ঘটনা-১: মিসেস সফুরা বেগম, ৩৫ বছরের ছোটখাটো মহিলা কানাইঘাটের এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকেন। সাত বছরের বিবাহিত জীবনে চারটি সন্তানের মা হলেও কোন সন্তানই ছয় মাসের বেশি বাঁচেনি। এর মধ্যে তার প্রথম স্বামী মারা গেছেন বছরখানেক হল। তারপর দেবরের সাথে বিয়ে হয়েছে চার মাস আগে। এখন তিনি প্রত্যাশিত গর্ভধারণ করতে পারছেন না বলেই আমার কাছে আসা। প্রশ্ন করে জানতে পারলাম তার সবগুলো বাচ্চাই শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা গেছে। প্রতিটি বাচ্চাই জন্মের সময় প্রসবকালীন জটিলতা (Obstructed labour & post partum haemorrhage) ছিল। কোন বাচ্চাই জন্মের সাথে সাথে কাঁদেনি (Perinatal asphyxia)। পরবর্তীতে বাচ্চাগুলো সেপসিস ও নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হলে কিছুদিন ফার্মেসীতে ডাক্তার (?) দেখিয়ে ঔষধ খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে নিতে নিতেই বাচ্চা মারা যায়। আমার তার কাছে প্রশ্ন ছিল বাচ্চা ডেলিভারির সময় সে কেন হাসপাতালে যায়নি? তার প্রথম বাচ্চার মৃত্যুর পরও পরবর্তী তিনটি বাচ্চার জন্মের সময় সে কেন হাসপাতালে ডেলিভারি করায়নি? বাচ্চাগুলো নিউমোনিয়া বা সেপটিসেমিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে সে কেন হাসপাতালে নিয়ে যায়নি? এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই। শুধু তার কাছে কেন আমাদের দেশের কোন মানুষের কাছেই নেই। তারা শুধু জানে একমাত্র চিকিৎসকের অবহেলাতেই শিশু তথা রোগী মারা যায়।
ঘটনা-২: আমার বাসার পাশের মসজিদের এক খাদেমের বোনের বাচ্চা হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। উনার বাড়ি জকিগঞ্জে এবং বাচ্চা যথারীতি বাড়িতে ডেলিভারি করানো হয়েছিল। প্রসবকালীন জটিলতা Obstructed labour & PPH) ছিল এক্ষেত্রেও এবং উনি তাকে আমার কাছে নিয়েও এসেছিলেন। কিছুদিন আগে এক ছুটির দিনে সকাল ১১টায় সেই খাদেম আমার কাছে এলেন যে আগের রাতে ১২টার সময় তার বোনের ঘরে আরেকটা সন্তান হয়েছে। যেহেতু তার পূর্বের দুইটি সন্তানই জন্মের কয়েক মাসের মধ্যে মারা গেছে সেক্ষেত্রে তারা এই নবজাতককে মায়ের দুধ খেতে দিচ্ছেননা। তিনি আমার কাছ থেকে বিকল্প কোন দুধের নাম জেনে নিতে এসেছেন। এধরণের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি কয়েক সেকেন্ড কিছু বলার মত খুঁজে পাইনা। আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর জানতে পারলাম তার বোনের আগের বাচ্চাগুলোর কোনটিই জন্মের পর কাঁদেনি (Perinatal asphyxia)। তারপরও তারা কোনবারই হাসপাতালে ডেলিভারির চেষ্টা করেননি। বাচ্চাগুলো অনেকদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর তারা হাসপাতালে নিয়ে যান এবং বাচ্চাগুলো মারা যায়। সৌভাগ্যবশত এই বাচ্চাটি জন্মের পরে কেঁদেছে। কিন্তু রাত ১২টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত যে বাচ্চাকে তারা মায়ের দুধ না খাইয়ে রেখেছেন সেই বাচ্চার ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক বটে। এবারেও আমার প্রশ্ন ছিল কেন তারা হাসপাতালে ডেলিভারি করাননি? যেখানে একটা পূর্ণবয়স্ক মানুষ ১১ ঘন্টা না খেয়ে থাকলে অচেতন হয়ে পড়ে সেখানে তারা কি বুঝে একটা নবজাতক শিশুকে এতক্ষণ মায়ের বুকের দুধ না খাইয়ে রেখেছেন? আমি জানি এই প্রশ্নগুলোরও কোন উত্তর নেই।
আমার অল্পদিনের ক্যারিয়ারে এমন ঘটনার নজির আমার কাছে কম নয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে গ্রামের মহিলারা হাসপাতালে ডেলিভারি করায়না। যে কারণে প্রসবকালীন জটিলতাগুলো অধিকহারে বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে বাচ্চাগুলো সেপসিস বা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়। গ্রাম্য কোয়াকের কাছে চিকিৎসা শেষে যে পর্যায়ে তারা হাসপাতালে বাচ্চাকে নিয়ে আসে তাতে আসলেই আর কিছু করার থাকেনা। এরমধ্যে হরতাল-অবরোধ হলেতো কথাই নেই। একটা সরকারি মেডিকেলে এধরণের রোগীর সংখ্যাই বেশি। জনগণ কখনও দেখতে যায়না বাচ্চাটি কি অবস্থায় এসে ভর্তি হয়েছে বা কতটুকু দেরিতে এসেছে। তারা শুধু এটুকুই দেখে যে সাদা এপ্রোন পরা মানুষগুলো সারাদিন সারারাত ছুটোছুটি করেও তাদের বাঁচাতে পারেনা। সাংবাদিকরা এসে তাদের বুঝায় এই মানুষগুলোর অবহেলাতেই শিশুটি মারা গেছে। তাদের ছবি তুলে নিয়ে যায় আর তাতেই তাদের পত্রিকার কাটতি বেড়ে যায়। সারা দেশের আপামর জনগণ তাই সত্যি মনে করে আর ডাক্তারদের জাত-গোষ্ঠি উদ্ধার করে। আমাদের এই কথাগুলো কখনও মিডিয়া স্পটলাইটে আসেনা কারন এসব লেখাতে পত্রিকার কাটতি বাড়েনা। মাঝে মাঝে মনে হয় ডাক্তারদের নিজেদের কোন পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেল খোলা উচিত। তাতে অবশ্য পাঠক বা দর্শক আদৌ হবে কিনা সন্দেহ কারন পাবলিক ডাক্তার নিয়ে গুজব শুনতে ও গুজব ছড়াতেই অধিক পছন্দ করে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষেই ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব। কিন্তু যে দেশে প্রতিদিন পেট্রোল বোমায় ১৫-২০ জন মানুষ মরছে সেই দেশে একটি হাসপাতালের গড় মৃত্যু থেকে মাত্র ৯ জন বেশি মরলে তার দায় ডাক্তারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়াটাই স্বাভাবিক। তবু এতটুকু অনুরোধ সবার কাছে করব। আপনাদের আশেপাশে যেকোন গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে বাচ্চা ডেলিভারি করাতে উৎসাহিত করুন। সেইসাথে জন্মের সাথে সাথে বাচ্চাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে বলুন এবং তা ছয়মাস পর্যন্ত চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করুন। তাহলে সাধারণের অবহেলা বলুন আর চিকিৎসকের অবহেলাই বলুন সকল প্রকার মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার আমরা কমিয়ে আনতে পারব।
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।