somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কতটুকু আপনি আসলেই আপনি?

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি,আমি,সবার দেহ তো কোষ দিয়েই তৈরি। কখনও ভেবে দেখেছেন আপনি নিজে আসলে কতটুকু 'আপনি' ? দেহের কতটুকু সরিয়ে নিলে আপনি আর আপনি থাকবেন না ? দেহের ভৌতভিত্তি হল কোষ। কোষ এমন একটি জীবন্ত সত্তা যার কোন চেতনা,ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য নাই। আরো সহজ করে বললে জৈবিক যন্ত্র। কিন্তু এই কোষগুলোই দেহের মেজর অর্গানগুলি গঠন করে আপনাকে সচল রাখছে।কিছু কোষকে উপযুক্ত পরিবেশে রেখে দিলে তারা ঠিকই বেঁচে থাকে। তাহলে দাঁড়াল যে আপনার কোষ আপনাকে ছাড়া থাকতে পারলেও আপনি কিন্তু আপনার কোষদের ছাড়া থাকতে পারবেন না :D। তাহলে আপনি আর আপনার কোষগুলির মধ্যকার সীমারেখাটি কোথায়?

যদি অর্গান ডোনেট করেন তাহলে আপনার বিলিয়নসংখ্যক কোষ অন্যের দেহে বেঁচে থাকছে।তাহলে কি আপনার ডোনেটকৃত অর্গান আর আপনার নয় ? নাকি অন্যের দেহে আপনার একটি অংশ বেঁচে আছে ? নাকি আপনার অংশটুকু তার হয়ে গেল ? একটা এক্সপেরিমেন্ট কল্পনা করেন যেখানে আপনি র‍্যানডম কারো সাথে কোষ বদলে নিচ্ছেন। one cell at a time। এভাবে চলতে থাকলে কি একটা সময় আপনি সেই 'র‍্যানডম' ব্যক্তিটিতে পরিণত হবেন ? নাকি এভাবে চলতেই থাকবে ?

চলেন ব্যাপারটি আরো কমপ্লিকেটেড করি :D। যদি ধরি এই পর্যন্ত পড়ে আসতে আপনার ১ মিনিট সময় লেগেছে তাহলে এক মধ্যেই ১২ কোটির বেশি কোষ অলরেডি মারা গেছে এবং প্রতিস্থাপিত হয়েছে। একেক অংশের কোষের লাইফটাইম একেকরকম বলে ৭ বছর সময়কালে আপনার বেশিরভাগ কোষ অন্তত একবার প্রতিস্থাপিত হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন হল ৭ বছর আগের আপনি আর এখন এই ব্লগ যেই 'আপনি' পড়ছেন তারা কি এক ? ;)

আবার অনেক সময় দেহের কোষ সময়মত মারা যেতে চায় না, আমরা তাদের বলি ক্যান্সার। তারা বায়োলজিক্যাল চুক্তি ভঙ্গ করে নিজেদের মত করে থাকতে চায়, এক কথায় বলতে গেলে অমর হয়ে থাকতে চায়। ক্যান্সার দেহেরই একটা অংশ যে নিজের স্বার্থকে বাকি সবার স্বার্থের চেয়ে প্রাধান্য দেয়। তর্ক করতে গেলে বলা যায় ক্যান্সার আসলে আমাদের ভিতরেই আলাদা একটি সত্তায় পরিণত হয় যে মরতে চায় না, এই মরতে না চাওয়ার জন্য তাদের দায়ই করা কি আসলেই ঠিক ? আমরাওতো প্রতিনিয়ত সেই একই কাজ করছি না ?
ক্যান্সার সেলগুলিকে গবেষণার জন্য বাঁচিয়ে অত্যন্ত কষ্টকর।কয়েকদিনের বেশি বেঁচে না থাকার কারণে গবেষণা করা অনেক কঠিন হয়ে পরে ছিল।এখন এক ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর কথা বলি, হেনরিয়েটা ল্যাকস নামের একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ১৯৫১ সালে মারা যান।কিন্তু তার ক্যান্সার সেলগুলি ছিল একটু অন্যরকম, এগুলি মরতেই চাইত না। তার ক্যান্সার সেল নিয়েই হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে ক্যান্সার রিসার্চ হয়েছে। তখন থেকে এখন অবধি তার ক্যান্সার সেল ২০ টনের বেশি বায়োমাস তৈরি করেছে। মজার ব্যাপার হল তার সেই সেলগুলি এখনও জীবিত আছে। তাহলে ব্যাপারটি দাঁড়াল যে, একজনের অসংখ্য কোষ সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে আছে যে কিনা ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে মারা গেছেন। প্রশ্ন থেকেই যায় কতটুকু হেনরিয়েটা এই ক্যান্সার কোষগুলির ভিতরে আছে :D

তাহলে আপনাকে 'আপনি' হিসেবে সাব্যস্ত করছে কে ? নিশ্চয়ই DNA। আগে মনে করা হত প্রতিটা কোষের মধ্যেই হয়ত সেম DNA থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক রিসার্চে দেখা গেছে DNA সর্বদা মিউটেশন ও পরিবেশের প্রভাবে প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হচ্ছে। ব্রেনের কোষ নিউরনে এই ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটা নিউরনে এমন হাজারেরও বেশি মিউটেশন হয় যা তার আশেপাশের নিউরন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাহলে তো একরকম বলা যায় যে দেহের কোষগুলি DNA কে তাদের নিজেদের সম্পদ বানিয়ে রেখেছে। তাহলে আপনার DNA আসলে কতটুকু 'আপনি' ? আমাদের DNA এর ৮% এসেছে ভাইরাস থেকে যারা আমাদের পূর্বপুরুষদের আক্রান্ত করে ছিল পরে তাদের সাথেই মিশে গেছে। কোষের পাওয়ারহাউজ মাইটোকন্দ্রিয়া এক সময় ছিল ব্যাকটেরিয়া যে কিনা বর্তমান কোষের পূর্বপুরুষের সাথে মিশে গিয়েছিল। তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত DNA পর্যন্ত আছে !

তাহলে দর্শন ছাড়া হয়ত 'আমরা' কি তার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। মনে হয়, 'আমরা' কিছু জীব সত্তার সমষ্টি যাদের এককভাবে কোন চৈতন্য নেই কিন্তু সামগ্রিক ভাবে আছে এবং কিভাবে কিভাবে যেন নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। :D
( একান্ত ব্যক্তিগত মতামত, এই নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই :D )







সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×