somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপ্ত অক্ষমতা : শিশু ও আমরা -১

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের শিশু মানে আগামীর আমরা। পরিবার-সমাজ-জাতি-দেশ-পৃথিবীর ভবিষ্যত। শিশুর যথাযথ বিকাশের গুরুত্ব নতুন করে বোঝানোর কিছু নেই। সামহোয়্যারইন ব্লগে এবিষয়ে সহ-ব্লগারদের কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে লিখেছেন। সেগুলোর উপজীব্য বিষয় এবং মন্তব্যকারী ব্লগারদের পাঠপ্রতিক্রিয়া মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করার ব্যক্তিগত একটি কারণ আমার আছে। তারই ভিত্তিতে, এবং কিছু অধ্যয়ন ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার আলোকে এই সিরিজ লেখার দু:সাহস করছি। এতে ব্লগ কর্তৃপক্ষের, সুনির্দিষ্টভাবে জানা'র, অনুপ্রেরণা অনস্বীকার্য। সম্মানিত পাঠকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ থাকবে সিরিজটি পড়ার পাশাপাশি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করার; এবং কিছু জেনে থাকলে সুযোগমতো তা অন্যদের জানানোর। অল্প সময়ে সহব্লগারদের অনেকেই নিয়মিতভাবে আমার পোস্টগুলো পড়ে ও মন্তব্য করে ধন্য করেছেন; এবারও তারা সঙ্গে থাকবেন, এ আশা রাখছি।


আচরণগত অস্বাভাবিকতা

আমরা যাদের সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে চিনি, দিনের শুরুতে ঘুম ভাঙা থেকে দিনশেষে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত তাদের সকলের দৈনন্দিন আচরণ কি অভিন্ন? কখনোই না। কারণ মন-মানসিকতা, চিন্তাশক্তি, সাড়াপ্রবণতা (রিফ্লেক্স), যুক্তিবুদ্ধির স্তর-- ব্যক্তিভেদে এসবের হেরফের ঘটে। তাই আমাদের activity ও behaviour এর প্রকাশেও কিছুটা ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক।

খুব সাধারণ কিছু উদাহরণ দিই। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন ছবি তুলতে গেলে অস্বস্তিতে ভোগেন, স্বাভাবিক মুখভঙ্গিটা ধরে রাখতে কষ্ট হয়, যাদেরকে আমরা বলি ক্যামেরা-শাই। অ্যাকাডেমিক ও পেশাগতভাবে অত্যন্ত সফল কারো হয়তো পাবলিক স্পিকিঙে গলা বুজে আসে, হাত-পা কাঁপে। আমাদের শিক্ষকদেরও কেউ কেউ আছেন বহু বছর শিক্ষকতা করার পরও ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে লেকচার দিতে পারেননা। ভীড়ের মধ্যে পূর্ব-পরিচিত কাউকে দেখলে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করলেও পারেন না কেউ কেউ। অদ্ভুত কিছু ফোবিয়া আছে কারো কারো। ছোটবেলার স্কুলজীবনের কথা ভাবুন তো। স্পোর্টসের মাঠে হুইসেল শোনার সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসঙ্গে ছিটকে বেরুতে পারেনা, দৌড়ের শুরুতেই কেউ কেউ দেরী করে ফেলে। ক্লাসে সবার পেন্সিল বা কলম ধরার ভঙ্গি একরকম না; অল্পতেই হাত ব্যথা হয়ে যায় কারো কারো, তরতরিয়ে পাতার পর পাতা লিখতে পারেনা সবাই। দৈনন্দিন জীবনে খুঁটিনাটি সূক্ষ্ম কাজে সবার হাত-আঙ্গুল সমান পারদর্শী না; ছোট সরু স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে স্ক্রু বসানো বা খোলার কাজটি একাধিকবার চেষ্টার পর তবেই ঠিকভাবে করতে পারেন, এমন আছেন অনেকেই। সহজ কোন কথা সহজে প্রকাশ করতে বা বোঝাতে ঠিক স্বচ্ছন্দ নন কেউ কেউ। পরিস্থিতি অনুযায়ী আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খান কেউ কেউ। এইসব ছোটখাট অসঙ্গতি বা স্বল্পমাত্রার অক্ষমতাকে সাধারণ ধারণায় আমরা স্বাভাবিক বলেই ধরেই নিই। অর্থাৎ পরম স্বাভাবিক আচরণ থেকে কিছুটা বিচ্যুতি গ্রহণযোগ্য।

কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন এইসব অস্বাভাবিকতার এক বা একাধিক রূপ একই ব্যক্তির মধ্যে গ্রহণযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়ে প্রকটভাবে দেখা যায়। মনে রাখতে হবে, আলোচ্যক্ষেত্রে স্বাভাবিক কার্যক্রম/আচরণ থেকে উচ্চমাত্রার বিচ্যুতির জন্য দায়ী disability বা অক্ষমতাগুলো প্রকাশ্য নয়। যেমন, দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও আই কন্ট্যাক্টে অক্ষমতা। কিংবা বাকশক্তি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও কোন কথা স্বচ্ছন্দে বোঝাতে না পারা। এই hidden disability কোন সুনির্দিষ্ট অক্ষমতা নয়; এর সীমা বা আওতা (range) বিশাল; যা বোঝাতে ASD (Autism Spectrum Disorder) টার্মটি ব্যবহার করা হয়।


পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪

পরের পর্বের আলোচ্য বিষয়: অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:২০
৮৫টি মন্তব্য ৭৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×