somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ও অকবি

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি হওয়া বা কবি কবি ভাব নেবার সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আজ কিছু কথা বলব। কিছু বাস্তবতার কথাই তুলে ধরতে চেষ্টা করব। আপনি হয়তো উঠতি কবি বা কবি কবি ভাবের বাহক। আপনি ভাবতেই পারেন এটা আপনার সুপ্ত প্রতিভা। ধরুন কেউ একজন গান গাইতে জানেন বা ছবি আঁকতে পারেন। একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন তিনি হয়তো গান গাওয়া বা ছবি আঁকা শিখেছেন কোথাও। তার মানে তিনি বিরাট প্রতিভাবান আপনার কাছে কারণ আপনি গান গাইতে বা আঁকতে জানেন না। এবার ধরুন তাকে আপনি প্রত্যুত্তরে বললেন যে আপনি লেখেন। জবাবে প্রতিভাবান মাত্র স্বরবর্ণের প্রথম বর্ণটি উচ্চারণ করলেন। এমনকি ঠাট্টার ছলে বলেও বসতে পারেন ছোটবেলায় লিখতাম। যেহেতু কাব্যরচনার সাথে খাতায়কলমে (হাতেকলমেটা ঠিক যাচ্ছে না) শিখবার ব্যাপারটা কোনভাবেই জড়িত নয় সেহেতু সেটি কোন প্রতিভার পর্যায়ে ফেলাটা ওনার কাছে অমানবিক। অর্থাৎ তিনি গান জানেন বা আঁকতে পারেন তা তিনি শিখেছেন, পরিশ্রম দিয়েছেন, মেধার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অর্জন করেছেন। অন্যদিকে কবি হতে গেলে ট্রেনিং লাগে না তাই তিনিও ছেলেবেলাকার কবি বলে নিজেকে দাবী করেন। একটা ভুল কথা প্রচলিত আছে আমাদের মাঝে তা হল "ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে কবিদের সংখ্যা বেশি।" দেখুন-
"আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা,
ফুল তুলিতে যাই।
ফুলের মালা গলায় দিয়ে
মামার বাড়ি যাই।"
কত সহজ না! তাহলে আপনি লিখতে পারছেন না কেন? এর উত্তরে যদি খাতা বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, "এই নিন। লিখে দিলাম-
"আয় ভাইয়েরা, আয় বোনেরা,
বল খেলিতে যাই।
বলের খেলা শেষ হলে
খালার বাড়ি যাই।"
তবে আমি আমার বক্তব্য বুঝাতে অক্ষম। অকবিকে যদি কবির সাথে গুলিয়ে ফেলে কবির অপমান করেন তবে আমার কিছু বলার নেই। আর কবিতা লিখতে পারাটা শুধু কিন্তু অন্ত্যমিল নির্ভর নয়। একটি বাস্তব উদাহরণ দিই। দেখুন পরিষ্কার হয় কি না। আমি কবি হবার নিরন্তর প্রচেষ্টায় যখন ক্লান্ত তখন তৎকালীন বন্ধু একটি কবিতা লিখেছিল,
"পারব না হতে আমি পোকেমন
পারব না হতে আমি ডিজেমন।"
বুঝতেই পারছেন বাঙালি কত শিশুকাল থেকেই কবি! তো এই কাব্যপ্রতিভার কথা প্রকাশ পেতে না পেতেই বন্ধুমহলে, শত্রুমহলে ব্যাপক ব্যঙ্গবিদ্রুপের শিকার হতে হয়েছে আমাকে। নিজের একটি ফ্যান পেইজ খুলেও তাদের হাস্যরসের কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলাম। এদিকে তাদের ফটোগ্রাফির পেইজের সংখ্যা বাড়ছিল পাল্লা দিয়ে। একজন উঠতি কবির জন্য পরিচিতমহলেই কোন অনুপ্রেরণার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাওয়া যায় না এখন। যে গুটিকয়েক আমার কবিতা পড়েছে ট্যাগ খেয়ে বা ইনবক্স পেয়ে তারা প্রশংসার ডালি সাজিয়ে পাঠিয়েছে আমার ঠিকানায়। তবে পরবর্তীতে যখন ট্যাগ বন্ধ হয়ে গেল তাদের একটি মানুষও আমার কবিতা পড়ে নি। তাচ্ছিল্যের পরিমাণ কতটা উঁচুতে উঠলে "তুই দেখি কবি হয়ে গেছিস? বইমেলায় বই বের করবি নাকি? আমারে এক কপি দিস।" ধরণের কথা শুনতে হয় তা উদীয়মান কবিমাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। একজন ভবিষ্যতের কবির জন্য কি উৎসাহব্যঞ্জক! তার প্রিয় মানুষজন তার বইয়ের সৌজন্য পাঠক! ব্যক্তিগত সূত্র থেকেই বলি। গভীর হতাশা আর দুঃখবোধ থেকেই ঠিক করেছিলাম আর চেষ্টা করব না কবিতা লেখার। আমি অবাক হয়ে গিয়েছি ত্রিশের মতো লোক সেই মতকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। মোটে দুইজন ছাড়া কেউ দ্বিমত পোষণ করেন নি। এমনকি দীর্ঘ ৫ মাসের কবিতাবিরতিতে কেউ জানতেও চান নি কেন আর ফিরে আসার আহবান এদের কাছ থেকে আশা করাই দুরাশা।
তো এই হল মোটামুটিভাবে কবি কবি ভাব নেবার সমস্যা। উপরের আলোচনা থেকে পাঠক ধরেই নিতে পারেন যে এই সমাজে কবি না হওয়াটাই আপনাকে অনেকের থেকে আলাদা করে তুলবে। তাদের অভয় দিয়েই বলছি। কবিতার জগতে আপনার প্রবেশাধিকার কতখানি তা নির্ধারণ করবে আপনার বিবেকবুদ্ধি। আপনি কি কবিতা গবেষক হবেন, আবৃত্তিকার হবেন নাকি পাঠক থাকবেন কিংবা পুরোদস্তুর কবি হয়ে উঠবেন তা পুরোপুরি আপনার উপর। এখানে যেহেতু কবি নিয়েই আলোচনা হচ্ছে তাই কবি হওয়া নিয়েই কিছু মিছে আশার আষাড়ে বাণী শুনিয়ে যাই। একজন কবি নিজেকে কোন বাঁধনে জড়ান না। শিকলের মধ্যে থেকেও তিনি শেকড় নিয়ে ভাবেন। সাধারণে যা সাধারণভাবে দেখে কবির চোখ তা দেখে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর জন্মে কেউ কবি হয় না। কবি হয়ে জন্মাতে হয়। কাব্যচর্চা কেউ কখনো কাউকে শেখাতে পারে নি, পারবেও না। তাই আপনি যদি ধরে ফেলেন আপনার মধ্যে কবিসত্তা লুকিয়ে আছে তবে তাকে প্রকাশ করুন। খোলা হাওয়ায়, জোছনাবিলাসে তাকে উপভোগ করতে দিন। তবে জোর করে কবিসত্তাকে আনার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। অকবিদের কালো তালিকায় নাম উঠে যাবে। কবিতায় বেদনা মানেই আনন্দ। তাই কবি সব জড়তার উর্দ্ধে থেকে অপার অমৃতলাভ করেন। পার্থিব গঞ্জনাকে তুচ্ছ করে আত্মপ্রত্যয়ের সাথে যিনি এগিয়ে যান তিনিই প্রকৃত কবি। আর প্রকৃত কবির সম্ভাবনার দরজা অপার ঐশ্বর্যের ধাক্কায় এমনি খুলে যায়।

তাই প্রকৃত কবির জন্য আমার শুভকামনা আর অকবির জন্য থাকল সাবধানবাণী!!!
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×