somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নূর মোহাম্মদ নূরু
নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

ভারতীয় বাঙালি লেখক বুদ্ধদেব গুহের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি লেখক বুদ্ধদেব গুহ। বাঙালি যুবক যুবতীর কাছে কোয়েলের কাছে,একটু উষ্ণতার জন্যে, বাবলি, হলুদ বসন্ত, কোজাগরের মতো উপন্যাসগুলো আজও জীবন্ত। তিনি লেখক হিসেবে খুবই অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। 'জঙ্গলমহল' তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। তার পর বহু উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বিতর্কিত উপন্যাস 'মাধুকরী' দীর্ঘদিন ধরে বেস্টসেলার। ছোটদের জন্য তার প্রথম বই - 'ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে'। ঋজুদা তার সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় অভিযাত্রিক গোয়েন্দা চরিত্র। এই ঋজুদা যখন-তখন রুদ্রকে সাথে নিয়ে চলে যান জঙ্গলে! টিভি এবং চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে বুদ্ধদেব গুহের একাধিক গল্প উপন্যাস। বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তাঁর জীবন। পেশায় তিনি একজন সফল চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, জীবনযাপনের ধরনে খুবই শহুরে কিন্তু ভেতরকার যে আদিম আরণ্যক ডাক, তা যেন তার লেখায়ই ধরা পড়ে তার জীবনচিত্রের চাইতে অনেকগুণ স্পষ্ট হয়ে। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা তাঁর দেখা। পূর্ব ভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তাঁর সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরঙ্গ পরিচয়। সাহিত্য-রচনায় মস্তিষ্কের তুলনায় হৃদয়ের ভূমিকা বড় - এই মতে তিনি বিশ্বাসী। তাঁর প্রতিটি উপন্যাসের পটভূমি জীবন্ত, তাঁর নিজের চোখে দেখা। অবিশ্বাস্য কল্পনা নয়। ফলে পাঠকের সঙ্গে তাঁর সংযোগ গড়ে ওঠে উপন্যাসের প্রথম শব্দ থেকেই। সেই সব বিশ্বস্ত পটভূমি পাঠকদেরই হয়ে যায়। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে : হলুদ বসন্ত; খেলা যখন; বিন্যাস; ওয়াইকিকি; অন্বেষ; ভোরের আগে; সন্ধের পরে; পুজোর সময়ে; নগ্ননির্জন, বাতিঘর , কোজাগর, মাধুকরী প্রভৃতি। সুকন্ঠ বুদ্ধদেব গুহ নিজেও একদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তাঁর দক্ষতা রয়েছে। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৭ সালে। বহু গুনে গুনা্ন্বিত লেখক বুদ্ধদেব গুহের আজ ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সােলের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বনামধন্য ভারতীয় বাঙালি লেখক বুদ্ধদেব গুহের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


বুদ্ধদেব গুহ ১৯৩৬ সালের ২৯শে জুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বুদ্ধদেব গুহর ডাকনাম লালা। তাঁর ভক্ত-অনুসারী এবং তরুণ প্রকাশকরা লালাদা বলে ডাকেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সমসাময়িক লেখক। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুল ও স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশুনা করেন। বুদ্ধদেব সর্ব সময়ের লেখক। কিন্তু লেখাই তাঁর জীবিকা নয়। কৃতী অ্যাকাউন্টেন্ট বুদ্ধদেবকে তাই প্রকাশনা সংস্থার চাহিদা মেটানোর জন্য দু’ হাতে লিখতে হয়নি। নিজস্ব রচনাশৈলীর আশ্রয়ে তিনি যে সব বহুপঠিত, বহুমুদ্রিত ও বহু আলোচিত উপন্যাস এ যাবৎ লিখেছেন, সেগুলি বাংলা সাহিত্যের ধারায় একটি স্বতন্ত্র ঘরানা ও বিশিষ্ট সংযোজন। অরণ্যপ্রেমী ও অরণ্যচারী এই স্রষ্টা আত্মপ্রকাশের লগ্ন থেকেই তাঁর জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। শক্তিশালী এই লেখক নরনারীর প্রেমজীবনের অন্তরচিত্র এমন ভাবে এঁকেছেন যে, পাঠকদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে গেছে। নিবিড় ভালবাসার সংরাগ তাঁর একাধিক প্রেমের উপন্যাসের পটভূমিতে সৃষ্টি করেছে রামধনুর বর্ণচ্ছটা। বুদ্ধদেবের উপন্যাস ‘মাধুকরী’ বাংলা সাহিত্যের জগতে সত্যিকার অর্থেই একটি মাইলফলক হয়ে বিরাজ করছে। পৃথু, কুর্চি, রুষা, মগনলাল, ঠুঠা- এ সকল চরিত্রের মধ্যে কিছু একটা জাদু ছড়িয়ে আছে যা এড়ানো সম্ভব নয় কোনো পাঠকের পক্ষেই। এই উপন্যাসে কেউ কারো পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান করে না, এত সমান্তরালভাবে চরিত্রগুলোকে সম্পৃক্ত রেখেও বয়ে যেতে দিতে বুদ্ধদেবই পারেন! তাই তো বহুদিন ধরেই বেস্টসেলার হয়ে আছে তার ‘মাধুকরী’ বইটি। ১৯৭৬ সালে আনন্দ পুরষ্কার ছাড়াও বুদ্ধদেব পেয়েছেন শিরোমণি ও শরৎ পুরষ্কার। আবার শুধু এ জাতীয় উপন্যাসেই নয়, প্রতীকী উপন্যাস কিংবা গোয়েন্দা উপন্যাসেও বুদ্ধদেব সিদ্ধহস্ত। চিঠির প্রতিও বুদ্ধদেবের একটা গভীর আকর্ষণ দেখা যায়। প্রায় উপন্যাসেই এ ওকে চিঠি পাঠায়, সেই চিঠি পুরো সময় জুড়ে একটা সুরেলা গান হয়ে বাজতে থাকে। বুদ্ধদেব খুব সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারেন, তার যেকোনো উপন্যাস পড়লেই তা বোঝা যায়! ‘সবিনয় নিবেদন’ উপন্যাসটি তো পুরোটাই চিঠিপোন্যাস! ঋতি ও রাজর্ষি একজন আরেকজনকে না দেখে না শুনে চিঠির এক অদ্ভুত ব্যাকরণে বুনতে থাকে তাদের সম্পর্ককাব্য। অদেখাকেও যে চিঠি লিখে প্রিয় ব্যক্তিতে রূপ দেওয়া যায়, তার সাথে খুনসুটি করা যায়, করা যায় অভিমানী অভিযোগ, চিঠি লিখে যে কাউকে ভালোবাসাও যায়- তার এক অনবদ্য প্রমাণ ‘সবিনয় নিবেদন’।


ব্যক্তিগতজীবনে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ঋতু গুহ ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ঋতু গুহ। তাদের দুই কন্যা বর্তমান। বুদ্ধদেব গুহ তাদের সম্পর্কের কথা ধরে রেখেছিলেন তার খেলা যখন উপন্যাসে। সুকন্ঠের অধিকারী বুদ্ধদেব গুহ নিজেও একদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তাঁর দক্ষতা রয়েছে। গত বছর টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডি লিট সম্মানে ভূষিত করা হয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহকে। দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় ও উঁচুমানের সাহিত্যিক হওয়া সত্ত্বেও বুদ্ধদেব পাননি কোনও সাহিত্য সম্মান কিংবা কোন সরকারি স্বীকৃতি। এমনকি ' বঙ্কিম পুরস্কার ', ' অ্যাকাডেমি পুরস্কার ' কোনওটি পাননি তিনি। লেখকের কথায়, ' তাতে কিছু যায় আসে না আমার। আমি সর্বোত্তম পুরস্কার পেয়েছি, তা হল দীর্ঘবছর ধরে পাঠকদের ভালোবাসা। ' বুদ্ধদেব এখনও এরকমই। সোজাসাপ্টা। এই পঁচাশি বছর বয়সেও তাঁর হৃদয় ও মেজাজ টেক্কা দেবে যে কোনও পঁচিশের তরুণকেও। এই ডি লিট সম্মানের প্রস্তাবে বুদ্ধদেব গুহ খুশি হয়েছেন। অশীতিপর এই লেখক নিজেই ঘোষণা করেছেন, তাঁর একমাত্র পুরস্কার তাঁর পাঠক! লেখক কোনও বড় ধরনের স্বীকৃত-সম্মান পাননি বলে এতদিন তাঁর ভুক্তকূলের মনে ক্ষোভ ছিল। এবার সেই অসন্তোষে কিছুটা হলেও উপশম এল। তবে তাঁর থেকেও মনে হয় বেশি খুশি হবে দুই বাংলায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর অগণিত পাঠকের দল। বুদ্ধদেব গুহর বয়স এখন ৮৪ বছর। লেখালেখি বন্ধ। মেয়েরা তাঁর দেখভাল করছে। স্মৃতিশক্তি সামান্য এলোমেলো হয়েছে। হাঁটাচলা তেমনভাবে করতে পারেন না। বুদ্ধদেব গুহর জনপ্রিয়তায় এখন একটু ভাটা পড়েছে। তাতে কিছু যায় আসে না। পৃথিবীর খুব কম লেখকই সবসময় একরকম জনপ্রিয় থাকেন। কারও কারও জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়ে। কারও কারও কমে। এটাই নিয়ম। জনপ্রিয় লেখক বুদ্ধদেব গুহের আজ ৮৪তম জন্মবার্ষিকী। প্রতিতযশা ভারতীয় বাঙালি লেখক বুদ্ধদেব গুহের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৭
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×