somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেতা ও নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুরীর ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩০ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা রঙ্গমঞ্চের এক কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব শিশিরকুমার ভাদুরী। নাট্যমঞ্চে শিশিরকুমার ভাদুরী ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। সে সময় সেট বা মঞ্চসজ্জা বলে কিছু ছিল না বাংলা নাটকে। পিছনে ছবি-আঁকা পর্দা ঝোলানো থাকত, অভিনেতা পার্ট আউড়ে যেতেন। অবশেষে নাটকে এলো ত্রিমাত্রিক সেট, আলোর যথাযথ ব্যবহার। আর এসব নিয়ে এলেন যিনি, তিনি বাংলা নাট্য জগৎ এর অন্যতম নক্ষত্র শিশির কুমার ভাদুড়ী। আজ যে নাটক আমরা দেখি তা হয়তো শিশির ভাদুড়ী না থাকলে কখনও দেখা হত না। তাঁর অভিনয় বহু শিক্ষিত যুবককে পেশাদার নাট্যাভিনয়ে যোগদানে উৎসাহ জুগিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল। প্রথম অভিনয় ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের ‘বৈকুণ্ঠের খাতা’ নাটকে। বিসর্জন নাটকেরই দশম প্রদর্শনীতে শিশির ভাদুড়ী জয়সিংহের চরিত্রে অভিনয় করেন। ঐ সময়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘গোড়ায় গলদ’ প্রহসনটিকে শেষ রক্ষা নামে রূপান্তর করেন এবং কয়েকটি গান যুক্ত করে শিশির ভাদুড়ীর হাতে তুলে দেন। নাট্যমন্দিরের হয়ে ১৯২৭ সালে ৭ সেপ্টেম্বর কর্নওয়ালিশ থিয়েটারে সেটা মঞ্চস্থ হয়। শিশির ভাদুড়ীর আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ শেষ রক্ষার অভিনয় দেখতে এসেছিলেন। সেদিন তাঁর সঙ্গে দর্শক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত কুমার সেন গুপ্ত ও নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় প্রমূখ সাহিত্যিকরা। ১৯২১ সালে পেশাদার অভিনেতা হিসেবে ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। পরে তাদের সঙ্গে মতানৈক্য হলে মঞ্চ ছেড়ে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। শরত্চন্দ্রের ‘আঁধারে আলো’ ও ‘চন্দ্রনাথে’র চিত্রায়ণে একই সঙ্গে পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকায় কাজ করেন। ১৯২৩ সালে একটি নাট্যদল গঠন করে তিনি নাট্যমঞ্চে ফিরে আসেন। ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শিশিরকুমার নিজস্ব নাট্যগোষ্ঠী নিয়ে আমেরিকা যান। পরের বছর ১২ জানুয়ারি তিনি নিউইয়র্কের ভ্যান্ডারবিল্ট থিয়েটারে সীতা মঞ্চায়নের মাধ্যমে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৪২ সালে ‘শ্রীরঙ্গম’ নামে একটি রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বর্তমানে বিশ্বরূপা থিয়েটার নামে পরিচিত। শ্রীরঙ্গমে মঞ্চস্থ বিভিন্ন নাটকের মধ্যে মাইকেল নাটকের নাম-ভূমিকায় তাঁর অভিনয় সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এখানেতাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হলো: বিপ্রদাস, তখৎ-এ-তাউস, বিন্দুর ছেলে ও দুঃখীর ইমান। শ্রীরঙ্গমে তিনি সর্বশেষ অভিনয় করেন। তিনি অনেক সবাক ও নির্বাক চলচ্চিত্রে সফল অভিনয় করেন। আজ নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুরীর ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৫৯ সালের আজকের দিনে তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেতা ও নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।


শিশিরকুমার ভাদুড়ী ১৮৮৯ সালের ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার রামরাজাতলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গবাসী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯১০ সালে বিএ এবং ১৯১৩ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পেশাগত জীবনের শিশিরকুমার প্রথমে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট ও বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল এবং অধ্যাপনাকালীন শৌখিনতাবশত তিনি অনেক বাংলা ও ইংরেজি নাটকে অভিনয় করেন। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট মঞ্চ ছিল তাঁর অভিনয় স্থান। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথের বৈকুণ্ঠের খাতা নাটকে অসাধারণ অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হন। ১৯২১ সালে পেশাদার অভিনেতারূপে তিনি ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১০ ডিসেম্বর আলমগীর নাটকে নাম-ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। কিন্তু ম্যাডান থিয়েটারের সঙ্গে মতানৈক্য ঘটায় মঞ্চ ছেড়ে তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। শরৎচন্দ্রের আধাঁরে আলো ও চন্দ্রনাথ-এর চিত্রায়ণে একই সঙ্গে পরিচালক ও অভিনেতার ভূমিকা পালনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯২৩ সালে তিনি একটি নাট্যদল গঠন করেন এবং ২৫ ডিসেম্বর ইডেন গার্ডেন্স-ক্যালকাটা একজিবিশনে মঞ্চায়িত দ্বিজেন্দ্রলালের সীতা নাটকে রামচন্দ্রের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয়-প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২৪ সালের ৬ আগস্ট নাট্যমন্দিরে মঞ্চায়িত যোগেশ চৌধুরীর সীতা নাটকে শিশিরকুমারের অভিনয়ে অভিভূত হয়ে রসরাজ অমৃতলাল বসু তাঁকে থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। এ নাটকের প্রয়োগ-নৈপুণ্যে তিনি বিলেতি ভাবধারার পরিবর্তে এক নতুনত্বের সূচনা করেন। তিনি কনসার্টের বদলে রোশনচৌকি, আসন-ব্যবস্থায় বাংলা অক্ষর, প্রবেশপথে আলপনা ও পূর্ণকলস, প্রেক্ষাগৃহে চন্দন-অগরু-ধূপের গন্ধ, পাদপ্রদীপের পরিবর্তে আলোক-সম্পাত এবং সীনের পরিবর্তে বক্স্ সেট প্রয়োগ করেন। শিশিরকুমার কর্নওয়ালিস থিয়েটার (বর্তমান শ্রী সিনেমা) মঞ্চেও কাজ করেছেন।


দ্বিজেন্দ্রলালের সীতা নাটকে রামচন্দ্রের ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন শিশিরকুমার ভাদুরী। তাঁর অভিনয়ে অভিভূত হয়ে অমৃতলাল বসু তাঁকে থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। এ নাটকে তিনি কনসার্টের বদলে রোশনচৌকি, আসনব্যবস্থায় বাংলা অক্ষর, প্রবেশপথে আলপনা ও পূর্ণকলস, প্রেক্ষাগৃহে চন্দন-অগরু-ধূপের গন্ধ, পাদপ্রদীপের পরিবর্তে আলোক-সম্পাত এবং সিনের পরিবর্তে বক্সসেট প্রয়োগ করেন। নাট্যমঞ্চে একাধিক নাটকে অভিনয় করে শিশিরকুমার যশস্বী হন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি হলো: রঘুপতি ও জয়সিংহ (বিসর্জন, ১৯২৬), যোগেশ (প্রফুল্ল, ১৯২৭), জীবানন্দ (ষোড়শী, ১৯২৭), নাদির শাহ (দিগ্বিজয়ী, ১৯২৮), নিমচাঁদ (সধবার একাদশী, ১৯২৮) এবং চন্দ্রবাবু (চিরকুমার সভা, ১৯২৯)। ১৯৩০ সালে তিনি তপতী নাটকে বিশেষ অভিনয় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেন। আর্থিক অনটনের দরুণ এ বছরই তিনি স্বীয় মঞ্চ নাট্যমন্দির ছেড়ে স্টার থিয়েটারে যোগ দেন। নাট্যজন
শিরকুমার ভাদূরী ছিলেন বাংলা রঙ্গমঞ্চের এক কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব। তাঁর অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর কথা ছিল এর চেয়ে একটি জাতীয় নাট্যশালা প্রতিষ্ঠা করা ভালো। ১৯৫৯ সালের ৩০ জুন কলকাতার বরাহনগরস্থ নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিনেতা, নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীর ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলা রঙ্গমঞ্চের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×