একটি কুড়ি দুটি পাতা রতনপুর বাগিচায়
অমল কোমল হাত বাড়িয়ে লছমি আজো তোলে
গানের কথা ড.ভুপেন হাজারিকা
পাহাড়, টিলা ঝরনা, হাওর, নদী, বন-বনানীর ঢেউ খেলানো ঘন সবুজে আচ্ছ্বাদিত সাজানো গোছানো এক সবুজ প্রান্তর সিলেটের চা-বাগান।এই জনপদের অপর এক নাম ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র দেশ। চা শিল্পের ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। ১৮৩৩ সালে ভারতবর্ষে প্রথমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি চায়ের আবাদ শুরু করে। ১৮৫০ সালে তৈরি করা হয় সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগান। ১৮৫৪ সালে আমাদের দেশে মালনীছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয় । সারাদেশের ১৬২টি চা-বাগানের মধ্যে সিলেটে চা-বাগানের সংখ্যা ১৩৮টি। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ চা-বাগান মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে। আর কিছু বাগান রয়েছে সিলেট ও হবিগঞ্জে ।
সূত্রঃ চা শিল্পের ইতিহাসঃ আতবুল কাশেম৷
দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র দেশ আজ জলমগ্ন!
স্মরণ কালের ভয়াবহ নন্যায় এবার তলিয়ে গেছে দুটি পাতা একটি কুড়ির এই সবুজ দেশ।
গত ১৮ বছরের মধ্যে সিলেটে এটিই সবচেয়ে বড় বন্যা।
১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে এমন পানি হয়েছিল। সিলেটে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিল সেই স্মৃতি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে।
এবারের বন্যায় থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন পানির নীচে। সিলেটের ৬টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়ও। পানির তোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে ২০টি নদীরক্ষা বাঁধ। পানি এত বেশি আসছে যে বাঁধগুলোতে পানি উপচে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি অতিরিক্ত থাকায় বাঁধগুলো সংস্কার কাজও করা যাচ্ছেনা। সিলেট শহরের অন্তত ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে এসব এলাকার সড়ক। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসেও পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় ঘরে রান্না বন্ধ, এমনকি বাথরুমও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এবারের বন্যায় সিলেটের জৈন্তাপুরে এ পর্যন্ত ৪০ একর বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত এবং প্রায় ১০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
বন্যায় জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল, মানিকপুর, কাজলসার, বিরশ্রী ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান- তার ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, চকবারাকুলি, শরীফাবাদ, শাহগলী বাজার ও কচুয়া এলাকা সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে তলিয়ে গেছে।
বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জকিগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া বন্যায় তলিয়ে গেছে কানাইঘাট, সদর, গোয়াইনঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাই। এসব এলাকার বেশির ভাগ সড়কই তলিয়ে গেছে। পানি উঠে গেছে কানাইঘাট থানায়ও। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। প্লাবিত প্রতি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিতদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তাও দেয়া হচ্ছে।
ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সদস্যরাও তাদের সাধ্যমতো ত্রাণ বিতরণ করছে বন্যাকবিলত মানুষের মাঝে। যাদের মধ্যে সাম হোয়্যার ইন ব্লগের মডারেটর কাল্পনিক ভালোবাসা ( জাদিদ ভাই) এবং এক রঙা এক ঘুড়ির পক্ষথেক নীল সাধুর নাম উল্লেখযোগ্য। আমরা অচিরে দিলেটবাসীর দুরাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য মহান আল্লাপাকের দরবারে মোনাজাত করছি।
© নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১০