somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অথচ শেখ কামাল নাকি ছিলেন ব্যাংক ডাকাত!

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(জন্মদিনে তার প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও ভালবাসা)
সামান্য জামাকাপড়ের বেলায় আশ্চর্য পরিমিতিবোধ, তিনি যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছেলে, বিলাসিতা কি তাকে মানায়? অথচ তার নামে ছড়ানো হল, এই লোকটা নাকি…

১৯৭২ সাল। মিউনিখ অলিম্পিক। জার্মান এমব্যাসির পিআরও রুহেল আহমেদের অলিম্পিক দেখার খুব শখ। কিন্তু সম্পর্কে চাচা পশ্চিম জার্মানির রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী প্রতিদিন তার সামনে অলিম্পিকের ভিভিআইপি টিকিট দেখিয়ে ঘুরে বেড়ান। খুনসুটির সুরে হাসতে হাসতে বলেন, নট ইন ইয়োর লাইফটাইম ডিয়ার…

রুহেল ভাইয়ের মেজাজ খারাপ হয়, কিন্তু তিনি কিছু বলতে পারেন না। হঠাৎ একদিন তার ডাক পড়ল চাচার রুমে। ঢোকামাত্র টিকিটের গোছা ছুড়ে দিলেন রাষ্ট্রদূত। থমথমে চেহারা। জানা গেল, প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ, ডাক্তার বলেছেন, স্ট্রেস প্রবলেম, এক মাস রেস্ট নিতে। তাই সপরিবারে চলে এসেছিলেন সুইজারল্যান্ড। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের মাঝে দিন কাটে যার, তিনি কি প্রবাসে একা থাকতে পারেন? অগত্যা ডাকো ইউরোপের সব রাষ্ট্রদূতদের। ব্যাস, হুমায়ূন রশিদের অলিম্পিক দেখা শিকেয় উঠলো, মাঝখান থেকে ভিভিআইপি টিকিটের গোছা নিয়ে মনের আনন্দে মিউনিখ চলে গেলেন রুহেল ভাই।

এর মাঝে হঠাৎ খবর এল ভিআইপি গেস্ট এসেছেন, তাকে অভ্যর্থনা জানাতে হবে। হোটেলের রুমে নক করার পর যিনি দরজা খুললেন, তাকে দেখে রুহেল ভাই অবাক, আর রুহেল ভাইকে দেখে তার চেয়েও বেশি অবাক গেস্ট-
—”কামাল, তুই?
বহুদিন পর দেখা হয়ে গেল দুই বন্ধুর। হাসতে হাসতে রুহেল ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
–ক্লাবে যাবি, ড্যান্স দেখবি? কামাল চোখ পাকিয়ে বললেন,
—বিদেশে এসে তুই তো ব্যাটা পুরাই নষ্ট হয়ে গেছিস, কি কস এইসব? পুরাই খবিশ…

রুহেল ভাই কামালের ড্রেসের দিকে তাকিয়ে বললেন,
—এইটা কি পড়েছিস? ফকিরা ফকিরা লাগতেছে। তুই একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে…

কামাল হাসতে হাসতে বললেন,
—আমি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত দরিদ্রতম দেশের দরিদ্রতম প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, আই উইল ওয়্যার অনলি হুইচ আই ক্যান এফোর্ড। এইটা নিউমার্কেটের মাস্টার টেইলার্স থেকে বানানো। ১৫০০ টাকা দিয়া বানাইছি দোস্ত , এইটা কি কম দামি? বিধ্বস্ত দেশটা এখনো মেরামত করতে পারলাম না, একান্তই এইটা একটা রাষ্ট্রীয় আয়োজন, একটা মর্যাদার ব্যাপার আছে… তাই এই ড্রেসটা বানাইছি, এর চেয়ে আর কত দামী কাপড় পড়তে বলোস তুই আমারে?

জবাব শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন রুহেল ভাই, তার মুখে কথা যোগায় না।

শেখ কামাল প্রসঙ্গ পাল্টে বলেন, দোস্ত, একটা ক্লাব দিছি, নাম আবাহনী ক্রীড়াচক্র।

রুহেল ভাই বলেন, এইটা কেমন নাম? কামাল বললেন, আরে,পুরা বাংলা নাম,
তুর্যও (ফুটবলার গাজী সালাউদ্দিন) আছে আমাদের সাথে। তুর্য’র কথা শুনে খুশি হন রুহেল ভাই, বলেন, জার্সি কি কালারের বানাইছস? কামাল বলেন, এখনো তো ঠিক করি নাই। তখন জার্সি বলতে ছিল লম্বা শার্ট, টি-শার্টের যুগ শুরু হয়েছে মাত্র। দুজনে দাড়িয়ে ছিলেন বিখ্যাত জার্মান ব্র্যান্ড বায়ারিশ মোটর ভেহিকেল (বিএমডব্লিউ) এর কার্যালয়ের সামনে। রুহেল ভাই হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে কামালকে দেখিয়ে বললেন, দেখ তো, আকাশী নীল আর সাদার এই কম্বিনেশনটা জার্সি কালার হিসেবে কেমন?

কামাল একটু চিন্তিত স্বরে বললেন, একটু মাইল্ড হয়ে যায় না?

রুহেল ভাই বললেন, আরে এইটা ডিফারেন্ট হবে। জার্সি তো সবই বেশি রংচংয়ের…

এমব্যাসির কর্মকর্তা হিসেবে ভিভিআইপি গেস্টের হবার কারনে তখন প্রতিদিন ৫২ মার্ক হাতখরচ পেতেন রুহেল ভাই। সরাসরি চলে গেলেন অ্যাডিডাসের শোরুমে, ২২ সেট জার্সি কিনে কামালকে গিফট দিলেন। আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রথম অফিসিয়াল জার্সি, শেখ কামালের স্বপ্নের আবাহনী ক্রীড়াচক্র, আকাশি নীল জার্সি…

ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মৃতিচারন করছিলেন Ruhel Ahmed বাবু ভাই, মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার। মুগ্ধ শ্রোতা আমরা কজন, তন্ময় হয়ে শুনছি। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে প্রচণ্ড যুদ্ধের এক পর্যায়ে পাকিস্তানী হানাদারদের গুলিতে বাম পা উড়ে যায় তার, প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম পা নিয়ে চলছেন আজো। শেখ কামালের খুব পুরনো বন্ধু ছিলেন, খুব কাছ থেকে দেখেছেন কামালকে। খুব লাজুক ছিলেন কামাল, অপরিচিত কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে সে কী সংকোচ তার! সামান্য জামাকাপড়ের বেলায় আশ্চর্য পরিমিতিবোধ, তিনি যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছেলে, বিলাসিতা কি তাকে মানায়? অথচ তার নামে ছড়ানো হল, এই লোকটা নাকি ব্যাংক ডাকাত, অন্যের স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায় গভীর রাতে… কী বিচিত্র অপপ্রচার, কী অদ্ভুত মিথ্যাচার…

স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে আজ শেখ কামালদের গৌরবউজ্জ্বল অবদান ইতিহাসের বিস্মৃত পাতা মাত্র। দেশের প্রতি অসামান্য ভালবাসা বুকে নিয়ে চলে যাওয়া শেখ কামালদের প্রজন্ম চেনে ব্যাংক ডাকাত হিসেবে, লম্পট হিসেবে, নিকৃষ্ট মানুষ হিসেবে। কী অসাধারন সম্মান! কী অভুতপুর্ব শ্রদ্ধা !

(লেখাঃ Rahman Raad)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০৬
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×