somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৌধুরী সাহেবের ভৌতিক জীপগাড়ি। (একটি ভুতের গল্প । শেষের অংশ)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রথম অংশ পড়তে

তাকিয়ে দেখি জিপের ভেতর কোন ড্রাইভার নেই। বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। মুখ শুকিয়ে গেল আমার। আমার ঘাবড়ে যাওয়া বেশ উপভোগ করছে মেহজাবীন। হিঃহিঃ করে হেসে উঠল সে। কি হলো যান, দরজায় কড়া নাড়ুন।

হাওয়ায় মিলিয়ে গেল যেন মেহজাবীন। হাসনে হেনার তীব্র গন্ধটাও মিলিয়ে গেল। কাঁপা হাতে দ্রুত দরজায় কড়া নাড়তে লাগলাম। আমার শরীরও কাঁপতে ছিল। পেছনে তাকাতে ভয় পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি আর, তাই বেশ অস্বস্তিতে ছিলাম।

কি জানি হয়ত মেহজাবীন আমাকে শহরের মানুষ পেয়ে ভড়কে দিচ্ছে। ওর রহস্যময়ী আচরন আমাকে দ্বিধায় ফেলে দিল। কেউ কি নেই ঘরে? দরজায় পাল্লায় ক্রমাগত আঘাত করছি, কোন সাড়া নেই?
হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পায়ের উপর কেউ একজন হাত রাখছে। বরফের মত ঠান্ডা হাত। ভয়ে শিড়দারা শক্ত হয়ে যাচ্ছিল। চিৎকার করতে চাইলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হলোনা। হার্টফেল করার পূর্ব মুর্হূতে বিকট শব্দে সামনের দরজা খুলে গেল। মুখের উপর হারিকেন উচু করে ধরলো কেউ একজন। হঠাৎ চোখে আলো পড়ায় কিছুই দেখতে পাচ্ছিলামনা। কোনমতে বললাম, আমি শফিক আহমেদ ঢাকা থেকে আসছি। এটা কি চৌধুরী বাড়ি?
এবার হারিকেন নিচে নামলো।
চৌধুরী সাহেব বললেন,
Ñ আহারে বাবা, আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে না? কি করবো যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছিল। আসেন আসেন ঘরে আসুন।
আমি বিব্রত কন্ঠে বললাম, দয়া করে আমার পায়ের দিক আলো ফেলুন, কি যেন আমার পায়ে। আলো ফেলতেই দেখি একটি বড়সড় আকারের ব্যাঙ আমার পায়ের উপর বসে আছে।
ঘরে ঢুকে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হল।
জমিদার বাড়ি এতদিন সিনেমা আর নাটকে দেখেছিলাম কিন্তু বাস্তবে যে তা আরো বেশি আর্কষনীয় হয় তা বুঝলাম। দেয়ালে দু’নলা বন্দুক ঝুলানো। দুটো তলোয়ারও সাজিয়ে রাখা হয়েছে। হরিনের মাথা আর বাঘের চামড়াও ঝুলানো আছে। আসবাব পত্রগুলি আভিজাত্যর ছাপ বয়ে বেড়াচ্ছে।
খাবার টেবিলে আরেক জন বৃদ্ধ ভৃত্যকে পেলাম। চৌধুরী সাহেবও বসলেন আমার সাথে কিন্তু তার দু’মেয়ের কাউকেই ঘরে দেখলাম না। মনটার ভেতর খুব টান অনুভব করছিলাম। মেহজাবীন একবারের জন্য উকি দিলেও পারতো। ধুর মেয়েটা যে কিনা!
খাওয় দাওয়া শেষে কিছুক্ষন গল্প করলাম চৌধুরী সাহেবের সাথে। তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে তার বাবার জমিদারীর সময়ের নানা ঘটনা বলতে লাগলেন। তিনি জানালেন দেয়ালে ঝুলানো বাঘটাকে তিনি নিজে শিকার করেছেন। তার শিকারের গল্পও শুনলাম। একবার তিনি অল্পের জন্য বাঘের হাত থেকে বেচে গিয়ে ছিলেন সে কথাও জানলেন তিনি। তার গল্প শুনতে বেশ লাগতে ছিলেন। কিন্তু রাত অনেক হওয়ায় তা থামাতে হল। পরিস্কার বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ক্লান্ত ছিলাম বলে খুব সহজেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো পরদিন সকাল ৯টায়।
কক্ষের সামনের বারান্দায় দাড়ালাম। সামনের সুন্দর ফুলের বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। অনেক ফুল ফুটেছে। বাতাশে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। নানা জাতের অসংখ্য ফুলের গাছ। চারপাশের সবুজ গাছ পালা আর পাখির কিচির মিচির শব্দ ভীষণ ভাল লাগছিল। মুগ্ধ হয়ে অপরুপ প্রকৃতি দেখতে ছিলাম।
হঠাৎ কেউ একজন আমার হাত ধরলো। চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা নয় দশ বছরের একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কে তুমি? প্রশ্ন করতেই হাত ছেড়ে দৌড়ে পালালো মেয়েটি। আমি তার দৌড়ে যাওয়া দেখলাম। হেটে সামনে যেতেই গতরাতের বৃদ্ধ ভৃত্যটার সাথে দেখা হল। বয়স ৭০বছর হবে। ভাল করে দিনের আলোতে তার দিকে তাকালাম সে কাস্তে হাতে বাগানের আগাছা পরিস্কার করছে। বাগান ভরা ফুল, লাল নীল সবুজ ফুল। একসাথে এত ফুল দেখিনি কখনো। বৃদ্ধ একমনে কাজ করতে ছিল, কাছে গিয়ে বললাম ঐ মেয়েটি কে?
সে চোখ তুলে তাকালো, তারপর বললো, ওর নাম ময়না। আমার নাতি, বোবা কথা বলতে পারেনা। ভয় পায় ও সবাইরে ভয় পায়।
আমি প্রশ্ন করি এই বাগান কে গড়ে তুলে ছিল? সে দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বললো মেহজাবীন। বৃদ্ধর কথাটা শুনে ভাল লাগলো। তারমানে মেহজাবীন ফুল খুব পছন্দ করে, না?
উত্তর না পেয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি বৃদ্ধ নেই। আমি সামনের দিকে এগুতে থাকি। বিশাল বড় বাড়িটার চারদিকে সবুজের সমরোহ আমাকে মুগ্ধ করে। এমন বাড়িতে বিয়ে হলে ভালই হবে। আজ নিশ্চয় চৌধুরী সাহেবের কন্যাদ্বয়ের সাথে দেখা হবে। আচ্ছা মেহজাবীন কি আমাকে পছন্দ করেবে? কি জানি! নারী হৃদয়তো বড় বিচিত্র। তাছাড়া আমাকে তো কোন নারী কখনো সেভাবে চায়নি। হালকা টেনশনও ফিল করছিলাম।
কিছুদুর সামনে গিয়ে দেখলাম বাগানের পাশে সুন্দর সান বাধানো ঘাটের পুকুর। পুকুরে লাল রংয়ের শাপলা ফুল ফুটে আছে। আর স্বচ্ছজলের উপর মাছেরা হা করে জল খাচ্ছে! না, বোধহয় অক্সিজেন নিচ্ছে। তাকিয়ে ছিলাম মুগ্ধ নয়নে, হঠাৎ পেছন থেকে চৌধুরী সাহেবের কণ্ঠ‘ বাবা তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়ি খুজতেছি। চল নাস্তা খাবে।
হেসে বললাম পুকুরের মাছ দেখতে খুব ভাল লাগতে ছিল। অপূর্ব!
পরে এসে বড়শি দিয়ে না হয় মাছ ধরিও। আমি তাকে অনুসরন করে পিছন পিছন যাচ্ছিলাম। ডান দিকে ঘুরতেই টিনের চালের গ্যারেজের নিচে একটা জীপ গাড়ি দেখে চমকে উঠলাম। থমকে দাড়িয়ে জিপটাকে ভাল করে পর্যাবেক্ষন করতে লাগলাম। বিস্মিত হলাম যখন দেখলাম গাড়িটার দুটো চাকা খোলা, ব্যাকডালা ভাঙা। একটা হেডলাইটও নেই। মরিচায় জর্জরিত বডি। সিটের উপর পাখির মল মুত্র। মনেহয় গত দুই এক বছর কেউ এটা ছুয়েও দেখেনি। গতরাতে কি আমি এই গাড়িতে চড়ে এসেছিলাম?
চৌধুরী সাহেব পিছন ফিরে বললো কি হলো? কি দেখছো?
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম আপনার এরকম গাড়ি কয়টা?
একটাইতো ছিল। এটা এ্যাকসিডেন্টের পর আর সারিনি। ও আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।
আমি আতংকিত হয়ে পড়লাম। গলা দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছিলনা বিস্ময়ে। কোনমতে বললাম মেহজাবীনতো কাল রাতে...!
এবার চৌধুরী সাহেবের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বিস্মিত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন তুমিও দেখেছো! দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। তার চোখে জ্বল টলমল করে।
সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, মেহজাবীন ছিল আমার বড় মেয়ে। খুব ভালবাসতাম ওরে আমরা। লেখা পড়ায় খুব ভাল ছিল। অসাধারণ ছিল ও। কিন্তু বেশি ভাল কিছু আল্লাহ পৃথিবীতে বেশি দিন রাখেন না। এই গাড়িটা ওর খুব প্রিয় ছিল। নিজে ডাইভিংও শিখেছিল। আজ থেকে ছয় বছর পূর্বের ঘটনা। সেদিন সন্ধায় ওর বান্ধবীর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে যখন ফিরতে ছিল তখন বাইরে ছিল আষাঢ়ের বৃষ্টি। রাস্তার অবস্থাও ভাল ছিলনা। একটা ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খালে পড়ে যায়। এ্যাকসিডেন্টে দু’জনই মারা যায়।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন চৌধুরী সাহেব। আমি নিবার্ক পাথরের মূর্তির মত তার দিকে তাকিয়ে থাকি। যন্ত্রনায় আমার গলার কাছে আটকে যায় আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারিনা। হৃদয় ভাঙার কষ্টযে এত কঠিন আমার জানা ছিলনা। অসহয় দৃষ্টি মেলে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
তুমি কাদছো কেন?
কাল তাহলে মেহজাবীন আমাকে কি করে ষ্টেশন হতে এ বাড়িতে নিয়ে এল?
কি বলছো তুমি! আঁতকে উঠে তিনি বিস্ফোরিত নয়নে তাকান আমার দিকে। আমি গত রাতের ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা তাকে বলি। সব শুনে নিশ্চুব হয়ে যায় চৌধুরী সাহেব। কিছুক্ষন পরে বলেন, তোমার মত এমন করে অনেকেই তাকে দেখেছে। তবে আমি তা বিশ্বাস করিনি। আজ করছি। প্রতি বছর আষাঢ় মাস এলেই নাকি ওরে জীপ গাড়ি নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়।
চোখ মুছে তিনি জীপ গাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলেন, আর মায়া করে লাভ নেই। অভিশপ্ত গাড়িটাকে বিক্রি করে দিতে হবে।
তাই ভাল হবে। মাথা নিচু করে তার পেছন হাটতে হাটতে বলি।

রচনা কাল
১৮.০৮.২০১১

৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×