সামরিক আদালতে লে. কর্নেল এম এ তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘ওই বিচারের জন্য সামরিক আদালত গঠন ও বিচার কার্যক্রম অবৈধ। এ বিচার বাতিল করা হলো।’ বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার বেলা একটা থেকে একটা ২৭ মিনিট পর্যন্ত রায় দেন। মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজসহ অন্যদের বক্তব্য তুলে ধরে আদালত বলেন, তাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। এ বিষয়টি তদন্ত করতে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই বিচারে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছেন আদালত।(প্রথম আলো )

আমরা অনেক দিন ধরে দাবি করছি কর্নেল তাহের বিচার (আসলে প্রহসনমুলক বিচারের নামে হত্যা) এর নথি প্রকাশের । বিচারের প্রহসনে তাহের হত্যার বিচার দাবি করেছি । আজ আমাদের সেই দাবি পূর্নতা পেল । ইটস বেটার লেট দেন নেভার । আমরা একইভাবে আশা করি খালেদ-হায়দার-হুদা-মঞ্জুর ও জিয়া হত্যারও বিচার হবে ।
প্রাসঙ্গিক বিবচনায় কর্নেল তাহেরকে নিয়ে আমার এক পুরনো ব্লগ নিচে তুলে দিলাম ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সামরিক বুৎপত্তি অর্জনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যিনি পাকিস্তান থেকে ছুটিতে এসে এদেশকে স্বাধীন করতে লড়াকুদের ট্রেনিং দিতেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি
যিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি
যিনি সর্ববৃহৎ ১১ নং সেক্টর এর অধিনায়কত্ত্ব করেছিলেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যিনি কামালপুর সম্মুখযুদ্ধে তার বাম পা হারিয়েছিলেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যিনি সেনা অফিসারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়েছিলেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যিনি সেনাবাহিনীকে উৎপাদনমুখী করার পরকল্পনা করেছিলেন ।
হ্যা
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি
যিনি জাসদ’র বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও গণবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যিনি সিপাহি জনতার বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ,
মুক্ত করেছিলেন জিয়াকে ।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি-
যাকে জিয়া বলেছিলেন ‘ইউ আর মাই ব্রাদার ,ইউ আর মাই সেভার ’।
হ্যাঁ
আমি কর্ণেল তাহের এর কথাই বলছি -
যিনি ছিলেন প্রথম মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার যাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল ।
তারিখ ২১ শে জুলাই ১৯৭৬ , ভোর ৪টা ।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাহেরকে 'বিপ্লবের পতাকা' বলে অভিহিত করেছেন তার এক কবিতায় ।
বিপ্লবের পতাকাই যদি হোন স্বয়ং তাহের তবে, তাকে হত্যা করতে পারে কোন শালা ! নিঃশঙ্ক চিত্তের তাহের কি মরতে পারে ? নাকি কেউ পারে তাকে মারতে ? তাহের নিজেও এটা জানতেন আর তাই "সকালে দাড়ি কেটে, পছন্দের নীল শার্ট পরে, আম কেটে খেয়ে, নিজের রচিত বিপ্লবের কবিতা আবৃত্তি করে ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন আর ফাঁসির রশি নিজ হাতে গলায় পরেন " ।
আর এভাবেই কাপুরুষেরা যখন নিজ গৃহকেই পৃথিবী ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছিল তখন তাহের সারা পৃথিবীকেই তার আপন ঘর করে নিয়েছিলেন ।
আর এভাবেই বাঙালীর সংগ্রামী প্রেরণায় তিতুমির, ক্ষুদিরাম, সুর্যসেন, আসাদ, লে. ক. মোয়াজ্জেম , সিরাজ শিকদার প্রমুখের নামের পাশে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম এর নামও যুক্ত হলো ।
হ্যাঁ যা বলছিলাম , এই সব বিপ্লবীদের শারীরিক হত্যাকান্ডে যারা উল্লাসিত হয়েছিল তাদের মত হাদারামরা বোঝেনি তাতে আসলে বেড়ে গেছে বিপ্লবেরই স্পর্ধা ।
একটু খেয়াল করে দেখুন তো, তিতুমির, ক্ষুদিরাম, সুর্যসেন, আসাদ, লে. ক. মোয়াজ্জেম , সিরাজ শিকদার , তাহের - আজও তাদের উপস্থিতি টের পান কিনা ? স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে-কানসাটে -ফুলবাড়ীতে-ভবদহে ।
অবশ্য, পরবর্তীতে তাহেরের সহযাত্রীদের -
কেউ হয়েছেন জিয়ার জাতীয়তাবাদী থিসিস প্রণেতা
কেউ জাসদ থেকে ইস্থফা দিয়ে বর্তমানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রধান সওদাগর
কেউ হয়েছেন এরশাদের সংসদের গৃহপালিত নেতা
কেউ হয়েছেন খালেদা সরকারের থিফ অফ বাগদাদ
আর অধিকাংশই পুজির নষ্ট সংগমের বেশ্যা ।
এখানেই জন্ম নেয় নিরাশার বীজ
কিন্তু তারপরও আমি আশাবাদী কারণ
বিপ্লবের পতাকা তাহের ।
তাহের মরেনি
তাহেররা কখনো মরে না ।
আমার সাথে তাহেরের দেখা হয় কানসাটে -ফুলবাড়িতে- ভবদহে- নারায়ণগঞ্জে-সাভারে-শাহবাগে-পরিবাগে কিংবা অন্য কোথাও ।
(প্রথম প্রকাশ , স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা // নুরুজ্জামান মানিক ,শুদ্ধস্বর ,একুশে বইমেলা ২০০৯ )