somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরী। বাংলাদেশে শিল্পসম্মত নাটকের যুগটির হয়তো অবসানই হয়েছে। তবে গুটিকয়েক মানষু যারা নাটকে শিল্প খুঁজেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আনিস চৌধুরী। পেশাগত জীবনে সংবাদপত্র ও বেতারের সাংবাদিক, সাহিত্যের তিনটি শাখায় দৃপ্ত পদচারণা করেছেন। উপন্যাস ও ছোটগল্পে তাঁর ছিল উজ্জ্বল উপস্থিতি। তিনি সমধিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন নাটক রচনায়। আনিস চৌধুরী বিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার কথাসাহিত্যে আধুনিক সাহিত্যের ভিত ও গতিধারা নির্মাণ করেছিলেন। জলসিঞ্চন করেছেন সাহিত্যের বিস্তৃত ভুবনে। তাঁর লেখালেখির সূচনা হয়েছিল সাতচল্লিশ-পূর্ব সময়েই। সুদীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক রচনা করেছেন। তাঁর এই সৃষ্টির ভুবনে এই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত জীবনের নানা দিক প্রতিফলিত হয়েছে। তার লেখা একসময়ের জনপ্রিয় নাটক মানচিত্র, তবু অনন্য, তারা ঝরার দিন এখনো মানুষের মন থেকে মুছেনি। এছাড়া তার লেখা অ্যালবাম ও মানচিত্র নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে অসংখ্যবার। এখন যারা নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখছেন তাদের কাছে হতে পারে পাঠ্য। নাটকের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন আনিস চৌধুরী। আজ কথাসাহিত্যিক আনিস চৌধুরীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯০ সালের আজকের দিনে ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন নাট্যকার আনিস চৌধুরী। কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন আনিস চৌধুরীর। কলকাতায় জন্মগ্রহণ করলেও আনিস চৌধুরীর পিতৃকুলের নিবাস ছিল কুমিল্লা জেলার কসবা থানাধীন গোপীনাথপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম নূরুল হুদা চৌধুরী, মাতা আসেমা খাতুন। আনিস চৌধুরীর পিতৃদত্ত নাম আনিসুজ্জামান কামরুদ্দিন। পারিবারিক পদবি চৌধুরী হলেও প্রথম দিকে তাঁর নামের সঙ্গে পদবিটা যুক্ত হয়নি। তাঁর সার্টিফিকেট-নাম ছিল আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তবে পিতৃদত্ত কিংবা সার্টিফিকেট নামের কোনোটাই নয়, বরং আনিস চৌধুরী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন বাঙালি সাহিত্যপিপাসুদের কাছে। কুমিল্লা, কলকাতা এবং ঢাকায় আনিস চৌধুরী তাঁর শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন। আনিস চৌধুরীর লেখাপড়া শুরু হয় মাইজভান্ডার শরিফে। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফ.এ. পরীক্ষা পাসের পর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। স্কুলজীবনে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আজাদ পত্রিকার মুকুলের মহফিলের সভ্য ছিলেন। সেখানেই তাঁর লেখালেখির সূচনা হয়। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ পত্রিকার সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর লেখাপড়া অসমাপ্ত রেখে তিনি পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে আনিস চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি-এসসি পাস কোর্সে ভর্তি হন। সময়টা ১৯৫১-৫২। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটলেও ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাস করেন।


আনিস চৌধুরী এক কর্মময় জীবন অতিবাহিত করে গেছেন। ১৯৫৪ সালের জুলাইতে আনিস চৌধুরী রেডিও পাকিস্তান ঢাকা শাখায় কারিগরি সহকারী পদে যোগদান করেন। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে হন সহকারী বার্তা সম্পাদক। ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে পদোন্নতি লাভ করেন বার্তা সম্পাদক পদে। ১৯৬৫ সালে তিনি প্রচারমাধ্যম বিষয়ে কানাডা থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে রেডিও ছেড়ে তিনি যোগদান করেন ঢাকা টিভির নিউজ এডিটর পদে। ১৯৭১ সালে তিনি করাচিতে আটকে পড়েন, ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি রেডিও বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক পদে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে হন বার্তা পরিচালক। এরপর ডেপুটেশনে তিনি যোগ দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ১৯৭৯ সালে তিনি ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন এবং কিছুদিন ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম প্রেস কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্বিশ্ব কার্যক্রমে ডি.জি. পদে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের মার্চে এ পদে থাকাকালীন তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি একটি জীবনবীমা কোম্পানির উপদেষ্টা ছিলেন।


আনিস চৌধুরীর পারিবারিক পরিমণ্ডলে সংস্কৃতিচর্চার উদার ও মুক্ত পরিবেশ তাঁর কৈশোরক মানস-গঠনে দূরস্পর্শী ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীকালে তাঁর জীবনচর্যায় ও সাহিত্যকর্মে এ পারিবারিক শিক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে অবধারিতভাবে। প্রগতিশীলতার চর্চায় তাঁর মনন এবং মানস সব সময়ই পরিব্যাপ্ত ছিল। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে তিনি টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য অনেকগুলি নাটক রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত দুটি নাটক হচ্ছে মানচিত্র (১৯৬৩) ও অ্যালবাম (১৯৬৫)। এছাড়া সরোবর (১৯৬৭), সৌরভ (১৯৬৮),শখের পুতুল (১৯৬৮), মধুগড় (১৯৭৪), প্রত্যাশা, ছায়াহরিণ, ছাড়পত্র, জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী (অনুবাদ) ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। আনিস চৌধুরী ছিলেন উচ্চ-মননের মানুষ। মানুষের স্বাধীনতা ও মানবিক চেতনাকে সারাজীবন স্বাগত জানিয়েছেন। নারীমুক্তিতে ছিলেন প্রবল বিশ্বাসী। সহজ-সরল ও নিরাভরণ জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন। সত্যনিষ্ঠ ও নিরহংকারী এই মানুষটি ১৯৯০ সালের ২রা নভেম্বর একষট্টি বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। আজ কথাসাহিত্যিক আনিস চৌধুরীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যু বরণ করেন বরেণ্য নাট্যকার আনিস চৌধুরী। কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার আনিস চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×