somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ/ধাত্রী দিবসঃ তথ্য উপাত্ত অনুসরণ করুনঃ মিডওয়াইফারি খাতে বিনিয়োগ করুন

০৫ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিডওয়াইফ/ধাত্রী সেবা বিশ্বের অন্যতম মানবিক পেশা। তারা যুগ যুগ ধরে সন্তান প্রসবে সেবা প্রদান করে আসছেন। দক্ষ ও পেশাদার মিডওয়াইফ মা ও নবজাতকের মৃত্যুরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। একজন মিডওয়াইফ জানেন অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতকের অবস্থার অবনতি হলে কীভাবে তা শনাক্ত করবেন। বলা হয়, মিডওয়াইফ হলেন এমন একজন দক্ষ ও শিক্ষিত সেবিকা, যিনি মা ও শিশুকে নিবিড়ভাবে সেবা দেবেন। যদি কখনো কোনো ধরনের জটিলতা হয়, সেটা বুঝতে পারবেন তাহলে প্রাথমিক সেবা প্রদান করে সঠিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি জানেন, কখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে মা ও নবজাতককে পাঠাতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে ধাত্রীরা সন্তান প্রসবে মায়েদের যেভাবে যুগ-যুগ ধরে সেবা দিয়ে আসছেন সেই কাজের স্বীকৃতির জন্য ১৯৮০ এর দশক থেকে তারা দাবি করে আসছেন।মিডওয়াইফদের স্বীকৃতি ও সম্মান জানাতে একটি দিন থাকার ধারণাটি ১৯৮ দি নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইভস কনফারডেশন সম্মেলন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালের ৫ মে তারিখটি আন্তর্জাতিক ধাত্রী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ মে এ দিবসটি বিশ্বের ৫০টি দেশে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্যঃ "Follow the data Invest in midwives" তথ্য উপাত্ত অনুসরণ করুনঃ মিডওয়াইফারি খাতে বিনিয়োগ করুন। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের তথ্যমতে ২০১০ সালে জাতিসংঘের ৬৫তম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মিডওয়াইফারি সেবা এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি দেন। তার সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে সারাদেশের গর্ভবতী মা ও নবজাতকের মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে ৪২১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এক হাজার ৩১২টি ইউনিয়ন সাব সেন্টারে তিন হাজার মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টি করা হয়। ৩৪২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৯টি ইউনিয়ন সাব সেন্টারে এক হাজার ১৪৯ জন রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া হয়। পিএসসির আওতায় আরও এক হাজার ৮৫০ জন মিডওয়াইফ নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন। ২০১৩ সালে দেশে প্রথম ২০টি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫২৫ আসনে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে সেখানে সরকারি ৪১টি সরকারি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৫০টি আসন বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বেসরকারি আরও ৪১টি প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৮০টি আসনে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। সারাদেশে চার হাজার ৪০০ জন রেজিস্ট্রার মিডওয়াইফ রয়েছেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একই কারিকুলামে একই পাঠদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়েছে। উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের উদ্যোগে বিএসসি ইন মিডওয়াইফারি কারিকুলাম অনুমোদিত হয়েছে। চলতি বছর থেকে কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে এমএসসি ইন মিডওয়াইফারি কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ অব্যাহত রয়েছে। দক্ষ শিক্ষক তৈরিতেও দেয়া হচ্ছে জোর। এরইমধ্যে সুইডেনের ডালার্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১২০ জন মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। আরো ৩০ জন অধ্যয়নরত রয়েছেন। জীবন বাঁচানোর কাজে মিডওয়াইফদের ভূমিকা তুলে ধরতে আজ ৫ মে উদ্যাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবস। নিরাপদ মাতৃত্ব ও ঝুঁকিবিহীন প্রসব নিশ্চিত করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে এ বছর মহামারির প্রাদুর্ভাবের ফলে অনেকটা সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। মিডওয়াইফগণ মা ও নবজাতকের সেবায় নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। গুণগত সেবা নিশ্চিত করেন। মা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে ভূমিকা রাখেন। বয়ঃসন্ধিকালের কিশোরীদের পরামর্শ দেন। এছাড়াও নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে রোধেও কাজ করছেন তারা। স্বাস্থ্যসেবা খাত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এই বছরের প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে মিডওয়াইফরা এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবেন।


সুন্দর আগামীর জন্য ধাত্রীরা নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে ধাত্রীরা প্রসূতিদের সেবা দিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থার সময়ে নারীদের তাদের তত্ত্বাবধানে রেখে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন এবং স্বাস্থ্য ও শিশুর পরিচর্যা বিষয়ক উপদেশ দেন। এ ছাড়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নবজাতকের পরিচর্যা, নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোসহ প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়ার কাজ করে থাকেন ধাত্রীরা। এছাড়াও একজন মিডওয়াইফ মা এবং সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ এবং গর্ভাবস্থা বা জন্মকালীন মেডিকেল জটিলতা দেখা দিলে গাইনি চিকিৎসক দেখানোর জন্য পরামর্শ দেন। একজন মিডওয়াইফ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা দিয়ে থাকেন। উদ্বেগের বিষয় শহরে মিডওয়াফারির গুরুত্ব অনুধাবন করলেও গ্রামে ধাত্রী পেশাটি এখনো অবহেলিত। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো বেশির ভাগ গর্ভবতী মা বাড়িতে সন্তান প্রসব করেন। এঁরা অনিরাপদভাবে অদক্ষ সেবাদানকারীর সাহায্য নেন। বিডিএইচএসের ২০১১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনও ৫২ শতাংশ প্রসব বাড়িতেই হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার মাত্র ২৯ শতাংশ। বাড়িতে প্রসব করানো হয় দাইয়ের মাধ্যমে, যাদের বেশিরভাগেরই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। সনাতন পদ্ধতিতে প্রসব করানোর কারণে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর হার এখনও বেশি। এ ছাড়া প্রসবকালীন জটিলতা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অদক্ষতার কারণে নারীদের ফিস্টুলাসহ দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার হার বেড়ে যাচ্ছে; যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ দিবসে দেশের ও বিশ্বের সকল মিডওয়াইফ/ধাত্রীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সফল হোক আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ/ধাত্রী দিবস।
সূত্রঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম :-& ফেসবুক-১ :-& ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১১
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×