somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পূজারী পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্য ভারতীয় বাঙালী বাঁশী বাদক ও সুরকার পন্ডিত পান্নালাল ঘোষ। পান্নালাল একজন মহান যন্ত্রশিল্পী ছিলেন। বাঁশিকে তিনিই পুরদস্তুর concert instrument করে তুলতে পেরেছিলেন। খুব ছেলেবেলায় (পূর্ববঙ্গে) নদী বা কোনও খালের জল থেকে তিনি ছোট্ট একটা ভেসে-যাওয়া বাঁশি উদ্ধার করেন। এক সাধু নাকি তাঁকে বাঁশি-হাতে দেখে বলেন - ওটা তুই ছাড়িস না। ওটাই তোর যন্ত্র। রাগসঙ্গীতে বাঁশির সমূহ সম্ভাবনার পথ তিনিই উন্মুক্ত করেন। রাগসঙ্গীতের গভীর আবেগ প্রকাশে তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। মানুষের যেকোন কণ্ঠস্বরকে তিনি অনায়াসে বাঁশিতে রূপায়িত করতে পারতেন। পান্নালাল কলকাতার নিউ থিয়েটার্স-এর বৃন্দবাদনে বাঁশি বাজাতেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে বাঁশিকে একটি অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৯৪২ খ্রি. ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে বন্দি অবস্থায় অসুস্থ গান্ধীজিকে তিনি বাঁশি শুনিয়ে তাঁর আর্শীবাদ লাভ করেছিলেন। ১৯৬০ সালের আজকের দিনে পান্নালালের মৃত্যু হয়। আজ তার ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পূজারী পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


পান্নালাল ঘোষ ১৯১১ সালের ২৪ জুলাই বরিশাল শহরে এক সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ হরকুমার ঘোষ ছিলেন প্রখ্যাত ধ্রুপদশিল্পী এবং পিতা অক্ষয়কুমার ঘোষ ছিলেন প্রসিদ্ধ সেতারবাদক। তাই পরিবারের সাঙ্গীতিক পরিবেশ পান্নালালকে সঙ্গীতের প্রতি বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। পান্নালালের সঙ্গীত শিক্ষার শুরু পিতা অক্ষয়কুমারের নিকট। চৌদ্দ বছর বয়সে পান্নালাল বাঁশি শিখতে শুরু করেন। স্বীয় অধ্যাবসায় বলে সাফল্য অর্জন করেন। দেশভাগের আগে পূর্ববঙ্গ থেকে পুলিশের ভয়ে পালিয়ে এসেছিলেন কলকাতায়। স্বদেশীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কলকাতায় এসে এক ব্যায়ামাগারে মুষ্টিযুদ্ধের প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন - কিছু রোজগারের জন্য। কিছুকাল পরে তিনি এক ছায়াচিত্র কোম্পানিতে চাকরি নেন। সেখানে অমৃতসরের প্রসিদ্ধ হারমোনিয়ামবাদক খুশী আহমদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং তাঁর নিকট তিনি সঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৩৮ সালে ‘সরই-কলা-নৃত্য’ দলের সঙ্গে পান্নালাল বিদেশ ভ্রমণ করেন। বিদেশ থেকে ফিরে তিনি সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী এবং ১৯৪৭ সালে বিশ্বখ্যাৎ সঙ্গীতসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। আলাউদ্দিন খাঁ তাঁকে মাইহারে নিয়ে যান। কিছুকাল সেখানে থেকেই তালিম নেন বাঁশির দেবতা। মুম্বই-এ সে-যুগের এক নামজাদা সঙ্গীত পরিচালক অনিল বিশ্বাসের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি। কিন্তু মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মন বসেনি পান্নালালের।


কর্মজীবনে পান্নালাল আকাশবাণী দিল্লি কেন্দ্রে সঙ্গীত নির্দেশক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রসমূহের যথেষ্ট সংস্কার সাধন করে খ্যাতি অর্জন করেন। খেয়াল অঙ্গের বাদনে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি বিভিন্ন সপ্তকের জন্য তিনটি বাঁশি ব্যবহার করতেন। তাঁর একাধিক গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে পান্নালাল ঘোষের এক একটি সেশন ছিল হিন্দুস্তানী সংগীতের শ্রোতা ও শিল্পীদের কাছে এক একটি অভিজ্ঞতা। সারা দুনিয়ায় যাঁর স্থান একেবারে ওপরের সারিতে সেই মহাশিল্পী ছিলেন আশ্চর্য সরল প্রকৃতির। কিন্তু বাস্তব হলো – পান্নালাল ঘোষ কলকাতার ইণ্ডাস্ট্রিতে কাজ পাননি। সেটা পাঁচের দশক। প্রায় না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছিল তাঁর সপরিবারে। এমন সময়ে –ভারতের তদানিন্তন তথ্য-বেতার মন্ত্রী বি ভি কেশকর (কেন্দ্রীয় মন্ত্রী/ ১৯৫২-১৯৬২) পান্নালাল ঘোষের দুরবস্থার কথা শুনে সটান কলকাতায় চলে আসেন বাঁশির দেবতার ডেরায়। দেবতার তখন এমনই অবস্থা যে অতিথিকে একটু চা খাওয়াবেন সে-উপায়ও তাঁর স্ত্রীর ছিল না। পাশের বাড়ি থেকে চেয়ে আনতে হয়েছিল। বি ভি কেশকর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পান্নালাল ঘোষকে দিল্লি বেতারে চাকরি দেন – প্রযোজকের। সেই সঙ্গে, কেশকর সাহেবের মানসপুত্র “জাতীয় বৃন্দবাদ্য”র (National Orchestra) পরিচালক করে দেন তিনি পান্নালালকে। অসামান্য অর্কেস্ট্রাল কাজ কিছু করেছিলেন পান্নালাল সেই সময়ে। বলা যায় স্বদেশী সিমফনি। একেবারে স্বরলিপিতে বাঁধা। সেই সময়ে আকাশবাণীর অখিল ভারতীয় কার্যক্রমে পান্নালাল ঘোষের বাঁশের বাঁশিতে বাজানো দরবারি কানাড়া সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। কী করে বাজাতে পারে মানুষ অমন করে। সুধীন্দ্রনাথের কথাই ঠিক – “লোকটা মানুষ ছিল না, দেবতা ছিল”। ১৯৬০ সালের ২০ এপ্রিল ভারতের রাজধান নতুন দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন পান্নালাল। আজ তার ৫৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পূজারী পন্ডিত পান্নালাল ঘোষের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×