somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন পাগলে হলো মেলা (দ্বিতীয় পর্ব)

০১ লা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link)

নিজের কথা বলি এবার। আমি হলাম বিশিষ্ট ভণ্ড লেখক এবং কবি!! তাই থিসিস গ্রুপে আমার ভূমিকা কি সেটা এখন পর্যন্ত অনেকটাই রহস্যাবৃত। যদিও অনিন্দ্য আর দানিয়েলের মতে, থিসিস সংক্রান্ত সবরকমের লেখালেখি হলো আমার প্রধান কাজ।
কিন্তু সমস্যা হলো, আমি যা লিখি তার এক বিন্দুও ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত না। বরং বস্তা-পচা লেখালেখি নিয়ে একটা সাহিত্যিক মার্কা ভান করে বসে থাকি। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রেখেই রবীন্দ্রনাথ টাইপের ভাব নেই।
পাঞ্জাবী পড়লেই যে সুনীল হওয়া যায় না এই সহজ সত্যটাও আমি এখনও মেনে নিতে পারি নাই।

তবে হ্যাঁ, গ্রুপের এখন পর্যন্ত যা অবস্থা, থিসিস পেপার আমার ঐসব প্রেমের গল্প-কবিতা দিয়েই ভর্তি করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
আরো সমস্যা আছে আমার। আমি হলাম কাজে-আকাজে একশ’ জায়গায় দৌড়ানো মানুষ, সোজা বাংলায়ঃ কামলা। প্রোগ্রাম, ফাংশন, ফেস্টিভাল, লিটারেচার ক্লাব, মিটিং- এইসব দুনিয়ার আজাইরা কাজ করেই আমি দিন কাটাই। এমনকি একটা ক্লাস না করেও সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ভার্সিটিতে থাকার অনবদ্য রেকর্ডও আমার আছে।

সেন্টিমেন্টাল হিসেবেও আমার যথেষ্ট সুনাম কিংবা দুর্নাম আছে।
অনিন্দ্য আর দানিয়েলের মতে ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে, আমার পাশে বসে কেউ যদি আমার সাথে মিনিট দুয়েক কথা না বলে, আমি নাকি ধরে নেই যে আমাকে ইগনোর করা হচ্ছে। আর আমি সেই দুঃখে অভিমান করে আমি দিনের পর দিন গাল ফুলিয়ে বসে থাকি।

তবে একটা ব্যাপার এখনও আমাদের গ্রুপে অমীমাংসিত। সেটা হলো; অনিন্দ্য আর দানিয়েল আমাকে গ্রুপে নিয়েছে, নাকি আমি দয়া করে ওদের গ্রুপকে সমৃদ্ধ করেছি। জানা কথা, পরেরটাই ঠিক। তবে ঘটনা যেটাই হোক, অন্যান্য সদস্যবৃন্দের আপেক্ষিক দুরবস্থায়, এই গ্রুপের স্বঘোষিত কিংবা অঘোষিত ক্যাপ্টেন এখন আমি।

আর আমাদের ত্রিরত্নকে সামলানোর দায়িত্ব পেয়ে যিনি ‘গর্বিত’ তিনি হলেন সিএসসি ডিপার্টমেন্টের জনৈক হেড। আমাদের থিসিস সুপারভাইজার। বিরাট ব্যস্ত মানুষ। উনার রুম এবং নিকটবর্তী এলাকা প্রায় সবসময়ই লোকে লোকারণ্য থাকে।

সপ্তাহে দুইদিন থিসিসের সময় বরাদ্দ থাকলেও আমরা নিজ-দায়িত্বে সেই সপ্তাহব্যাপী এটাকে মোটামুটি ‘মাসব্যাপী’ হিসাবে পরিণত করে ফেলেছি। এবং তারপরও যেই দুই-একদিন স্যারের সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেই, মনেপ্রাণে দোয়া করতে থাকিঃ ইশ, স্যার যেন আজকেও অনেক অনেক ব্যস্ত থাকে। বেশিরভাগ সময়েই আমাদের তিনজনের সম্মিলিত প্রার্থনা মঞ্জুর হয়ে যায়। কিন্তু কখনও কখনও শেষরক্ষা হয় না, স্যার আমাদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। এবং বলাই বাহুল্য; আমাদের গ্রুপের প্রকৃত থিসিস কিংবা হাইপোথিসিস শুরু হয় তখনই।

স্যারের রুমের বাইরে কয়েকটা চেয়ার থাকে, সেটাই আমাদের তিনজনের থিসিস-আড্ডা। যুগান্তকারী সব ব্যবসায়ী পরিকল্পনা মাথায় আসতে থাকে ওখানে বসেই।
অনিন্দ্য আগ্রহের সাথে বলে; বনানী নাকি মিরপুর ডিওএইচেস? কোথায় খাবারের দোকান দিলে বেশি লাভ হবে। এদিকে আমি দানিয়েলের সাথে ঠিক করতে থাকি, আমার বইয়ের প্রচ্ছদ কাকে দিয়ে করালে ভালো হয়। খুবই আবেগঘন মুহূর্তে মাঝে মাঝে বলেও ফেলি আমার কিংবা দানিয়েলের জীবনের কোনও এক দুর্বোধ্য-অবুঝ রহস্যময়ী নারীর কথা।

এর মধ্যে একদিন মাথায় আসলো, রাস্তায় একটা ফুড-কার্ট বসালে কেমন হয়!! সেটার নাম নিয়েও চিন্তা-ভাবনা হলো একদিন। আবার দানিয়েলের বাড়ি যেহেতু চিটাগাং, ও সেখান থেকে শুঁটকি এনে ব্যবসা করলে কেমন বেচাকেনা হবে এটা নিয়েও তুমুল আলোচনা চললো একদিন। কাকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া যায়? এটাও একবার থিসিস-কাপে ঝড় তুলে ফেললো।

তবে স্যারের নয়তলার অফিসে না যাওয়ার অসংখ্য অজুহাতও আমাদের তৈরি করা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। অনুষ্ঠান, বোনের বিয়ে, অমুক স্যার ডাকে, এক্সট্রা ক্লাস, সেমিনার, ক্লাস টেস্ট এসব তো এখন পুরানো হয়ে গেছে রীতিমত। সুতরাং প্রায়ই দানিয়েলকে বলতে শোনা যায়, দোস্ত, আমারে একটু প্লাস্টার জোগাড় করে দে, হাতে লাগায় স্যারের সামনে যাই। মাঝে একদিন তো আমি অজুহাত তৈরির জন্য সত্যি সত্যিই হাত ভাঙার প্ল্যানও করা শুরু করেছিলাম।

স্যারের রুমের সামনের ঝোলানো কাগজগুলার কোনটায় কি লেখা আছে এতদিনে মুখস্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তারপরও ঐ জায়গাটায় আমাদের থিসিস-বিষয়ের একটা শব্দও পড়া হয় না কেন জানি। ওখান থেকেই একসময় রুমে ডাক পড়ে।
‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ স্টাইলে আমরা তেলাপোকার মতন পিনপিন করে ঢুকি।
শেষ মুহূর্তে আমি আবার কখনও কখনও ঝুলতে থাকা শার্টটাকে প্যান্টের ভেতরে ঢোকানোর ‘প্রায়’ অশ্লীল একটা চেষ্টা করি। নাহয় ঊর্ধ্বগামী উত্তেজিত চুল যথাসম্ভব অবনত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালাই।

তবে কোনওদিন যদি গিয়ে দেখি যে স্যার রুমে নাই, অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করেই দাঁত কেলিয়ে সবার আগে গোটা এলাকা ত্যাগ করি। কোনও ভাবে স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেলেই বিপদ, আবার যদি ডাক দেয়?

আমি আর দানিয়েল এসব ক্ষেত্রে নয়তলায় স্যারের সাথে লুকোচুরি করে পার হয়ে আসি কোনওরকমে। এরপর নিচে নেমে দেখি অনিন্দ্য লুকোচুরি কিংবা থিসিস- কোনটারই তোয়াক্কা না করে ক্যাফের সামনে দুরন্ত প্রেমে মত্ত।

বিড়বিড় করে আমি গালি দেই কয়েকটা।
এই গ্রুপে এসে নিজের ছয়টা ক্রেডিট বানের জলে ভাসানোর জন্য দানিয়েলও নিজেকে অভিশাপ দেয় কয়েকবার।

তারপর... চলতে থাকে ‘ফর-লুপ’।
প্রেমিক, অভিনেতা আর এক ভণ্ড কবির অনিশ্চিত থিসিস-লীলা।


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×