মধ্যেই কিন্তু এ্যান্ডারসনের একটা কবিতা বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে। ইংরেজিতে কবিতাটির নাম- দ্য ডাইং চাইল্ড। কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন ১৮২৭ সালে। আর তখনকার কোপেনহেগেনের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্য পত্রিকাতেও নিয়মিতই তার কবিতা ছাপা হচ্ছিল। ১৮৩৫ সালে তিনি ছোট ছোট রূপকথা প্রকাশ শুরু করেন। রূপকথা লেখার জন্য রূপকথার জাদুকর নামে অভিহিত করা হয়। বিশ্বসাহিত্যর বিস্তীর্ন অঙ্গন জুড়ে সাজানো রয়েছে মনোমুগ্ধকর রূপকথার পসরা। প্রতিটি দেশ ও ভাষায় এ এক অর্পূব রত্নভান্ডার। জাতির শৌর্য-বীর্য আশা আকাঙ্খা ও আনন্দ বেদনার স্বপ্নীল আবেশ বিস্তৃত হয় রূপকথায়। আপাত দৃষ্টিতে এর কাহিনী অলীক ও অবিশ্বাস্য মনে হলেও শিশু মনের কৌতুহল ও স্বপ্ন এতে ফুটিয়ে তোলা হয় অপূর্ব বর্ণনাশৈলীতে। জ্বীন- পরী ও সুন্দরী রাজকন্যা , দৈত্যদানব, রাক্ষস- ক্ষোকস,যাদুর চেরাগ এসবের কাহিনী সম্পূর্ণ অবাস্তব মনে হতে পারে , কিন্তু চিন্তাশীল মানুষের জীবনের স্বপ্ন আকাঙ্খা,বাধা বিপত্তি ,বীরত্ব ও সাহসিকতা এবং সাফল্য- ব্যর্থতার কাহিনী রুপক হিসেবে এসেছে রূপকথার স্বপ্নীল রাজ্যে। এ রাজ্য তাই শিশুমনের সব ধরণের স্বপ্ন ও ভাবনা ব্যঙ্গময় হয়। শিশুর অবচেতন মনে যেসব ভাবনার উদ্রেক ঘটে এক বর্ণাঢ্য অভিব্যক্তি পাওয়া যায় তার রূপকথায়। যা শিশু মনে স্বপ্নীল আবেশে উদ্বেলিত হয়। আর এখানেই রূপকথার সার্থকতা। শিশুতোষ কাহিনী হিসেবে তাই রূপকথার আবেদন আজকের এই বিজ্ঞানের যুগেও ম্লান হয়ে যায়নি।


১৮২৯ সালে অভিনীত হয় হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের প্রথম নাটক। বেশ জনপ্রিয়ও হয় নাটকটি। ১৮৩১ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই। আর তার প্রথম ভ্রমণ ডায়েরিও প্রকাশিত হয় ওই বছরই। জার্মানি ঘুরে এসে তিনি তার সেই ভ্রমণকাহিনী প্রকাশ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার ভ্রমণবিষয়ক বইগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি ১৮৩৩ সালে ভ্রমণের জন্য রাজার আর্থিক সহায়তাও পান। আর তা দিয়ে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ট্যুর দেন, জার্মানি-ফ্রান্স-ইতালি ট্যুর। ১৮৪৫ সালে তার লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে প্রকাশ করা শুরু হয়। জার্মান ভাষায় প্রথম তার লেখার অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১৮৪৭ সালে। আর ফরাসী ভাষায় ১৮৪৮ সালে তার প্রথম যে লেখাটি অনুবাদ হয়, সেটি ছিল রূপকথা। তাঁর লেখা ১৫০টির বেশি রূপকথা তাঁকে দিয়েছে অমরত্ব। এসব রূপকথার মধ্যে 'দি টিন সোলজার', 'দি এমপেরর্স নিউ ক্লোদস', 'লিটল মারমেইড', 'দি টিনডারবক্স', 'দি স্নো কুইন', 'দি আগলি ডাকলিং' প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর লেখা এসব রূপকথা বিশ্বের ১২৫টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর রূপকথাগুলোর কাহিনী অবলম্বনে অসংখ্য চলচ্চিত্র, নাটক, ব্যালে নৃত্য, অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে।


১৮৭৫ সালের ০৪ আগস্ট ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে এই মহান সাহিত্যিক মৃত্যুবরন করেন। তার নিজের মূর্তি আছে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক আর ক্যালিফোর্নিয়ায়; আছে স্লোভাকিয়ার ব্রাতিস্তাভা শহরেও। জাপানে তার নামে একটা থিম পার্কই আছে। আর পোল্যান্ডে তার নামে আছে একটা থিয়েটার, যেখানে অভিনয়ের পাশাপাশি পাপেট শো-ও হয়। এছাড়াও ২০০৬ সালে চীনের সাংহাই শহরে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তার নামে নির্মান করা হয়েছে থিম পার্ক বানানো হয়েছে। পার্কটি শুধু তার নামেই করা হয়নি, পার্কটির সবগুলো রাইড তার জীবন আর রূপকথার গল্প নিয়ে বানানো হয়েছে। আজ কিংবদন্তি লেখক হান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের ২১৪তম জন্মবার্ষিকী। জন্মবার্ষিকীতে রূপকথার সুসাহিত্যিককে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×