somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্ব সঙ্গীত দিবস আজঃ সংগীতের হাত ধরে মেলবন্ধন ঘটুক মনের

২১ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


করোনা ভাইরাসের কারণে বদলে গেছে আমাদের জীবন। আনন্দ-বেদনায়, সংকটে, উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। তার পরেও আজ বিশ্ব সঙ্গীত দিবস। ২১ জুন পালিত হয় বিশ্ব সংগীত দিবস। আনন্দের সময় হোক কিংবা মন খারাপের সময়ই হোক সংগীত মানুষের নিত্যদিনের সংগী। দৈনন্দিন জীবনের একঘেঁয়েমি কাটাতে গানের চেয়ে ভালো দাওয়াই আর নেই। সত্যিই বিশেষজ্ঞরাও এই মিউজিক থেরাপিকে মান্যতা দিয়েছেন। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কমাতে গান দারুণ উপকারী। গান শুনলে ঘুমও ভালো হয়। মানসিক রোগ সারানোর জন্য চিকিৎসকেরা গানের সাহায্য নেন। অনের সময় এমন হয় যে পুরনো কোনও গান ভালো স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। খারাপটাও মনে করায়। কিন্তু গান সব সময়ই ভালো বন্ধুর মতো পাশে থাকতে পারে। গান কিন্তু বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তিও শক্ত করে, মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। সংগীতপ্রেমীদের কাছে অবশ্য গানের জন্য আলাদা কোনও দিন বা সময় নেই। বরং গান ২৪ ঘণ্টার ৩৬৫ দিনের। তবে বিশেষ ভাবে দিনটিকে উদযাপনের জন্য নির্দিষ্ট একটি দিন রয়েছে। গানের জন্যই বিশেষ দিবস এই বিশ্ব সংগীত দিবস ৷গুন গুন করে কে না গান গেয়ে ওঠেন চলতে চলতে। সংগীতের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাও করা হয় এখন। সারা বিশ্বেই নানা ভাষায় সমান তালেই চলছে সংগীতের চর্চা। আজ বিশ্বের সকল সংগীত প্রেমীদের জন্যই বিশেষ একটি দিন। আজ সংগীত দিবস। বহু বছর ধরেই এই দিনে ঐতিহ্যবাহী মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে ফ্রান্স। ১৯৮২ সালে ফ্রান্সে ‘ফেত দ্য লা মিউজিক’ বা ‘মেক মিউজিক ডে’ নামে একটি দিনের উদ্যাপন শুরু করা হয়। ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাং ১৯৮১ সালে ভাবতে শুরু করেন বিষয়টি নিয়ে। ১৯৭৬ সালে ফ্রান্সে মার্কিন সংগীতশিল্পী জোয়েল কোহেন ‘সামার সোলস্টাইস’ বা গ্রীষ্মকে উদ্যাপন করতে রাতভর গান করার প্রস্তাব তোলেন। ২১ জুনের সংগীত দিবস সেই থেকে শুরু। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২০টি দেশে স্থানীয়ভাবে অথবা ফরাসি দূতাবাসের সহায়তায় এ দিনটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও এ দিবসটিকে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। বরাবরের মতো ২০২০ সালেও ‘বিশ্ব সংগীত দিবস’ পালিত হবে বিশ্বের নানা দেশে। ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন হওয়ায়, এই দিনটিকেই সংগীত দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছরই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদসহ সঙ্গীতের বিভিন্ন সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বর্ণিল আয়োজনে দিবসটি পালন করে। এবার সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের কারণে কোথাও দিবসটি পালিত হচ্ছে না। এ বছর সারা বিশ্বেও করোনা ভাইরাসের কারনে সীমিত থাকবে এই আয়োজন।


সংগীতের কোনও ধর্ম নেই, কোনও জাত নেই, কোনও রং নেই তার নিজস্বতা আর স্বকীয়তা এতটাই প্রবল যে সেটা কোনো বিশেষ ভাষার কাছেও সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। অর্থাৎ কোনো কাঁটা তারের বেড়া সঙ্গীতকে বাধা দিতে পারে না। তাই বিদেশের সঙ্গীতজ্ঞ বব ডিলান কিংবা জিম মরিসনের সঙ্গীত যেমন এদেশের মানুষের মন ছুঁয়েছে, তেমনি আমাদের লালনের গানও পৌঁছে গেছে বিশ্বের দরবারে। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় শাস্ত্র ও ধর্মীয় সঙ্গীতকে আশ্রয় করে বাংলা সঙ্গীত আজ প্রসারিত হচ্ছে আগামীর উঠানে। আমাদের জারি, সারি, বাউলগান, রবীন্দ্র বা নজরুলগীতির মতো সমৃদ্ধ সঙ্গীতের আকর বাংলা সঙ্গীতকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলেছে। আধুনিক গানের ব্যাপক চর্চা সেই সঙ্গীতের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। সংগীতের হাত ধরে মেলবন্ধন ঘটে মনের। গানবাজনার ছুতোই হোক বা অজানার খোঁজ, বিশ্ব সংগীত দিবস আসলে সংগীতের মাধ্যমে বিশ্বকে এক করে। ছোট্ট মানবশিশু কথা বলতে শেখার আগেই গুনগুনিয়ে সুর তুলতে শুরু করে। আর কিছু না হোক, সুরেই বশ মেনে যায় সমস্ত প্রাণী। হিংস্র বাঘও মন দিয়ে শোনে অচেনা কোনো গান। উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু—সময়, বয়স আর স্থানভেদে সুর আর গান মিশে আছে সবখানে। তবে সংগীত নিয়ে জ্যাক ল্যাং-এর মতো করে ফ্রান্সে খুব বেশি মানুষ ভাবেননি। তিনি ফ্রান্সের প্রথাগত গানের ধারাকে ভাঙতে মরিস ফ্লুরেটকে নিয়োগ দেন। ফ্লুরেট ১৯৮২ সালে বিশাল এক পরিসংখ্যান চালান। এই পরিসংখ্যানে উঠে আসে সংগীত নিয়ে কাজ করা প্রচুর মানুষের কথা। সে সময় ফ্রান্সে প্রতি দুইজন তরুণের মধ্যে একজন কোনো না কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। সব নিয়ম পাশে রেখে ঘোষণা দেওয়া হয় নতুন এক ধারার। যেখানে তরুণেরা শুধু চিরাচরিত সংগীত শিখবেন না, শিখবেন রক, জ্যাজ, পপ—সব ধারার সংগীত। আর শেষমেশ জ্যাক ল্যাং, প্রকৌশলী ক্রিস্টিয়ান ডুপাভিলন আর মরিস ফ্লুরেটের চেষ্টায় এই উদ্যোগ সফলও হয়েছিল।বর্তমানে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, লুক্সেমবার্গ, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকাসহ প্রায় ১২০টি দেশে এবং ৪৫০টি শহরে এই দিবস উদ্​যাপিত হয়। রেস্তোরাঁ, পার্ক, যানবাহন—সংগীত দিবসে সর্বত্র বিনা মূল্যে গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। বাংলা লোকসংস্কৃতির সবচেয়ে সমৃদ্ধ অংশ হিসেবে বাংলা সঙ্গীত পার করেছে হাজার বছর। বাংলা সঙ্গীত আবহমানকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সঙ্গীতের সুর ও তাল, বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োগ, সঙ্গীতের সার্বজনীনতা ও আধ্যাত্মবাদসহ আরো নানামুখী সঙ্গীতসংক্রান্ত বিষয় মানুষের কাছে প্রবল আকর্ষণীয় হয়েই বিচরণ করেছে। শান্তি ও ইতিবাচক চিন্তাকে ছড়িয়ে দিতে দিবসটিকে ব্যবহার করা হয়। এ বছর করোনাভাইরাসের কালবেলা। সেক্ষেত্রে বাইরে গিয়ে কোনও অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তাই বাড়ি বসেই নিজের পন্দের গানে ডুবে যান। বিশ্ব সঙ্গীত দিবস ছাড়াও আজ ফাদার্স ডে, যোগ দিবস, সূর্যগ্রহণ-- এ সবের মাঝেই আলাদা করে একটা ঘণ্টা নিজের জন্য সরিয়ে রাখুন। সেই সময়টাই শুধুই পছন্দের গান শুনুন। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, গজল, লোকগান, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, ওয়েস্টার্ন, রক, পপ, ক্লাসিকাল, ধ্রুপদী-সহ সব ধরনের গান শুনতে সবাই ভালোবাসেন না। শুধু গোঁফ না, গান দিয়েও যায় মানুষ চেনা। সবারই একটা পছন্দ রয়েছে। এবং এই পছন্দই কিন্তু দারুণ একটা ইঙ্গিত দেয় মানুষটার রুচি সম্পর্কে। কোনও মানুষকে নতুন করে জানতে গেলে অবশ্যই গান নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। গান গেয়ে বা গান শুনে মুগ্ধ হতে পারেন। সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও সমস্যার সমাধান করে গান। লকডাউনের এমন দিনে গান দিয়ে নিজেকে নতুন করে ফেলুন। শুরুটা না হয় গানে গানেই হোক! অর্থাৎ, গান ভালোবেসে গান ৷ বৈচিত্র্যময় সুরের ধারার সঙ্গীত এগিয়ে চলুক বিশ্বচরাচরে। আর প্রাণে আসুক শান্তি ৷

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:২৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×