somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগের ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীত শিল্পী। পঞ্চাশের দশকে বাংলা চলচ্চিত্র সঙ্গীত জগতে যে আধুনিকতার ঢেউ এসেছিলো তার অন্যতম কারিগর ছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সুরের ভূবনে কেবল চলচ্চিত্র জগতেই নিজের প্রতিভার ছাপ রাখেননি তিনি, কীর্তন থেকে নজরুলীতি সব আঙিনাতেই ছিল তার অনায়াস পায়চারী। তার স্বতন্ত্র কণ্ঠের কারণে দর্শকদের কাছে তিনি হিট ছিলেন। সুরকার যিনি বহু বাংলা আধুনিক গান এবং নজরুলগীতি গেয়েছেন। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তৃতীয় দফায় নজরুল সঙ্গীতের স্বর্ণ যুগের শিল্পী। ১৯৭০ সালে হিজ মাস্টার্স ভয়েজ কোম্পানির ট্রেনার শ্রী বিমান মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে কয়েকশ নজরুল সঙ্গীত গেয়ে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় পশ্চিম বঙ্গসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নজরুল সঙ্গীতের অনুরাগী শিল্পীদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। এ সময় মানবেন্দ্রকে অনুসরণ করে কলকাতা শহরে শত শত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী তৈরি হওয়ার সুযোগ পায়। অনেকে আধুনিক গান ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পাশাপাশি নজরুল সঙ্গীতকে প্রাধান্য দিয়ে চর্চা করতে শুরু করে। ফলে নজরুল সঙ্গীত বহু বছর পর বনবাস থেকে ফিরে এসে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মাত্র ৫ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে সপরিবারে বাংলাদেশের ধানমণ্ডিতে নিয়ে আসেন। নজরুলের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদনপূর্বক তিনি এই কাজটি করেছিলেন বলে সর্বজন স্বীকৃত। এর ফলে বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জ থেকে তাদের প্রিয় কবি নজরুলকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন দলে দলে মানুষ ধানমণ্ডিতে আসতে শুরু করে- অন্যদিকে নজরুল তরুণ শিল্পীদের মুখে শুধুই মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের রেকর্ড অবলম্বনে নজরুল সঙ্গীত গাওয়া অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছিল। তিনি বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলা গান চমৎকারিত্বের উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছে এবং সে-কারণে সেই সময়কালকে "বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগ বলা হয়"। ১৯৫০-এর দশকেই মানবেন্দ্র বাংলা গানের মর্যাদাকে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের উচ্চতায় তুলে দেন। আজ সংগীত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।


মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৯২৯ সালের ৮ আগস্ট ভারতের কলকাতার কালীঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি বাড়ি বরিশালের উজিরপুর থানায়। তার পিতা অতুলচন্দ্র। তিনি ছিলেন আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। মানবেন্দ্ররা ছিলেন সব মিলিয়ে দশ ভাই। গান বাজনা ছিল পরিবারের বহুকালের সঙ্গী। মানবেন্দ্র ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে সিটি কলেজ থেকে বি.এসসি. পাশ করেন। পঞ্চাশের দশক নাগাদ বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত জগতে যে আধুনিকতার ঢেউ এসেছিল তার অন্যতম কারিগর ছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সুরের ভুবনে কেবল চলচ্চিত্র জগতেই নিজের প্রতিভার ছাপ রাখেননি তিনি, কীর্তন থেকে নজরুলগীতি সব আঙিনাতেই তাঁর ছিল অনায়াস পায়চারী। কীর্তনের মাধ্যমে তাঁর সংগীতে হাতেখড়ি। পিতৃব্য রত্নেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে সংগীতশিক্ষার শুরু। পরে ধ্রুপদ, টপ্পা, রাগপ্রধান প্রভৃতির তালিম নিয়েছেন। নজরুলগীতি, দ্বিজেন্দ্রগীতি, পল্লিগীতি, আধুনিক, রবীন্দ্রসংগীত, পুরাতনী সব ক্ষেত্রেই মানবেন্দ্র সচ্ছন্দ ছিলেন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি বেতারশিল্পী। পিতৃব্য সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এইচ.এম.ভি. থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড বার হয়। প্রথম প্লে-ব্যাক গাইলেন ‘নবজন্ম’ ছবিতে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘চাঁপাডাঙার বৌ’ ছবিতে তিনি প্রথম সুর দেন। এ ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে সুর করেছিলেন যার মধ্যে মায়ামৃগ, বধু, যত মত তত পথ, জয় জয়ন্তী, গোধুলি বেলা উল্লেখযোগ্য। যাত্রাপালাতেও সুর দিয়েছেন। আর জীবনে অভিনেতা হিসেবে একবারই অবতীর্ণ হয়েছেন "সাড়ে চুয়াত্তর" ছবিতে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বি.এফ.জে. পুরস্কার পান।


মানবেন্দ্র মুখার্জী সত্যিকার অর্থে ছিলেন একজন সাধক শিল্পী, গান ছাড়া তার কোন পেশা ছিল না বলে শোনা যায়। তাই সারাদিন গানের সাথেই ছিল তার আত্মীয়তা। তার কোন ছাত্রছাত্রী নেই বা গান শেখানোর ইচ্ছাও ব্যক্ত করেননি কোনোদিন। নিজের হৃদয়ে মাত্রাতিরিক্ত আবেগ ও সুরব্যঞ্জনার কারণে সারাক্ষণ অন্তর ভরে থাকতো সঙ্গীত সাধনা ও চর্চায়। এ কারণে সম্ভবত তিনি সময় পাননি কেউকে তালিম দিতে- কিন্তু সঙ্গীত অঙ্গনে তার দাপট কেউ আটকাতে পারেনি। এই সুর সাধকের মধ্যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রভাব ও তালিম থাকায় তিনি আধুনিক, রাগপ্রধান গান ছেড়ে দিয়ে সম্ভবত শেষ পর্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ নজরুল সঙ্গীতের ভাণ্ডারে প্রবেশ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তার কণ্ঠে নজরুল সঙ্গীতের সুর ও বাণী একাকার হয়ে মিশে গিয়ে এক মধুর রস ব্যঞ্জনার আবহ তৈরি করেছে যে কারণে তিনি নজরুল সঙ্গীতের এক মুকুটহীন সম্রাট হয়ে উঠেছে। আজো মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নজরুল সঙ্গীত শোনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রবাদ প্রতিম গায়ক তথা শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ম্যাসিভ হার্ট এট্যাকে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা সঙ্গীত জগতে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অবদান আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থলে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে অনন্তকাল। আজ সংগীত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯২ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল
ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×