হরতালের দিন ফার্মগেট থেকে ক্লাস করতে যাওয়া এমন কিছু ছিলো না। কিন্তু বাসায় বলতাম, হরতালের আগের রাতে হলে থাকা-ই নিরাপদ। এভাবে আগের সন্ধ্যায় চলে যেতাম।
তারপর আমরা দুইজন ঘুরতাম, কখনও রিকশায় কিংবা কখনও পায়ে হেঁটে। মিরপুর DOHS এর নতুন লাগানো সোডিয়ামের নিচে রিকশায় বসে গান গাইতাম। রিকশা এর মাঝে ইসিবি ক্যান্টিন পার হয়ে, সাগুফতা পর্যন্ত ঘুরে আবারো একই জায়গা চলে আসতো। তখন আমাদের কেউ একজন গলা উঁচিয়ে বলতাম, মামা, আরেকটা চক্কর দেন তো।।
ঐ মেয়েটার চোখ খুব সুন্দর। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম ও যখন দুই হাত নাচিয়ে গল্প করতো।
মেয়েদের হলে ঢোকার সময় ১০টা। আর আমরা নয়টা সাতান্নতে গল্প অসম্পূর্ণ রেখে রিকশা থেকে নামতাম। অসম্পূর্ণ গল্প কখনই শেষ হওয়ার কথা ছিলো না। আমারও অনেক ইচ্ছা ছিলো, ও যখন ওর পাগলামিগুলা করবে, আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো। অন্তত ওর বিয়ের আগ পর্যন্ত।
কিন্তু থার্ড ইয়ারে উঠতে উঠতে গল্প ফুরায় গেলো কিভাবে যেন। এখন আমি ওকে ফোন করে প্রায়ই চুপ করে থাকি। ওর সাথে কথা না বলে হেঁটে চলে যাই। তারপর ওর থেকে দূরে গিয়ে আমাদের লম্বা প্ল্যানগুলোর থেকেও লম্বা একেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলো খুব অল্পসময়ের জন্যই বোধহয়।
ওর ইচ্ছা ছিলো অ্যাস্ট্রোনমি পড়ার। কিভাবে কিভাবে এখন আমার সাথে কাঠখোট্টা ইলেকট্রিকাল পড়তে এসে জুটেছে। তবুও ওর সাথে ঘুরতে ঘুরতেই ভাবতাম, অ্যাস্ট্রনমির আকাশ তৈরি করা মনে হয় এতই সহজ।
কিন্তু ঐ আকাশটা কখনও তৈরি হবে না আর, জানেন। মাঝে মাঝে মনে হয়, কতবড় সাহস আমার, আকাশ তৈরির প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছিলাম। তবে ভুলটা মনে হয় ইচ্ছা করেই করা। কারণ তখনও ভাবতাম, লেখকেরা নাকি সবকিছু নিজের মত করে বানিয়ে ফেলতে পারে।
তবে আমি যদি সত্যিকারের লেখক হই কোনওদিন, আমার কিবোর্ড কিংবা খাতায় আমি ঐ আকাশটা বানাবো। অমাবস্যা হবে না ঐ আকাশে, এতটুকু শুধু বলতে পারি।
জানিনা সেটা কবে। কয়েকদিন পরও হতে পারে, আবার ওর বড় বড় চোখের চারপাশ সংকুচিত হতে শুরু করার পরও হতে পারে।
কিন্তু গল্পটা আমি ওকেই উৎসর্গ করবো।