somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো, যুগ জনমের বন্ধু আমার আধার ঘরের আলো !

০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষ মাত্রেই ভুল করে। কারণ কোনো মানুষই দোষ-গুণের ঊর্ধ্বে নয়। তবে কিছু মানুষ আছে মানুষের দোষ-ত্রুটি নিয়ে কুৎসা রটাতে মজা পায়। একজনের দোষ অন্যজনের কাছে বলে বেড়ানোই নিন্দুকের কাজ। সমাজের সবাই নিন্দুককে ঘৃণার চোখে দেখে। নিন্দার মধ্যে কতটুকু সত্য বা কতটুকু মিথ্যা থাকবে, তার কোনো মাপা নিয়ম নেই। সম্পূর্ণ সত্য কথাও বলার উদ্দেশ্য ভালো না হলে বা যিনি বলছেন তিনি যদি তা থেকে তৃপ্তি পান, তাহলে আমরা নিন্দা বলে ধরে নিতে পারি। নিন্দুকেরা অনেক সময় নিন্দা করবার জন্যই ব্যক্তির খুঁতগুলো খুঁজে খুঁজে বের করেন এবং আড়ালে তা চর্চা করেন। পরের নিন্দে করাতে এবং শোনাতে মানুষ বাড়তি তৃপ্তি পায়। আবার অন্য কেউ তার নিন্দা করেছে শুনলে আরও বেশি ব্যথিত হয়। মানুষ নিন্দা জেনেও নিন্দুককে বিশ্বাস করে এবং তা নিয়ে নির্দোষ ব্যক্তির সঙ্গেও কলহ করতে ছাড়ে না। আমরা যত সহজে নিন্দুককে বিশ্বাস করি তত অকপটে নিন্দিত ব্যক্তিকে, যিনি হয়তো নিন্দার শিকারমাত্র, বিশ্বাস করি না। নিন্দা করা চরম গর্হিত এবং গুণাহর কাজ। তাই সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। তবে নিন্দুক আমাদের ক্ষতির চেয়ে উপকারও কম করে না। নিন্দুক ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়, সমালোচনায় মুখর থাকে। ফলে মানুষ সচেতন হয় এবং ভুল শুধরানোর সুযোগ পায়। তাই নিন্দুক এক অর্থে ইতিবাচক। কেননা, নিন্দুকের ভয়ে মানুষ সাবধান থাকে। খারাপ কাজ বা দোষের কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। নিন্দুকের ভয়ে মানুষ অনেক সময় নিজে নিজেই সংশোধন হয়। শুধু তাই নয়, নিন্দুকের নিন্দার ফলে মানুষের পাপের মোচন হয়। কে আছে এমন বন্ধু, যার দ্বারা এত বড় উপকার হয়? তাও আবার তার বিনিময়ে তাকে কিছুই দিতে হয় না। তাই নিন্দুককেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা উচিত।
আমরা কিছু করতে পারি বা না পারি অপরের কাজের সমালোচনায় পঞ্চমুখ। বুঝি বা না বুঝি অপরের কাজের মন্তব্য করা চাই ই চাই। তবে সে মন্তব্য যে আমার অজ্ঞতাকে প্রকাশ করে দেয় তা ও বুঝতে সক্ষম হইনা।
একবার স্কুলের এক ইচড়ে পাকা ছেলে শিক্ষকের পাঠে মনোযোগ না দিয়ে তার সহপাঠির মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে তৎপর। যা শিক্ষকের দৃষ্টি গোচর হলে তিনি ওই ইচড়ে পাকা ছাত্রকে পাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করে। কিন্তু যে হেতু পাঠে তার মনোযোগ ছিলনা তাই সে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দানে অপারগ হয়। কিন্তু এমন ভাব দেখায় সে সব বুঝেছে।
তখন শিক্ষকের মন্তব্য " তুমি যে বোঝ নাই , তা যে আমি বুঝেছি, তাও তুমি বোঝ নাই।"
তেমনি আমাদের এই সামুতে কিছু সংখ্যক সম্মানীত পাঠক, লেখক ও মন্তব্যকারী আছেন যারা কিছু বুঝুক আর না বুঝুক মন্তব্য করতে হয় বলেই মন্তব্য করেন। তা সংশ্লিষ্ট পোস্টের বিষয় বস্তুর সাথে সম্পৃক্ত হোক বা না হোক। তা ছাড়া একই গোত্রের কিছু ব্লগার আছেন যাদের একজন একটি মন্তব্য করলে সেই গোত্রের সকল ব্লগার সরব হয়ে ওঠেন এবং প্রায় একই ধরণের মন্তব্য করতে থাকেন। তাদের এই মন্তব্যে তাদের দ্বিমুখী চরিত্র ফুটে ওঠে তাদের অজান্তে।
উদাহরণ স্বরূপ কেউ হয়তো কোন একটি পোস্টের প্রশংসা করে মন্তব্য করলেন অথচ পরক্ষনে তাদের গোত্রের কেউ যদি সেই একই পোস্টে নেতিবাচক মন্তব্য করেন আর তা যদি তার নজরে আসে তখন সে তার পূর্বের করা মন্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে সেখানে নেতিবাচক মন্তব্য করে বসে। যা তার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
আমরা নিজেদের ভুল কখনোই স্বীকার করার মানসিকতা নিয়ে এখানে লিখিনা বা মন্তব্য করিনা। আমরা বুঝাতে চাই আমি সর্বজ্ঞ। রিপোস্ট আর আপডেট যে এক কথা নয় এই সাধারণ কথাটি না বুঝতে পেরে আমরা নিজে কোন পোস্ট না লিখে অপরে কি লিখলো, কেন লিখলো, সেটা আপডেট না রিপোস্ট তার বিশ্লেষণ করতে বসি। এমন কি তার বিপক্ষে নতুন একটা পোস্ট দিয়ে তার চরিত্র হননে পিছপা হই না। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট লেখকের কোন মন্তব্য থাকতে পারে সে বিবেচনা না করে তার মন্তব্য করার অধিকার হরণ করে বসি। অর্থাৎ তার আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগও দেই না।


এই কারণে সামুর অনেক বিজ্ঞ ও স্বনামধন্য ব্লগার সামুকে গুডবাই জানিয়েছেন এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরনের অপেক্ষায় আছেন অনেকে। সামু একটা মুক্ত মঞ্চ। এখানে কথা বলার অধিকার লেখার অধিকার সবার যদি সে সামুর সর্ত পালন করে থাকে। লেখকের সাথে সবার মতের মিল হবে এমন আশা করা বাতুলতা। দ্বিমত থাকতেই পারে। তখন মন্তব্য কারী তার সুচিন্তিত মতামত দান করে তার শিক্ষার স্বাক্ষর রাখতে পারেন। কিন্তু তা না করে যখন সেই লেখকের পেশা বা তার চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করে তখন সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর শিক্ষার প্রমান রাখেন তার অজান্তে যা কোন ভাবেই তার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেনা। কোন একটি ঘটনা যদি ঘটেই যায় যা সামাজিক অবক্ষের কারণ তা সকলের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য মিডিয়া কাজ করে। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রাখলেই যে ঝড়ো বাতাস বইবে না, কিংবা সূর্য়ের আলোয় আলোকিত হবেনা বিশ্ব এই ধারণা যাদের তারা বোকার স্বর্গে বাস করে।
আমাদের সমাজে যেমন আছে সুশীল মানুষ তেমনি আছে গুটিকতক মানুষ নামধারী সারমেয়। যাদের ঘৃন্য ও পাশবিক নির্যাতনে ছন্দ পতন হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক জীবন, কলুশিত হচ্ছে সমাজ। এই মানুষ নামধারী কুকুরদের মুখোশ খুলে দেবার জন্য যারা কাজ করেন তাদের বিরুদ্ধে সব সময়ই বাধা আসে সেই সকল সারমেয়দের যারা তাদের অজান্তে এই ন্যাক্কারজনক কাজকে সমর্থন করে। তারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে অন্তরালে থেকে এই ঘৃন্যকাজ চালিয়ে যেতে। তারা নাখোশ হয় যখন ওই সকল অন্যায় ও পৈশাচিক ঘটনা প্রকাশ পায়। তাই তারা সোচ্চার হয় যেন এই সকল অন্যায় ও নিন্দনীয় কাজের খবর যেন প্রকাশিত না হয়। কিন্তু বিধিবাম! সত্য প্রকাশ হয়েই পড়ে। তখন তারা স্বচেষ্ট হয় সেই ঘটনা প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য। কিন্তু তারা সফল হয়নি কোন কালেই, হবে ও না। কেউ কেউ এমনও আছেন যে সমাজ থেকে সকল অন্যায় ও নিন্দনীয় কাজের মূলউৎপাটনের জন্য অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন। সংবাদ কর্মীরাও সেই দলের। যতদিন সমাজে অন্যায়,অত্যাচার ও নৃশংস ঘটনা ঘটতে থাকবে ততদিন তারা তা প্রকাশ করেই যাবে। এ জন্য কারো গাত্রদাহকে তারা পরোয়া করে না। নজরুলের ভাষায়, "আমি সেই দিন হব সান্ত, যবে অত্যাচারীর খড়গ কৃপান আকাশে আর রণিবেনা, নির্যাতিতের দীর্ঘ নিঃশ্বাস আকাশে বাতাসে ধ্বনিবেনা"
আর এই কাজে পাছে লোকে কিছু বলে, তার পরোয়া করতে যেন হয়না কোন দিন।
নিন্দুকের নিন্দায় কোন মহৎ কাজ থেমে থেকেছে কোন দিন!!
কবি গুরুর ভাষায়ঃ
নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভাল,
যুগ জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আঁলো।
সবাই মোরে ছাড়তে পারে, বন্ধু যারা আছে,
নিন্দুক সে ছায়ার মত থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে,
সাধক জনে নিস্তারিতে তার মত কে জানে?
বিনামূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার,
বিশ্বমাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
নিন্দুকে সে বেঁচে থাকুক বিশ্ব হিতের তরে;
আমার আশা পূর্ণ হবে তাহার কৃপা ভরে।


উপসংহারঃ নিন্দুক তার চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের কারণে সকলের কাছেই ঘৃণার পাত্র। কিন্তু নিন্দুকের পরচর্চার জন্যই মানুষ সংশোধনের সুযোগ পায়। কারণ নিন্দুকের ভয়ে মানুষ সাবধান থাকে। নিন্দুকের ভয়ে মানুষ অনেক সময় নিজে নিজেই সংশোধন হয়। খারাপ কাজ বা দোষের কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। শুধু তাই নয়, নিন্দুকের নিন্দার ফলে মানুষের পাপের মোচন হয়। কে আছে এমন বন্ধু, যার দ্বারা এত বড় উপকার হয়? তাও আবার তার বিনিময়ে তাকে কিছুই দিতে হয় না। নিন্দুকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকার করে নিয়ে গদ্যের ইতি টানতে চাই। নিন্দুকের একটা বড় অবদান আমরা পাব ভাষাতাত্ত্বিকের দৃষ্টিকোণ থেকে। পৃথিবীর যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধিতে নিন্দুকের অবদান স্বীকার্য। তাই নিন্দুককেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা উচিত। জ্ঞনীরা বলেন, ‘যে সৎ হয়, নিন্দা তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না।’ সুতরাং নিন্দুককে ঘৃণা করা উচিত নয়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:৪২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×