somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ' এর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অদম্য এক নাট্য প্রতিভা আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নাড শ। জর্জ বার্নার্ড শ আগাগোড়া একজন সাহিত্য ও রাজনীতি সমালোচক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক এবং ছোট গল্পকার। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। যদিও তার লাভজনক লেখালেখির শুরু সঙ্গীত সাংবাদিকতা ও সাহিত্য সমালোচনা কিন্তু তার প্রতিভার সম্পূর্ণ বিকাশ ঘটে নাটকে। জর্জ বার্নার্ড শ'র একটি মহৎ গুণ ছিল, আর তা হলো সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো হাস্যরসের ছদ্মাবরণে তিনি অত্যন্ত দক্ষ শিল্পীর হাতে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। শিক্ষা, বিয়ে, ধর্ম, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং শ্রেণী-সুবিধাই ছিল জর্জ বার্নার্ড শ'র লেখার বিষয়বস্তু। অধিকাংশ লেখাতেই শ্রমজীবী মানুষের শোষণের বিপক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। একজন কট্টর সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ফ্যাবিয়ান সোসাইটির পক্ষে জর্জ বার্নার্ড শ' অনেক বক্তৃতা দেন ও পুস্তিকা রচনা করেন। বার্নার্ড শ' এমন ব্যক্তিত্ব যিনি যুগপৎ সাহিত্যে নোবেল (১৯২৫) এবং অস্কার (১৯৩৮) পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার গ্রহণে অনাগ্রহ থাকলেও স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত তা তিনি গ্রহণ করেন। তবে তিনি আর্থিক পুরস্কার নেননি। জর্জ বার্নার্ড শ’কে নিয়ে নানান মজার কাহিনি প্রচলিত আছে। একবার তার বাড়িতে বেড়াতে এসে এক মহিলা অবাক হয়ে বললেন, ‘মিস্টার শ, আপনার ঘরে দেখছি একটাও ফুলদানি নেই। আমি ভেবেছিলাম, আপনি এত বড় একজন লেখক; আপনি নিশ্চয়ই ফুল ভালোবাসেন। তাই আপনার বাসার ফুলদানিতে বাগানের তাজা, সুন্দর ফুল শোভা পাবে।’ প্রত্যুত্তরে সঙ্গে সঙ্গেই শ বললেন, ‘ম্যাডাম, আমি বাচ্চা ছেলেমেয়েদেরকেও ভালোবাসি। তার অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের মাথা কেটে নিয়ে এসে ঘরে সাজিয়ে রাখব।আজ এই নাট্যকারের ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের আজকের দিনে তিনি ইংল্যানন্ডের হার্ডফোর্ডশায়ারের মৃত্যুবরণ করেন। অদম্য প্রতিভার আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ' এর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


জর্জ বার্নার্ড শ' ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জর্জ কার শ’ এবং মায়ের নাম লুসিন্ডা এলিজাবেথ শ’। জর্জ বার্নার্ড শ' ছাড়াও তাদের আরো দু’ কন্যা সন্তান ছিল। এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন জর্জ বার্নার্ড শ’ যিনি সমকালীন সমাজকে প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। তাকে তুলনা করা হয় মহান-চিন্তানায়ক ভলতেয়ারের সঙ্গে। ছোটবেলার দিনগুলো তার কেটেছিল কঠিন কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে। সময়মত পড়াশোনা করতে হত তাকে। চার্চে যেতে হয় সবসময়। খেলাধুলার সময়টার ওপরেও টেনে দেয়া হয়েছিল লক্ষণ রেখা। মেথোডিস্ট চার্চ পরিচালিত ডাবলিনের একটি গ্রামার স্কুলে তার পড়াশোনা। ১৮৬৫ থেকে ১৮৭১ এর মাঝে শ চারটি স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং এর প্রত্যেকটিই তাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি বিরুপ করে তোলে। ডাবলিন ইংলিশ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল ডে স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ার সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে তিনি তার লেখায় স্কুলকে কারাগার এবং স্কুল শিক্ষককে কারাপরিদর্শক হিসেবে উপস্থাপনা করেছেন। ১৮৭৬ সালে তিনি লন্ডনে ফিরে আসেন। পরবর্তীকালে তিনি যে ধারালো গদ্যের জন্য সবার হৃদয় জয় করেছেন, তার বীজ উত্তপ্ত হয়েছিল তার কিশোরকালে। তবে এ ব্যাপারে তিনি বারে বারে তার মা-বাবা এবং গৃহশিক্ষকদের কথা স্মরণ করেছেন। তাদের সমবেত প্রভাবেই শ’ এক স্বচ্ছ মনের অধিকারী হয়ে ওঠেন। গতানুগতিক পথচলা তার জন্য শুরু হয়ে যায়। আর এ জন্য সবে কৈশোর উত্তীর্ণ বয়সে তিনি কেরানির চাকরি ছেড়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। পরে তিনি মধ্যবিত্তের সামাজিক সংগ্রাম ও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন তার লেখক জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। এ জন্য প্রথম জীবনে গদ্য লেখলেও পরবর্তীকালে তিনি নাট্য রচনায় মনোনিবেশ করেছিলেন। জর্জ বার্নার্ড শ ২০ বছর বয়সে কেরানির চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলোঃ Arms and the Man, The Man of Destiny, Man and Superman (1903). Back to Methuselah (1921), Saint Joan (1923), Caesar and Cleopatra (1901), Androcles and the Lion (1912), Major Barbara (1905), The Doctor's Dilemma (1906), Candida (1898), Pygmalion (1912) ইত্যাদি। তিনি তার জীবনে ৬০ এরও বেশি নাটক লেখেন যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান নাট্যকারের খ্যাতি এনে দেয়। তার নাটকগুলো বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নানা বৈচিত্র্যে ভরা জর্জ বার্নার্ড শ’ যুগপৎ সাহিত্যে নোবেল (১৯২৫) এবং অস্কার (১৯৩৮) পুরস্কার লাভ করেন।


ব্যক্তিগত জীবনে ১৮৯৮ সালে আইরিশ নারী ফাবিয়ানাকে বিয়ে করেছিলেন। ১৮৯৭ সালে তিনি পার্লামেন্ট মেম্বার হিসেবে মনোনীত হলেও পরে স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে নিজের কর্মতৎপরতা পরিচালনা করেন। তিনি ১৯০০ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জর্জ বার্নার্ড শ প্রণীত প্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয় ১৮৯০ সালে। অচিরেই তিনি তার সমাজে দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেন। পরবর্তীকালে ১৮৯৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স। এ ছাড়া তিনি বিখ্যাত সংবাদপত্র নিউ স্টেটম্যানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে তার ছিলো উচ্চ ধারণা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন- মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে, যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তাঁর (মুহাম্মদ) সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি- চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খৃষ্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে।’ আজ এই মহান নাট্যকারের ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের ২ নভেম্বর তিনি ইংল্যানন্ডের হার্ডফোর্ডশায়ারের মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৪ বছর। অদম্য প্রতিভার আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ' এর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৪৬
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×