somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাওয়াল মাসের ছয়দিন রোজা পালনের ফজিলতঃ হাদিসে রাসুল (সাঃ) নং- ১১৭৩

১৪ ই জুন, ২০১৯ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রহমত-বরকত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারক অতিক্রাান্ত হয়ে এখন চলছে শাওয়াল মাস। মাহে রামাযানের পরবর্তী মাস এবং চন্দ্র মাসের দশম মাস হচ্ছে শাওয়াল। রমজানের পরে ফজিলতপূর্ণ মাসগুলোর মধ্যে শাওয়াল অন্যতম। শাওয়াল মাসে অনেক আমল রয়েছে এসব আমলের ফজীলত-ও অনেক বেশী। শাওয়াল মাসের গুরত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে শাওয়ালের ‘ছয় রোজা’। আর এ রোজাকে শাওয়ালের ছয় রোজা বল হয়। রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। এই রোজার অনেক ফজীলত রয়েছে যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত । রাসুল আকরাম (সাঃ) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণকে ও রোজা রাখার জন্য নির্দেশ দিতেন। হযরত উবাইদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন একদিন রাসুল সা: কে জিজ্ঞাসা করলাম ,ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি কি সারা বছর রোযা রাখতে পারব? তখন রাসুল সা: বললেন,“ তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে কাজেই তুমি সারা বছর রোযা না রেখে রমজানের ফরজ রেযা রাখ এবং রমজানেরর পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোযা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোযা রাখার সওয়াব পাবে। – তিরমিযি শরিফ:১ম খন্ড,১৫৭পৃঃ । শাওয়ালের রোজা পুরুষ, মহিলা, যুবক, বৃদ্ধসহ সকলেই রাখতে পারবে। আবার একবার রাখলে বারবার তথা প্রতি বছর রাখতে হবে এইরকম কোন বিধি-বিধান শরীয়তে নেই । কেউ ইচ্ছা হলে প্রতি বছর রাখতে পারবেন অথবা নাও রাখতে পারবেন।


হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,যে রমজানের রোজা এবং শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল (পুরস্কারের দিক থেকে)। হাদিসে রাসুল (সাঃ) নং- ১১৭৩, (মুসলিম শরীফ :১ম.খন্ড ৩৬৯পৃঃ) এই সওয়াব এভাবে যে, মহান রাব্বুল আলামিন মানবতার মুক্তির সনদ মহা গ্রন্থ আল কুরআন কারীমের সুরায়ে আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন, “যে লোক একটি নেক কর্ম করবে সে লোক দশগুণ বেশী সওয়াব পাবে। সে হিসেবে রমজানের ত্রিশ রোজায় ৩০০ রোজার সওয়াব হয়। আর মাহে শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়ালের ৬ রোজা মোট ৩৬ রোজা দশ দিয়ে গুণ দিলে ৩৬০ রোজার সমান হয়ে যায়, আর ৩৬০ দিনে এক বছর। সুতরাং ৩৬ টি রোজায় সারা রছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়। তবে শর্ত হলো, কেবল মাত্র তারাই শাওয়ালের ৬ রোজার সওয়াব পাবে যারা রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালন করেছে। কারণ রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ আর শাওয়ালের রোযা হল মুস্তাহাব। মুস্তাহাবের সওয়াব তখনই পাওয়া যায় যখন ফরজ পালন করা হয়। তবে বিধান হলো যে ব্যক্তি শাওয়ালের রোজা রাখবে সে প্রথমে রমজানের কাজা আদায় করে নিবে, যদি তার দায়িত্বে রমজানের কাজা থেকে থাকে। এরপর শাওয়ালের রোজা রাখবে। কারণ যে ব্যক্তির উপর রমজানের কাজা রোজা রয়েছে তাকে রমজানের রোজা আদায়কারী বলা হবে না যতক্ষণ না তার দায়িত্বে থাকা কাজা রোজা সে পূর্ণ করে নেবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে এর প্রমাণ রয়েছে।
রমাযানের ফরজ রোজা রাখার পর পুনরায় রোজা রাখা রমাযানের রোজা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ যখন কোন বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরো নেক আমল করার তওফীক দান করে থাকেন। যেমন উলামাগণ আরো বলে থাকেন, “ নেক কাজের সওয়াব হল, তার পরে পুনঃ নেক কাজ করা”। (ইতহাফু আহলিল ইসলাম বিআহকামিস সিয়াম ৯২ পৃঃ)। এ রোজার ফজীলত সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) আরো ইরশাদ করেন,“ যারা পবিত্র রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের আরো ছয়টি রোজা রাখবে তারা সেই ব্যক্তির মত হয়ে যাবে যে ব্যক্তি সদ্য তার মায়ের পেঠ থেকে দুনিয়াতে আগমণ করেছে। অর্থাৎ সে শিশু যেভাবে পুত-পবিত্র তথা নিষ্পাপ, তার কোন গোনাহ নেই, যারা শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারা ও সেই নিষ্পাপ শিশুর মত হয়ে যাবে। (সোবাহান আল্লাহ)! হাদিস থেকে শিখলাম যে ব্যক্তি পুরো রমজান সিয়াম পালনের পর এ রোজা ছয়টি করবে সে যেন সারা জীবন রোজা করল।এ এক বিরাট আমল এবং বিশাল অর্জন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ যে রমজানের রোজা রাখবে অর্থাৎ পুরোপুরি। আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরা করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে”। (মুগনিঃ ৪/৪৪০) তাছাড়া ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরত্ব রাখে। মহান শরিয়ত প্রণেতা ফরজের আগে পরে নফল প্রবর্তন করেছেন যেমন- ফরজ সালাতের আগে শাবানের রোজা আর পরে শাওয়ালের রোজা। এই নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতি পূরণ করে। কারণ রোজাদার অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ন বাচতে পারে না যা তার রোজার পুণ্যকে কমিয়ে দেয়। শাওয়াল মাসের এ ৬ টি রোজা মাসের যেকোন দিন রাখা যায়। উত্তম হল, উক্ত ছয় রোযাকে লাগাতার রাখা। কেননা, এমনটি করা রমাযানের অভ্যাস অনুযায়ী সহজসাধ্য। আর তাতে হবে বিধিবদ্ধ নেক আমল করার প্রতি সাগ্রহে ধাবমান হওয়ার পরিচয়। তবে এই রোজো লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা চলে। যেহেতু হাদীসের অর্থ ব্যাপক তাই মাসের শুরুতে রাখা যায়, আবার মাসের মধ্যে বা মাসের শেষে যেকোন সময় তথা যেকোন দিন রোজা রাখা যায়। যার যার সুযোগ-সুবিধা মত এক সাথে ছয় রোজা, আবার আলাদা আলাদা করেও রাখা যায়। এমনকি শাওয়ালের ভিতরে ছয়টি রোজা রাখলেই হবে। কিন্তু শওয়াল মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে তা কাযা করা বিধেয় নয়। যেহেতু তা সুন্নত এবং তার যথাসময় পার হয়ে গেছে। তাতে তা কোন ওযরের ফলে পার হোক অথবা বিনা ওযরে। (ইবনে বায ফাতোয়া, ইসলামিয়া )


যেহেতু রাসুলের হাদিস দ্বারা এই ছয় রোজার অনেক ফজীলত পাওয়া যায় এবং রাসুল (সাঃ) নিজেও শাওয়ালের এ ছয় রোজা রাখতেন এবং উম্মতকে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সেজন্য এ রোজা রাখা আমাদের জন্য উচিত। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা এখলাসের সাথে রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন ।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৯ রাত ১০:২১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×