somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কমিউনিটি চিটমেন্ট...

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রচন্ড ব্যস্ত শ্বাসরুদ্ধকর ডিউটির মাঝে অধীর হয়ে অপেক্ষা করছিলাম একটু অবকাশের। অবশেষে আজ শুরু হল কমিউনিটি প্লেসমেন্ট নামক এক প্রহসনের। যেহেতু নতুন ডাক্তার তাই সবকিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি উত্তেজনা ও আগ্রহ দুইটাই কাজ করছিল। সুবিধার জন্যে বেছে নিলাম বাড়ির পাশের উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স। বন্ধুদের কাছ থেকে মোটামুটি ধারণা নিলেও প্রথম দিনেই এত চমক অপেক্ষা করছিল আমার জন্যে কে জানত! প্রচন্ড বিরক্তিকর দীর্ঘ যাত্রার পর সব ফর্মালিটি শেষ করে বহির্বিভাগে বসলাম। রোগী দেখা শুরু করার আগেই হাতে ধরিয়ে দেয়া হল একটা ঔষধের লিস্ট। লিস্টের খুব সীমিত কিছু ঔষধের মাঝেও কয়েকটার পাশে দেখলাম ক্রস দেয়া মানে এই ঔষধগুলোরও সাপ্লাই নেই। বলে দেয়া হল একান্ত প্রয়োজনে বাইরে থেকে কেনার জন্যে ঔষধ দিতে। সেই আশায় রোগী দেখা শুরু করলাম আমি আর আমার বান্ধবী। প্রায় শ’দুয়েক রোগীর মধ্যে ৮০% জটিল সব অসুখ নিয়ে এসেছে এবং যাদের জন্যে সরকারী ঔষধের তালিকা পর্যাপ্ত নয়। বাইরের ঔষধ প্রেসক্রাইব করতে গিয়ে দেখলাম অধিকাংশ রোগীর সেই ঔষধ কেনার সামর্থ্য নেই। নিজের সমস্ত অর্জিত বিদ্যা তন্নতন্ন করে যথাসম্ভব স্বল্পদামের ঔষধ লেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু প্রচন্ড খারাপ লাগায় আক্রান্ত হলাম যখন দেখলাম ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে দেবার মত কোন সিরাপ ডিসপেন্সারীতে নেই। হতদরিদ্র বাবা-মাগুলোকে কী স্বান্তনা দেব! নিজেকে স্বান্তনা দেবার কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না! যতদূর জানি সরকারী হাসপাতালে অতি প্রয়োজনীয় ঔষধের পর্যাপ্ত যোগান থাকে। তবে এগুলো যায় কোথায়? যেখানে একজন রোগীকে ফুলডোজ ঔষধ দেবার কথা সেখানে কেন গুনে গুনে ঔষধ সাপ্লাই দেয়া হয়? যে মানুষগুলো ফ্রী চিকিৎসার আশায় সরকারী হাসপাতালে এসে ধরণা দেয়, যাদের টাকা খরচ করে ঔষধ কেনার কোন সামর্থ্য নেই তাদের কেন নাম কা ওয়াস্তে কিছু ঔষধ হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়? Multi Drug Resistance কেসগুলোতে আমরা সব দোষ রোগীর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছি অথচ আমরা নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিকের মত ঔষধগুলো নামেমাত্র কয়েকটা রোগীর হাতে তুলে দিচ্ছি যার সেই সামর্থ্য নেই কোর্স পুরো করার। আমাদের হাতেই তৈরি হচ্ছে এসব Multi Drug Resistance!
আমি খুব নীতিবাগীশ কোন ডাক্তার নই, খুব সচেতন কোন নাগরিক নই। আজ প্রথম দিন বলেই এতটা ধাক্কা খেলাম। দ্বিতীয় দিনে খারাপ লাগা নিয়েই চিরায়ত নিয়মেই ঔষধ লিখে যাব। তার দুইদিন পরে এই খারাপ লাগাটাও চলে যাবে। এভাবেই শেষ হয়ে যাবে আমার কমিউনিটি ট্রিটমেন্ট(চিটমেন্ট)! শহরে ফিরে আধুনিক প্রাইভেট হাসপাতালের ওয়ার্ডে বসে মানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী ঔষধ প্রেসক্রাইব করে যাব। আমার সামর্থ্যবান রোগীরাও খুশি, ঔষধ কোম্পানীওয়ালারাও খুশি। একসময় ভুলেই যাব কোন এক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু মানুষের দুরবস্থা দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম! ৩৩তম বিসিএস প্রিলিতে টিকে যাওয়ার দরুণ পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবার মাথায় সরকারী চাকরী সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসেছে। লিখিত পরীক্ষার আগেই মারাত্মক হতাশ হলাম সরকারী চাকরীতে এমন দুরবস্থা ও বিবেকের অবনতি দেখে। যে দেশে সিভিল সার্জনের অফিসের কেরানী থেকে শুরু করে উপরওয়ালা পর্যন্ত ঘুষের রাজত্ব, যেখানে চাকরী পাওয়া থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ ও পরিবর্তন সবক্ষেত্রে ঘুষ আর রাজনৈতিক কলকাঠি অত্যাবশ্যকীয় সেখানে সরকারী হাসপাতালে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ঔষধের যোগান থাকাটাই অবাস্তব! এইসব টাকাখেকোদের ভীড়ে সামান্য দিনমজুরে, হতদরিদ্র কৃষক আর তাদের পরিবারের চিকিৎসা নিশ্চিত করাই দুরূহ, সুচিকিৎসা তো বহুত দূর কি বাত! বছর চল্লিশেক আগে ভাল চিকিৎসার অভাবে আমার দাদী খুব অল্পবয়সে মারা যান। বাবা সবসময় বলতেন ডাক্তার হয়ে দাদীর নামে একটা হাসপাতাল দিতে যেখানে ঐ অঞ্চলের সব দরিদ্র মানুষজন চিকিৎসা পাবে বিনামূল্যে। হায়! আমার বাবা যদি আজ দেখতেন চল্লিশ বছর পরেও এইসব মানুষের ভাগ্য এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে! অন্ধকার আঁতুড় ঘরে দাইয়ের হাতে এদের জন্ম, অসুখের সাথেই এদের বসবাস এবং বিনা চিকিৎসাতেই এদের মৃত্যু। সরকারের জরিপেই শুধু বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি হয় কিন্তু জানিনা এসব জরিপ আসলে কোন জনগোষ্ঠীর উপর চালানো হয়! কোন উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র না এপোলো হাসপাতালে!
আজ বুঝতে পারলাম মুগ্ধ ভাইয়ার মত মানুষ কেন সরকারী চাকরী পেয়েও ছেড়ে দিয়েছিল! কেন বারবার বলত এইসব আমাদের জন্যে না! স্বচ্ছ চিন্তাধারার কোন মানুষ কেন আজ সরকারী চাকরীর পেছনে ঘুরেনা! কপালগুণে(!) চাকরী হয়ে গেলেও কেনইবা ছেড়ে দেয়! কারণ একটাই, তারা মেনে নিতে পারেনা মেধার ধর্ষণ আর বিবেকের আত্মবিসর্জন!
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×