ধর্ষণ নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ একটি উক্তি আছে, 'যখন ধর্ষণ অনিবার্য তা উপভোগ করাই শ্রেয়।' জানিনা কোন প্রেক্ষাপটে কথাটার জন্ম তবে আমার মনে হয় মানসিকভাবে অসুস্থ ছাড়া এটা কারো বিশ্বাস করার কথা নয়।
মেয়েটার বয়স ছিল ২৩। আমার বা আমাদের সমবয়সী। আমার ভাবতে অবাক লাগছে আমাদের বয়সী একটা মেয়ে যার কি না ভবিষ্যৎ নির্মাণের বয়স সে চলে গেছে। ছোটবেলায় আমি যেমন প্রজাপতির পেছনে দৌড়াতাম সে মেয়েটাও দৌড়াতো। হয়তো অন্য কোন দেশে, তবুও তাকে কেন যেন আমার অনেক কাছের মনে হচ্ছে। আমি হতবাক, বিষণ্ণ।
আমার বন্ধুরা যারা প্রতিদিন পত্রিকা পড়ার গরজ অনুভব করে না, তারাও এই ঘটনার বর্বরতায় শিউরে উঠেছে। তবে তাদের ধারণা, এই ঘটনা শুধু ভারতে বা এই টাইপের দেশে সম্ভব। বাংলাদেশে নাকি সম্ভব না। আশ্চর্যের ব্যাপার এদের মধ্যে মেয়েরাও আছে। তাদের মনে করিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে মেয়েরা আসলে কোথাও নিরাপদ নয়। বাংলাদেশ নারীদের জন্য ততটাই অনিরাপদ, যেমনটা বিশ্বের আর দশটা দেশ। খুব মনে পড়ছে ইয়াসমিনের ধর্ষণের ব্যাপারটা। ২৪ আগস্ট, ১৯৯৫ সালে যাকে বাড়িতে এগিয়ে দেয়ার কথা বলে করে ধর্ষণ ও হত্যা করেছিল তথকথিত জনগণের সেবক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। তবে, আমাদের দেশের জনগণ নপুংসক নয়। ক্ষোভে উত্তাল দিনাজপুর শহরে ২৭ আগস্ট হাজার হাজার মানুষের মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ নামক কিছু জারজ। ঘটনাস্থলে নিহত হন সাতজন, আহত হন তিন শতাধিক। পুলিশ, বিডিআর আর সেনাবাহিনী বন্য কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে ঝাপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র প্রতিবাদী মানুষের মিছিলে। বিক্ষোভে উত্তাল হয় সারাদেশ। তৎকালীন বিএনপি সরকার কাঁচুমাচু করে গ্রেপ্তার করে ধর্ষক পুলিশ সদস্যদের। পরবর্তিতে যাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
ইয়াসমিনের ঘটনাটা কেবলমাত্র একটা উদাহরণ। এমন ঘটনা এদেশে হরহামেশাই ঘটে। শিল্পপতির মেয়ে থেকে শুরু করে কৃষকের মেয়ে কেউ নিরাপদ নয়। সবসময় লোভীদের চকচকে চোখ সোল্লাসে অপেক্ষা করে একটা সুযোগের। প্রেমিক, বন্ধু, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, সহযাত্রী, সহকর্মী, অপরিচিতজন এমনকি স্বামীর হাতেও নারীরা নিরাপদ নয়। পশুর হাতে রেহাই পায়না 'ছয় থেকে ষাট' কোন বছরের নারীই।
ভারতের সে মেয়েটির খুনীরা যথোপযুক্ত সাজা পাক সে প্রার্থনা করি। আর মেয়ে, তুমি ভালো থেকো। কুয়াশায় ভিজে ভিজে প্রজাপতির পেছনে দৌড়তে থাকো অন্য কোন জগতে।