somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদৃশ্য

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যে একা থাকতে পছন্দ করি আজ সেটা আরও ভালোভাবে বুঝলাম। সুজায়া এসেছে। আসলে সে রাতে থেকে যায়। মনে করলাম সময় ভালই কাটবে। হলো তার উল্টো। কিছু গতানুগতিক কথা , গল্প, আড্ডা, অন্য কারো চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার, কার কি করা ঠিক হইছে, কার কি করা ঠিক হয় নাই এ সমস্ত হাবিজাবি বিরক্তিকর কথা। কথা বলতে বলতে হঠাৎ চুপ হয়ে যাই। কি ভাবি নিজেও জানি না। মাঝে মাঝে ভয় পাই। কিসের ভয়? তাও জানি না। কষে থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে করে নিজেকে।

এক সময় ছিল যখন বাসায় বন্ধুরা আসলে সময় অভাবিত ভাবে ভালো কাটতো । আজ এতো মনমরা কাটে কেন? কেনো মনে হয় না আমি ভালো আছি? কেনো মনে হয় না বন্ধুর সাথে আছি সময় তো ভালো কাটবে? কেনো মনে হয়, কেউ না থাকলেই ভালো হতো?

উদাস হয়ে রুমে গুম হয়ে বসে থাকা কেনো অধিক ভালো মনে হয়? অহেতুক টিভি তে চ্যানেল এর পর চ্যানেল পালটানো কেনো একটা করণীও কাজ মনে হয়? পড়া বই বারবার পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ খুঁজে পাই না কেনো ? ২৪ ঘণ্টার প্রতিটি সেকেন্ড কেনো একটা মানুষের আহ্বানের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি?

সুজায়া ফেসবুকে মগ্ন হয়ে আছে। হাসি আসলো। একে আমিই ফেসবুক ব্যবহার করা শিখাই। আজ আমারটা মৃত, ওরটা জীবিত। আনিসুল হকের একটা লেখার কথা মনে পড়লো, সশরীরে বন্ধু সাথে থাকলেও ভার্চুয়াল বন্ধুদের প্রয়োজনীয়তা বেশি।
সুজায়ার জীবনে কখনো কোনো কষ্ট দেখলাম না। অনেক মানুষ তার জীবনে আসে যায়। কারো যাওয়া আসা তাকে বিন্দু মাত্রও বিচলিত করে না। কারো জন্য সে অস্থির হয় না। পৃথিবীর সব অস্থিরতা কি শুধু আমার জন্যই?

ফেসবুক থেকে চোখ সরিয়ে সুজায়া জিজ্ঞেস করলো...
“একটা পরামর্শ দে তো। ভাবছি সৈকতকে ছেড়ে দিবো, অনুপমকে বিয়ে করবো”।
“কেনো ? সৈকতকে ছাড়বি কেন? কি করছে ও?”
“কিছু করে নাই, ওর চাকরিতে ভালো না, অনুপমের চাকরিটা ভালো। বিয়ে করলে ওকেই করা উচিত”।
“চাকরি ?? চাকরি দিয়ে ভালোবাসা হয়? প্রেম করার আগে জানতি না? এখন ওর চেয়ে ভালো চাকরিআলা পাইলি বলে কি ওকে ছেড়ে দিতে হবে?”
“আরে... বিয়ে করতে হবে তো। অনুপম যেহেতু ভালো ইনকাম করে তাই ওকেই তো করা উচিত, তাই না”?
“ সৈকতকে কি বলে ছাড়বি?”
সেটাই তো বুঝতে পারছি না, ওর কোন দোষও খুঁজে পাচ্ছি না, যা বলি তাই শুনে। কী করবো বল না”
“তোর কার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে?
‘আরে...... ধুর... অনুপমের সাথে তো এখনো দেখাই হয় নাই, কিভাবে তুলনা করবো’?
“এই মুহূর্তে কে তোর সাথে থাকলে তোর ভালো লাগতো?”
“উম... বুঝতে পারছি না। অনুপমকে দেখার ইচ্ছে আছে। ওকে শুধু ফেসবুকেই দেখেছি। সরাসরি না দেখলে কেমনে বুঝবো দেখতে কেমন”
‘তুই কি চাস সৈকত আজ কালের মধ্যে তোর সাথে দেখা করুক”
“হুম চাই”

আমার চোখ গেলো ওর ফেসবুকের হোম পেজের দিকে। অনুপমের চেট বক্স ওপেন। কিন্তু সৈকতকে অফলাইন করে রেখেছে।

আমি আর কিছু বললাম না। কেমন জানি হতাশ লাগছে। জানালার দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখতে চাচ্ছি। কিন্তু সামনে এতো এতো আকাশ ঢাকা ইট কাঠের খাঁচা, যে আকাশটাকেই বড় করুণ মনে হচ্ছে। নিজেকে সে মেলে ধরতে পারছে না। দেখাতে পারছে না তাঁর বিশালত্ব, দেখাতে পারছে না তার অসীম সীমা। তার চেয়ে যে এখন এই দালান গুলোই বিশাল, অসীম...

“ওই বল না কি করবো? কিভাবে সৈকতকে মানা করি”
“মানা করিস না”
“ মানে? ওর চাকরি ভালো না তো”
“ চাকরি দিয়ে ভালোবাসা হয় না”

আমি বারান্দায় চলে আসলাম। কিছু যেন খুঁজছি। কিন্তু জানি না কি। আমি যদি সৈকত হতাম , কি করতাম আমি? যদি আমার প্রিয় মানুষটি আমাকে কোন কারণ ছাড়া ছেড়ে দিয়ে চলে যেতো , তাহলে কী হতো তখন? সহ্য করতাম কীভাবে?

আমার জীবনটা কি সৈকতের মতো? নাকি আমার মতো জীবন হবে সৈকতের? আমার মতই হাহাকারে পূর্ণ উদাস জীবন হবে তার ?
হয়তো কিছুই হবে না। হয়তো কিছুদিন মন খারাপ থাকবে তারপর আবার আগের মতো হবে সব। তার হয়তো মনেও থাকবে না সুজায়া নামে কেউ ছিল তার জীবনে।

আচ্ছা, আমিও কি চাইলে এমন হতে পারতাম না? আমি কেনো এক সপ্তাহ পরে ভুলে গেলাম না যে ও কখনো ছিল।
অথবা সুজায়ার সাথে কি ওর সাদৃশ্য আছে? ও যেমন আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর মনে করে নি আমি কেমন কষ্ট পাবো, তেমন কি সুজায়াও সৈকতকে নিয়ে ভাববে ?

না, ও জানে আমি কেমন কষ্ট পাবো, পাচ্ছি। আমাকে কষ্ট দেওয়া তাঁর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সে আনন্দ পায় আমাকে আঘাত করতে। হয়তো আমাকে আঘাত দিয়ে সে যে সুখ পায় তা অন্য কারো সাথে সঙ্গম করেও পায় না। হয়তো আমাকে আঘাত করার মধ্যে এক ধরণের সম্পর্ক আছে । এমন সম্পর্কের নাম নেই। নাম আমি দিতেও চাই না। আমি চাই আমার জীবনে কোন না কোন ভাবে সে যুক্ত থাক।

আমি কি আসলে চাই সে যুক্ত থাকুক আমার জীবনে? আসলেই কি আমি উদগ্রীব হয়ে থাকি তাঁর জন্য ? উদগ্রীব না হলে বার বার মোবাইলটি চেক করি কেন? কেন নামটি ভেসে উঠলে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়? কেন মোবাইলটি কেঁপে উঠলেই মনে করি হয়তো সে হবে?

তাহলে আবার অন্য চিন্তা করি কেন? এও কেনো ভাবি, কল করা মানে তো কানে এসিড ঢেলে দেওয়া, যদি ২০ মিনিট কথা হয় তবে তার মধ্যে ১৫ মিনিট হবে এসিডের বর্ষণ। মধু যে সে ঢালে না তাও কিন্তু না। ৫ মিনিট সে মধুই ঢালে।

বুঝতে পারি না, আমি কিসের আকর্ষণ বেশি বোধ করি? ৫ মিনিটের মধু কি আমার জন্য বেশি আকর্ষণীয়, নাকি ১৫ মিনিটের এসিড বর্ষণ না হোক সেই চাওয়াটা বেশি আকর্ষণীয়?

যেমন আজ সে কল করে নি। আমি এতে দু ধরণের চিন্তা করছি। “ কল না করাই ভালো, কল করেই তো শুনতে হবে অপ্রিয় ভাষণ”। আর শুনতে চাই না।

যদি এই চাই তবে বার বার কেন মোবাইল হাতে নিচ্ছি? কেন দূরে থাকলে কানটাকে খরগোশের মতো খাড়া করে রাখি, এই বুঝি বেজে উঠলো।

আমার পক্ষে যায়, এমন কোন চিন্তাকে আজ পর্যন্ত আমি প্রাধান্য দিতে পারলাম না। জানি , কল করলে আমি কষ্ট পাবো তাঁর তিক্ত কথা শুনে, কিন্তু আমি জানি এই চিন্তাকে আমি বেশি দিন ধরে রাখতে পারবো না। হয়তো সর্বোচ্চ ২ কি ৩ দিন। এর পর আমার হাত নিজে নিজেই টিপতে থাকবে তাঁর নাম্বার।

হঠাৎ আইয়ুব বাচ্চুর “ আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি” গানটা বেজে উঠলো। সুজায়া ছেড়েছে। খুবই উপযুক্ত একটি গান আমার জন্য । অসম্ভব ভাবে উপযুক্ত.........
উচ্চস্বরে হাসতে ইচ্ছে করছে।

সামনের একটা জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সিগারেটের মনে হয়। এমন সময় একটা সিগারেট থাকলে কি ভালো হতো? ভিতরের দীর্ঘশ্বাস কি ধোঁয়া হয়ে বের করা যায়?

আমি সুজায়াকে নিয়ে সিগারেট কিনতে বের হতে চাইলাম। ভেতরে গিয়ে দেখি ও ফোনে কথা বলছে। বুঝলাম সৈকত। কিছু আর বলা হলো না। আমি শূন্যতা নিয়ে একবার আমার মোবাইলের দিকে তাকালাম। যেটা জ্বলে উঠলো না। আমি আরো শূন্যতা অনুভব করলাম। নিঃসঙ্গ আমি আবার বারান্দায় গিয়ে ধোঁয়া দেখতে থাকলাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×