somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথাও কেউ নেই!!!

২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিনি আর নেই-এই অনুভূতিটা আমার মধ্যে কাজ করতে কম হলেও তিনদিন লেগেছে। টিভি দেখার অভ্যাস নেই বছর দেড়েক হল। ফেসবুক আর খবরের কাগজের সুবাদে রোজ দেখছিলাম তিনি আর নেই। কিছু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক টানাপোড়েনে এই বিশাল অনুভূতি পুরোপুরি চাপা পড়ে গিয়েছিল। আক্রান্ত হলাম আজ সকালে। মেডিসিন ওয়ার্ডের ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভেতরের রুমে সবাই বসে দেখছিল তাঁর প্রতি জনসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন। আমিও গিয়ে দেখতে বসলাম। সবার সাথে যোগ দিলাম একাধারে বিশাল মন ও আশ্চর্য প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটাকে নিয়ে আলোচনায়। একটা পর্যায়ে দেখি আমার পাশে বসে থাকা বান্ধবীটা চোখের পানি মুছছে। একটা সময় টের পেলাম আমার চোখটাও ঝাপসা হয়ে আসছে। উঠে এলাম সবার মধ্যে থেকে এক দমবন্ধ অনুভূতি নিয়ে। তখন থেকেই এই মানুষটাকে নিয়ে কিছু একটা লেখার প্রচন্ড ইচ্ছে আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আমার এই ছোট্ট জীবনে বিশাল একটা স্থান আমার অজান্তেই দখল করে রেখেছেন যে মানুষটা,হুমায়ূন আহমেদ,তিনি আর নেই!
তাঁর সাথে আমার পরিচয় আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের(বাবা) হাত ধরেই। বইপাগল পরিবারের মেয়ে হওয়ার সুবাদে খুব পিচ্চিকালেই পরিচয় হয়েছিল এই মানুষটার সাথে। কমিকসের বই ফেলে কিশোর উপন্যাসে পদোন্নতি হয়েছিল তাঁর বই দিয়েই। সেই “বোতল ভূত” কতবার যে পড়েছিলাম তা হিসেব করা আজ বোকামী ছাড়া আর কিছুই না। বার বছর বয়সে জীবনের প্রথম উপন্যাস পড়লাম। সেটাও তাঁরই লেখা “নন্দিত নরকে। ঐ উপন্যাসের রাবেয়ার কথা মনে পড়লে আজও খারাপ লাগে। পলা নামের কুকুরটা আজও মনে গেঁথে আছে। সেই থেকে শুরু,আর থেমে থাকা হয়নি। বাবা কখনও তাঁর একটা ছোট গল্পের বই আনতেননা। আমার বুককেসে তাই ঠাঁই পেয়েছিল বিশাল বিশাল হুমায়ূন সমগ্র। একটু আগে বইগুলোর গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। যিনি বইগুলো কিনে দিয়েছিলেন তিনি চলে গেছেন অনেক আগেই। যিনি বইগুলো লিখেছিলেন তিনিও চলে গেলেন। আমার ভেতরের বইপাগল সত্তাটাও ঝিমিয়ে পড়েছে। ভয় হয় মৃত্যু না হয়ে যায়!
দুপুরের ফাটা রোদে কলেজ বাস থেকে নেমে যখন রিকশার জন্যে দাঁড়াই তখন কোত্থেকে এক চিলতে বাতাস কয়েক সেকেন্ডের জন্যে পুরো শরীর-মন যেন এক পলকে ঠান্ডা করে দিয়ে যায়। তখন মনে হয় আহা! এই বুঝি “লিলুয়া বাতাস”! এত সুন্দর উপমা আর কে দেবে? প্রকৃতিকে এত সুন্দর করে ভালবাসতে আমাদের আর কে শেখাবে? চরম কাঠখোট্টা এই বাস্তবতায় নির্মল হাসি কে এনে দেবে? বর্ষাদিনের অতি সাধারণ কদমফুলকে অসাধারণের পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন এই মানুষটিই। জ্যোৎস্নার পাগল করা মাতাল সৌন্দর্য আমরা আবিষ্কার করেছি তাঁর চোখ দিয়েই। কে জানত বাংলা ভাষায় জ্যোৎস্নাবিলাস,সমুদ্রবিলাস,দুঃখবিলাসের মত এত সুন্দর সুন্দর শব্দ আছে? জানলেও কয়টা মানুষ ব্যবহার করত? এই বিলাসগুলো আমাদের শিখিয়েছেন এই অসম্ভব কল্পনাবিলাসী মানুষটাই। তাঁর সবচে বড় সফলতা যে জায়গায় তা হল তিনি বাংলাদেশের অসংখ্য প্রচারমাধ্যমবিমুখ মানুষকে টিভির সামনে বসিয়েছিলেন। এর সবচে বড় উদাহরণ আমার মা। একজন হুমায়ূন আহমেদ না জন্মালে পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা দেখার আনন্দ থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম। আমার মত সাধারণ একটা মেয়ে নিজের মধ্যে অরূ,মৃন্ময়ী,লীলাবতীর মত এত অসাধারণ সব মেয়েকে খুঁজে বেড়াতনা! দারুচিনি দ্বীপে হারানোর স্বপ্ন দেখতনা! বয়ঃসন্ধিতে আশেপাশের ছেলেগুলোর মধ্যে একজন শুভ্রকে খুঁজে বেড়াতনা!
আর দশটা ছেলেমেয়ের কথা জানিনা,বাবা আর বোনের পরে আমার বইপড়ায় অদৃশ্য এই মানুষটির প্রেরণা অনেক বেশি ছিল। একুশে বইমেলায় কখনও যাওয়া হয়নি। আর হয়তো যাওয়াও হবেনা প্রাণহীন কোন বইমেলায়! চলে গিয়েও তিনি জয়ী। চিরতরুণ থেকে গেলেন কোটি কোটি মানুষের কাছে। সেই কৈশোরের আমি আজ যৌবন পেরিয়ে কাল বার্ধক্যে উপনীত হব। তবু তিনি চিরতরুণ থেকে যাবেন আমার কাছে,আমার উত্তরসূরীদের কাছে। কিংবদন্তী বুঝি একেই বলে! আজ রাতেও হয়তো বৃষ্টি হবে,অন্যান্য রাতের মতই এই গানটি শুনব,
“যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো,
চলে এসো এক বরষায়”
কিন্তু তিনি আর আসবেননা,তিনি আর নেই!
দূরে তাকিয়ে থাকি...কোথাও কেউ নেই!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৭
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×