যেই ছেলেটা দেখতে বিচ্ছিরি, উঁচু দাঁত, ট্যাঁরা চোখ - নায়ক হওয়ার কারণে ঠিকই শেষ পর্যন্ত নায়িকার মন জিততে পারে। বাপ-মা মরা যে ছেলেটাকে চাচা-চাচী ঘরে অত্যাচার করে, দিনশেষে সেই হয়ে যায় জাদুর জগতের রক্ষাকর্তা। ঘর পালানো, মায়ে খেদানো, অযোগ্য ছেলেটা পেয়ে যায় সুপার পাওয়ার। ছিঁচকাঁদুনে ছেলেটা ভাগ্যের মারপ্যাঁচে কোনও না কোনোভাবে ঠিকঠাক শিক্ষকের হাতে পড়ে জিতে নেয় কারাতে প্রতিযোগিতার ট্রফি।
কিন্তু, ঐ যে বললাম। সিনেমা আর বাস্তব জীবন এক না। সেটা আহনাফ-কে সবার আগে বুঝতে শিখিয়েছে তার মা-কে ছেঁড়ে আরেকটা মেয়ের পিছু পিছু চলে যাওয়া বাবা। আর তাই এই অল্প বয়সেই বাস্তবতার সাথে আহনাফের বেশ ভালোই জানাশোনা হয়ে গিয়েছে। সে জানে তার জন্য কোনও দারুণ শিক্ষক কোথাও অপেক্ষা করে নেই, কোনও ট্রেন তাকে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা সম্পন্ন জাদুকরের কাছে পৌঁছে দেবে না, কিংবা দিনশেষে জীবন তার পাতে রসগোল্লার মতন সুখ নামক কষ্টকল্পিত খাবারটাকে সাজিয়ে দিবে না। সেটা তাকে আদায় করে নিতে হবে।
কাজেই যখন রাতের বেলা দরজা খুলে কেউ চুপিচুপি বাসায় ঢুকছে সেটা আহনাফ টের পেল, সে ঘর থেকে বের হয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে লক্ষ্য করলো সে কে, কি করতেই বা এসেছে আর কোথায় যায়। চোর চোর বলে চিৎকার করার কথা একবার মাথায় এসেছিল ঠিকই কিন্তু গত মাসেই দুই বিল্ডিং পরের রাতুলের মা এভাবে চিৎকার করাতে চোর তার পেটে ইয়া বড় এক ছুরি ঢুকিয়ে তারপর পালিয়ে গিয়েছিল। এই চোরটাও যদি সেরকম আহনাফের পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় তবে তো সে মরেই যাবে। কাজেই, আহনাফ চুপ করে আগে দেখতে থাকলো। একটা লোক, বেশ লম্বা-চওড়া; ঘরের সব অন্ধি-সন্ধি যেন চেনা। পা টিপে টিপে আস্তে করে আহনাফের মায়ের ঘরে ঢুকে গেল সে।
সর্বনাশ!!! লোকটা যদি এখন মায়ের জমানো টাকাগুলো চুরি করে নিয়ে যায়? কিংবা যদি মাকে গলা টিপে মেরে ফেলে? কিংবা যদি মাকে বন্দী করে এসে আহনাফকে অজ্ঞান করে তুলে নিয়ে যায় আর বিদেশে পাচার করে দেয়? কিংবা মা আর তার কিডনি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দিলে? আহনাফের কিছুদিন আগে দেখা একটা সিনেমার কথা মনে পড়লো। সে তার লুকানো জায়গা থেকে বের হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে রান্নাঘরের পাশে থাকা স্টোররুমের দরজাটা খুলল আস্তে করে। কুরবানি ঈদের পর গরু কাটার সব বড় বড় ছুরি-চাকু-চাপাতিগুলা আবার ধার করে এখানেই রাখা আছে। মা-র অবশ্য শক্ত নিষেধ আছে যাতে আহনাফ ভুলেও এসব না ধরে। কিন্তু, এখন সেটা ভাবলে হবে নাকি? যা করার আহনাফকেই করতে হবে। হাতে সময় খুব কম।
আহনাফ দেখে শুনে একটা বড়, চকচকে ছুরি বেছে নিলো। লোকটা দেখতে বেশ হাট্টা-কাট্টা, বেশী সময় বা সুযোগ পাবে না সে। আরেকটা সিনেমার কথা মনে পড়লো তার। নিজের চাইতেও লম্বা কোনও লোককে প্রথমে হাঁটুর ঠিক পিছন দিকটায় আড়াআড়ি ভাবে কেটে দিলে সে হাঁটু ভাজ করে বসে পড়বেই। আর তারপর গলায় একটা পোঁচ। ব্যাস...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:৫৪