ফুলের কানে ভ্রমর এসে চুপি চুপি বলে যায়
তোমায় আমার সারাটি হৃদয় নীরবে জড়াতে চায়।
গানের কথাঃ কেজি মুস্তাফা, শিল্পীঃ শাহনাজ রহমতুল্লাহ, সুরকারঃ রবিন ঘোষ।
ফুলের কানে ভ্রমর গুনগুন করে স্বপ্নভরা সম্ভাষণ জানিয়ে নিমন্ত্রণ জানায় বসন্তের। কোটি কোটি বছর ধরে ভ্রমর ও ফুলের মধ্যে পরস্পরের জন্য লাভজনক এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভ্রমর বা মৌমাছি মধু বা নেকটার সংগ্রহের জন্য যখন ফুলের ওপর বসে তখন তাদের শরীরে ফুলের পরাগ লেগে যায়। পরবর্তীতে সেই মৌমাছি বা ভ্রমর যখন অন্য কোনো ফুলের ওপর বসে তখন পরাগায়ন ঘটে। তবে এটি এমনি এমনি ঘটে না। এর জন্য ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে এক ধরনের বিশেষ আকর্ষণ ও কথোপকথন চলে। মৌমাছি ও ভ্রমর জাতীয় পোকা ফুলের কাছ থেকে মুধু (Nectar) ও পরাগ পায়। তার বদলে পোকাগুলি পরাগায়নের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু ভ্রমর যদি বসার পর কোনো ফুল থেকে মধু না পায়, তাহলে সে আর সেই ফুলে বসবে না। এতে ওই ফুলের পরাগায়নও আর হবে না। তাই রাগবহনকারীদের নিরাশ করার সাধ্য ফুলের নেই। সেটাই বাস্তব ঘটনা। অনেক শক্তি ক্ষয় করে ভ্রমরকে ফুলের উপর ওঠানামা করতে হয়, নেকটার খুঁজতে হয়। আপাতদৃষ্টিতে ফুল মুখের উপর বলে দিতে পারে না, ‘দেখো তোমার জন্য আমার কোনো নেকটার নেই! তাহলে সেগুলি আর ফিরে আসবে না। ফুলের কুঁড়ির উপর ভ্রমর যে পরাগায়ন প্রক্রিয়া চালায়, সেটা নতুন বিষয় নয়। এবার বিজ্ঞানীরা ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে ‘কথোপকথন’-এর রহস্য ভেদ করেছেন। ভ্রমর ও ফুলের মধ্যে নানা কথার আদানপ্রদান চলে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসর ডানিয়েল রোব্যার্ট ফুল ও পরাগবহনকারীদের মধ্যে এই ‘জাদুময় সংযোগ’ পরীক্ষা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বেশ কিছুক্ষণ ধরে ফুলগাছগুলির দিকে তাকিয়ে থাকলে বোঝা যায় যে ভ্রমর মোটেই যে কোনো ফুলের উপর বসে না; বরং যে ফুলে সবে অন্য পোকা বসেছিল, সেটি এড়িয়ে চলে। অনেক সময় ধরে যে সব ফুলে কোনো অতিথি আসে নি, ভ্রমর সেগুলির খোঁজ করে। সে সব ফুল নেকটার বা মিষ্টি রসের আধার ভরার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। আমার মনে হয়, ভ্রমর সেটা টের পায়।’’ তিনি আরো বলেন, এখন কথা হলো- একটি ফুলে মধু আছে কি নেই সেটি সে ভ্রমরকে বসার আগে কীভাবে জানায়। কারণ ফুল দ্রুত নিজের রং, গন্ধ বা আকার পরিবর্তন করতে পারে না, যে এসবের মাধ্যমে সে ভ্রমরকে সংকেত পাঠাবে। তাই তারা গবেষণা করে দেখেছেন ফুল তার নিজস্ব ইলেক্ট্রো-স্ট্যাটিক সম্ভাবনা দ্রুত বদলাতে পারে পারে। তাই তারা ধারণা করেন, এর মাধ্যমেই ফুল ভ্রমর বা পরাগবাহীদের সংকেত দিয়ে থাকে।
ভ্রমর যে ইলেক্ট্রো স্ট্যাটিক ক্ষেত্র টের পায়, প্রোফেসর রবার্ট গবেষণাগারে তা প্রমাণ করতে পেরেছেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভ্রমরের কলোনিকে সেই পরীক্ষায় শামিল করা হয়েছিল। গবেষকরা অতি ক্ষুদ্র নেগেটিভ চার্জ তৈরি করে নেকটার-ভরা ফুলের নকল করেছিলেন৷ ভ্রমর এত সূক্ষ্ম তারতম্য সত্ত্বেও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। নিউরো বায়োলজিস্টরা এমনকি ফুল ও ভ্রমরের মধ্যে ‘কথোপকথন’ শ্রবণযোগ্য করে তুলতে পারেন।
সূত্রঃ ভ্রমর ও ফুলের মধ্যে সংলাপ
সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২২ রাত ২:০৯