somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্য গল্পঃ বিজ্ঞানীর বেডরুম -নুরুন নাহার লিলিয়ান ।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বিজ্ঞানীর বেডরুম
নুরুন নাহার লিলিয়ান

আমি এবং আমার স্ত্রী নুশমা যে রুমটায় ঘুমাই সেটা পূর্ব পশ্চিম মুখী । দক্ষিন দিকে একটা বারান্দা আছে । যে বারান্দা দিয়েই আমাদের রুমটায় যেতে হয় ।বারন্দার সাথেই একটা কাঁঠাল গাছ আছে । উত্তর এবং দক্ষিন দুই দিকেই জানালা । আমরা উত্তর দিকে মাথা দিয়ে ঘুমাই ।এই উত্তর দিকে ও বেশ অনেক গাছ গাছালি আছে । সেই গাছে অনেক গুলো কাক নিয়মিত থাকে ।
আমরা একটা সরকারী গবেষণাগারের আবাসিক ভবনে থাকি । পাঁচ তলা বিল্ডিংয়ের তিন তলায় আমাদের বসবাস।গাছ গাছালি পশু পাখিদের নিয়ে ছিম ছাম নিরিবিলি পরিবেশ ।

আমি সাইদুল একজন কেমিক্যাল বিজ্ঞানী ।বলা যায় সুগন্ধের কারিগর ।নতুন নতুন সুগন্ধ আবিস্কার করি ।পারফিউম বা সুগন্ধি নিয়ে গবেষণা করি ।লোকে বলে আমি অন্তর্মুখী । আমি সত্যি অন্তর্মুখী কিনা জানি না । তবে কথা বলার চেয়ে আমার নিজের ভুবনে কথাদের সাথে ঘুরতেই আমার ভীষণ ভাল লাগে ।
আমার স্ত্রী নুশমার সাথে আমার প্রেমের বিয়ে । একদম অন্যরকম অদেখা প্রেম । বিয়ের আগে আমরা কেউ কাউকে দেখিনি । আমি তখন গবেষণার কাজে সুইজারল্যান্ড । আমার এক ল্যাব মেট বন্ধুর সহকর্মী ছিল নুশমা ।
একদিন সেই বন্ধু নুশমার ছবি ইমেইল করে জানাল ," বিয়ের জন্য ভাবতে পারিস । "
তারপর অনেক দিন কাজের ব্যস্ততায় আর এই বিষয়ে কথা হয়নি । একরাতে ল্যাবে কাজ করছিলাম । এই তো ফ্লেভার ফ্রাগনেন্স নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখছিলাম । আর ইমেইল চেক করছিলাম । অনেক ইমেলের ভিড়ে নুশমার ছবিটা কেমন জীবন্ত লাগল । তখন হয়তো রাত দুটো হবে । হঠাৎ একটা অদ্ভুত ঘ্রান আমাকে কেমন আচ্ছন্ন করে রাখল । নিজের যৌক্তিক চিন্তা থেকে সরে গেলাম । নুশমাই আমার মগজের নিউরনে আঠার মতো লেগে রইল । বাবা মা পাঠিয়ে ছিলাম মেয়ে দেখতে । তাঁরা সুন্দরি পাত্রী হাত ছাড়া করবে না তাই আংটি পড়িয়ে এসেছিল । মা বাবার পছন্দের পর্ব শেষে আমি ও স্কাইপি আর মোবাইলে কথা বলা শুরু করি ।আর এমন করেই আমাদের মোবাইল এবং স্কাইপির সহযোগিতায় বিয়ে হয়ে যায় ।
বিয়ের প্রায় ছয় মাস পর আমি নুশমা কে দেখি । সুইজারল্যান্ডের এক এয়ারপোর্টে। নুশমা শব্দের অর্থ সুগন্ধি । আরবি শব্দ থেকে এসেছে । নুশমার চেহারাটা কোন দামি সুগন্ধির মতোই আকর্ষণীয় । যে কারও কাছেই মনোগ্রাহী। যে কোন মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে । আর আমি তো নব বধুকে দেখে অস্থির হয়ে গেলাম ।

প্রথম রাতেই একটা অদ্ভুত চেনা ঘ্রান আমি নুশমার কাছ থেকে পাই । ঠিক সেই রাতের ঘ্রানটা ।যখন ওর ছবিটা ইমেইলে প্রথম দেখেছিলাম । কিন্তু অনবরতই ব্যস্ততার স্রোতে সব কৌতূহল ভেসে গেছে ।

এখন আমার পাশেই আমার স্ত্রী ঘুমাচ্ছে । তাকে ঘিরে আছে সেই অদ্ভুত ঘ্রানটা ।আমি নুশমাকে জড়িয়ে ধরিনি । কাছে ও ডাকিনি । আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি নুশমার ঘুমন্ত মুখটার দিকে ।যখন ওই ঘ্রানটা আচ্ছন্ন করে রাখে তখন নুশমার চেহারাটা একদম অন্য রকম লাগে । এখনও অন্য রকম লাগছে । রক্তাভ মুখে ঘন কাল চুলের ছায়া । মনে হয় কাল্পনিক গল্পের জীন পরীদের মতো ।

ওর অবয়বে হাজার ও রঙের মিশ্রতা । আমি নিজে একজন ফ্রাগনেন্স গবেষক হওয়ার পর ও এই নিজের স্ত্রীর গায়ে জড়িয়ে থাকা ঘ্রানটা আমি আবিস্কার করতে পারিনি ।অনেক অনেক ভাবে আমি বুঝার চেষ্টা করেছি । ঘ্রানটা যখন আসে নুশমা একদম চুপ হয়ে যায় । ওর বলা অনেক কথাই আমার জীবনে সত্যি হয়ে যায় ।যেন মনেহয় আমার জীবনের মানচিত্র খুব গোপনে নুশমার কাছে গচ্ছিত আছে ।বিয়ের পর আমরা অনেক দেশ ঘুরেছি । ইউরোপের অনেক দেশেই সংসার পাতার চেষ্টা করেছি ।

কিন্তু আমার বিদেশে সংসার স্থায়ী হয়নি । সব জায়গায় নুশমা ভয় পেতো । ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠত । হঠাৎ রেগে যেতো ।অনেক জায়গায় মানসিক রোগের ডাক্তার দেখিয়েছি । কোন কিছুতেই কিছু হয়নি । লোকে আমার স্ত্রীর অবস্থা দেখে প্রশ্ন করবে বলে নিজেদের সমাজ থেকে দূরে থেকেছি । আমার মতো বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ ও পীর ,ফকিরের কাছে গিয়েছি । দেশে ফিরে আমার পোস্টিং ছিল খাগড়াছড়ি । সেখানে এক পাহাড়ির কাছে বলেছিলাম । সে কিছু অচেনা শেকড় আর কবিরাজি ওষুধ দিয়েছিল । আর বলেছিল বাসস্থান পাল্টাতে ।অনে
এক বছর হয় আমরা ঢাকায় বসবাস করছি।বিয়ের অনেক বছর পর হয়তো নুশমা ঘুমাচ্ছে ।কি গভীর ঘুম !মাথার কাছে উত্তর দিকের গাছে কাক গুলো ডাকছে।এই গভীর রাতে ও কিছুক্ষণ পর পর কুকুর গুলো ঘেউ ঘেউ করে উঠছে।আমি দেখি নুশমার পাশে অবিকল নুশমার মতো অন্য কেউ শুয়ে আছে ।আমার দিকে পলকহীন ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে ।

আমি ধিরে ধিরে অনুভব করলাম ।আমি ঘেমে নেয়ে উঠছি । আমার বেড রুমে এয়ারকন্ডিশনর চলছে।এখন নভেম্বরের শীতের হাওয়া বইছে । তবুও আমি অনবরত ঘেমে উঠছি । আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে এল। আমি বাকহীন বধির হয়ে যেতে লাগলাম । নুশমা কে ছুঁয়ে দেখে পরীক্ষা করার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেললাম ।

আমার দীর্ঘ দিনের বিজ্ঞান চর্চা আর জ্ঞান তুচ্ছ হয়ে যেতে লাগল ।পৃথিবীর রহস্যের কাছে আমার সব জ্ঞান ম্লান হয়ে যেতে লগল ।আমি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে গেলাম । আমার সামনে অন্য অস্তিত্বের ব্যাখ্যাহীন এক মানবী শুয়ে আছে । কি অপার্থিব মায়া তাঁর সমস্ত অঙ্গ জুড়ে । আমার সমস্ত ঘর অন্য এক ঘ্রানে মাতোয়ারা হয়ে আছে । আর আমার সমস্ত বিশ্বাসের দিকে তীর ছুঁড়ে মারছে ।আমার বিশ্বাস এবং জ্ঞানের জগতটা ভেদ করে নতুন কিছু স্পর্শ করে যাচ্ছে ।

জানি সকালের সূর্যের আলোয় সব ফিকে হয়ে যাবে। নুশমা প্রানবন্ত হাসি নিয়ে আমার কাছে এসে বসবে । সকালের নাস্তা তাড়াতাড়ি খাওয়ার তাগিদ দিবে । কিন্তু কোনদিন আমার এই অভিজ্ঞতার কথা জানবে না । আমার দেখা পৃথিবীর এই প্রশ্নাতীত রহস্যের খবর শুনবে না । দৃশ্যমান আমাদের জীবন আর বেঁচে থাকার মধ্যেও অন্য এক জীবন বেঁচে থাকার গল্প জানা হবে না । তবুও আমরা সব কিছু মেনে নিয়ে পরস্পরকে ভালোবেসে বেঁচে থাকব । কিছু রহস্য না হয় থাকুক একান্ত একার ।

স্বামী স্ত্রীর বেডরুমের গল্প গুলো সেখানকার বাতাসেই মিশে থাকুক । একান্ত বিশ্বাসের জগতটাও নিজের মধ্যেই লুকানো থাকুক । জ্ঞান , বিজ্ঞান আর বিশ্বাস নিজেদের ভিন্ন অস্তিত্ব নিয়ে মানব জীবনে বিরাজ করুক ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×