অভিনন্দন রাজশাহীবাসী। লোক দেখানো নির্বাচনী উপহার হিসেবে হলেও আপনারা গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন। অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের প্রথম বিভাগীয় শহর হিসেবে গ্যাসের সংযোগ পেয়ে আপনারা সত্যিই সৌভাগ্যবান।
আপনাদের জন্য এই ঘটনাটা যেমন আনন্দের তেমনি বিষাদের আমাদের রংপুরবাসীদের জন্য। একটি অঞ্চল প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কৃষি নির্ভর হয়ে থাকতে পারেনা। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিল্প কারখানার। কিন্তু যথাযথ জ্বালানীর অভাবে মৃতবৎ আমাদের উন্নয়নের আদিম স্বপ্ন। ধান, গম, পাট ও তামাকের প্রধান উৎপাদনকারী হয়েও আমাদের কপালে অভাবের রাজটিকা শুধুমাত্র কৃষিজাত এসব পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানার অভাবে। একটা অঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠতে প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের। যেটা আমাদের মতো দেশে মেটানো হয় প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। যোগাযোগের উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রয়োজন সহজসাধ্য জ্বালানীর, পেট্রল-ডিজেলের অগ্নিমূল্যের কারণে ইতোমধ্যে কার্যকরী বিকল্প হয়ে উঠেছে সিএনজি। এই সুবিধাটাই হাভাতের মতো আমরা চাইছি। বহুবছর ধরেই সরকার বাহাদুরের কাছে করজোরে প্রার্থনা করছি।
দেশে বর্তমানে পঁচিশটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এর ষোলআনা সুফল ভোগ করছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। অথচ মূল্যবান এই সম্পদ ব্যবহার করে সহজেই দেশের অবহেলিত উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর বিভাগের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। রংপুর বিভাগের কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় 'বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র'তে। যতদূর জানি তার সিংহভাগ পাঠানো হয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। ছোট একটা রাষ্ট্রে এত বৈষম্য থাকবে কেন?
বাংলাদেশকে নাকি বলা হয় 'Land of silent mines'! তাহলে এই খনিজ সম্পদ থেকে লাভ কী যদি না তা দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুষম উন্নয়নে লাগে? প্রতিবছর বাজেটে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়াবেন আর সারাদেশে বিশেষত রংপুর বিভাগে গ্যাসের সংযোগ দেবেন না তা হতে পারেনা। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটা সুষম উন্নয়নের রাষ্ট্র গঠনের জন্য। সিংহভাগ কৃষিপণ্য উৎপাদন করেও আমাদের গোলা হরিলুট করতে দেয়ার জন্য নয়। অবিলম্বে রংপুর বিভাগে গ্যাসের সংযোগ দিন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখুন। পূর্বপুরুষ নুরুলদীনের সামান্য লাঠি-সড়কি সম্বল করে জেগে ওঠার ডাক কিন্তু আমরা আজো ভুলিনি।