(বোমা হামলার পর ভবনটি মাটিতে ভেঙে পড়ছে। ভবনটির ধ্বংসস্তূপ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে)
ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজায় একটি বহুতল ভবন যেখানে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) কার্যালয় তা মাত্র দুই সেকেন্ডে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। আজ শনিবার বিমান থেকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা ফেলা হয় ভবনটিতে। এ ঘটনায় হতাহতের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হুমকির পর ভবনটি সম্ভবত খালি করে দেওয়া হয়। ভবনটি গুড়িয়ে দিয়ে ইসরাইলের বিমানবাহিনী বলছে, এটি হামাসের সম্পতি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি গোয়েন্দা কাজে ব্যবহার করত হামাস। বিবিসি জানিয়েছে, ওই ভবনটিতে আলজাজিরা ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) কার্যালয় ছাড়াও আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অফিস ছিল। এ ছাড়া বহুতল ভবনটিতে অ্যাপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন অফিস ছিল বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। খবরে বলা হয়েছে, হামলার পরে ভবনটির টুকরো হাওয়ায় উড়তে থাকে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্যারি প্রুইট বলেন, সংস্থাটির সবকর্মী ও ফ্রিল্যান্সারদের নিরাপদে ভবন থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা খুবই ব্যথিত ও আতঙ্কিত যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এপি ব্যুরো এবং অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের ব্যবহৃত একটি ভবন হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে এবং ধ্বংস করে দিয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য বিরক্তিকর পরিস্থিতি। অল্পের জন্য আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। এতে গাজায় এখন কী ঘটছে, তা নিয়ে বিশ্ববাসী খুব কমই জানতে পারবেন। কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে ইসরাইলি সরকার থেকে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে এপি। এ ছাড়া যা ঘটেছিল, সে সম্পর্কে আরও জানতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সোসাকি টুইট বার্তায় বলেছেন, আমরা সরাসরি ইসরায়েলিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। একই সঙ্গে জানিয়েছি, সাংবাদিক ও স্বাধীন গণমাধ্যমের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব।
এদিকে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় অবস্থিত আল জাজিরার কার্যালয় গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, তারা চুপ করে থাকবে না। আল জাজিরার জেরুজালেম ব্যুরোর প্রধান ওয়ালিদ আল-ওমারি বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে যারা যুদ্ধ করছে তারা গাজায় শুধু ধ্বংস আর মৃত্যুই বাড়িয়ে চলছে না, তারা গণমাধ্যমগুলোকেও চুপ করিয়ে দিতে চায় যারা এগুলো প্রত্যক্ষ করছে, তথ্য সংগ্রহ করছে ও সত্যের প্রতিবেদন করছে যে গাজায় ঠিক কী ঘটছে। কিন্তু এটি অসম্ভব। আমরা চুপ করে থাকব না। ১৩ তলা বিশিষ্ট জালা টাওয়ার ভেঙে পড়ার পর এ কথাগুলো সরাসরি সম্প্রচারে বলেন ওয়ালিদ। এসময় তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজা উপত্যকায় যেসব অপরাধ নিয়মিত করে চলছে এটি তারই অংশ।
আলজাজিরা ও এপির কার্যালয় ধ্বংসের ভিডিও
উক্ত ভবনটিতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস ব্যুরোও কার্যালয় ছিল। ঘণ্টাখানেক আগে এটি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গাজার অফিসটিতে ১১ বছর ধরে কাজ করা আলজাজিরার সাংবাদিক সাফাওয়াত আল খালুত তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, দুই সেকেন্ডের মধ্যেই ভবনটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। তিনি বলেন, আমি ১১ বছর ধরে সেখানে কাজ করছি। আমি অনেক ঘটনা ভবনটি থেকে কাভার করেছি আমরা। চোখের সামনে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে ভবনটিতে আঘাত করে। এরপরই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে। দুই সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছুই শেষ হয়ে গেল।’ ভবনটিতে অফিস ও অ্যাপার্টমেন্ট থাকার বিষয়ে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়েছে, তারা বলছে, সেখানে হামলার আগে সতর্ক করা হয়েছে। ইসরাইলের বিমান বাহিনী টুইট করে জানায়, ওই বহুতল ভবনটি মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হত। ঘণ্টাখানেক আগে এটি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত ১৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ। পাশাপাশি বহু ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার ১৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এর মধ্যে এক পরিবারের ১০ সদস্য রয়েছে। যাদের আটজন শিশু ও দুইজন নারী। অপরদিকে হামাসের রকেট হামলায় এ পর্যন্ত ৯ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর সদস্য রয়েছে।
সূত্রঃ Al Jazeera
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
ব্রেকিং নিউজ২৪.কম ফেসবুক-১ ফেসবুক-২
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২১ রাত ১২:১৫