somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজ্ঞ বালক
আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

পুনর্জন্ম ও দেহান্তর, মানোয়া-মানহুয়ার জগতে ধেয়ে আসা সুনামি ও অন্যান্য

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে কটকটে বাংলা শব্দগুলোর ইংরেজি প্রতিশব্দ আর হালকা ব্যাখ্যা না দিলেই নয়।

প্রথমেই পুনর্জন্ম বা Reincarnation। এর সাদামাটা ব্যাখ্যা হলো নতুন জন্ম লাভ করা। সেটা হতে পারে নতুন কোনো শরীরে, নতুন কোনো সময়ে বা দেশে। কিংবা নিজের পরিচয়েই, নিজের শরীরেই, শুধুমাত্র অতীতকালে ফিরে যাওয়া।



অন্যদিকে দেহান্তর বা Transmigration। একে আত্মার দেহ পরিবর্তনও বলা যায়। অর্থাৎ নতুন এক দেহে, নতুন করে জীবন শুরু করা।

আচ্ছা এই উদ্ভট বিষয়ে লিখতে নিলাম কেন? কিছুটা আত্মপক্ষ সমর্থন করাটা বাঞ্ছনীয়। আমি পাঠক হিসেবে সর্বভূক। বই পড়ার পাশাপাশি গ্রাফিক নোভেল বা কমিকস পড়াতেও আমার অরুচি ছিলো না। ভার্সিটিতে পড়াকালীন দ্বিতীয় বছরে আমার পরিচয় হয় নারুতোর সাথে। এর আগে টিভিতে ড্রাগন বল, রুরোনি কেনশিন, কার্ডক্যাপটর সাকুরা আর গ্যান্ডাম দেখা হলেও এগুলো যে এনিমে আর সেই এনিমের সোর্স ম্যাটেরিয়াল যে হাতে আঁকা মাঙ্গা তা আমার জানা হয় নি। এবার জানলাম আর জেনেই ঝাঁপিয়ে পরলাম নতুন এই মাঙ্গার জগত জয় করতে। বিস্তারিত আলোচনায় যাবো না, তবে কমবেশি হাজারখানেক মাঙ্গা আমার পড়া হয়েছে। বেশিই হবে সংখ্যাটা, কম নয়। মাঙ্গার একটা বড় দুর্বলতা রঙের অভার বা সাদাকালো ছবি। পশ্চিমা কমিকস, ডিসি বা মার্ভেল যেমন চকমকে ছবি, মনোমুগ্ধকর রঙের খেলায় আন্দোলিত করে সেটা এই প্রাচ্যের মাঙ্গায় অনুপস্থিত। সেই খামতি মেটাতেই আবির্ভাব মানহুয়া ও মানোয়া-র।

মানহুয়া হলো চাইনিজ কমিকস আর মানোয়া হলো কোরিয়ান। সাদা কালো জাপানি মাঙ্গার জগতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল এই দুই নতুন ধারা। ভিন্নধর্মী কাহিনী ও আঁকা, সেই সাথে নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মিশেলে বেশ সাড়াই পরে গেলো। তবে, আমার যে বিষয় নিয়ে এই ব্লগপোস্ট, তাতে ফিরে আসি।

মার্চ ২০১৮ সালে আত্মপ্রকাশ করলো সোলো লেভেলিং নামের একটি মানোয়া। নায়ক সুং জিনও, ডানজিওন অনুসিন্ধানে গিয়ে যে মুখোমুখি হয় এক অসীম শক্তিশালী সত্তার ও বেঘোরে প্রাণ হারায়। কিন্তু, মৃত্যুর পর সে আবার ফিরে আসে কিছু সাল পূর্বে, এক রহস্যময় সিস্টেম তাকে সাহায্য করে আর সেই সুযোগে সে হয়ে ওঠে প্রবল ক্ষমতাধর ছায়া সম্রাট, মানবজাতির রক্ষক। দুর্দান্ত একশন সিকুয়েন্স, অসাধারন কালার টোনিং, ক্যারেক্টার বিল্ডআপ, আকর্ষনীয় কাহিনী - সবকিছু খাপে খাপ মিলে যাওয়ায় রাতারাতি ইন্টারনেট সেনসেশনে পরিণত হয় এই ওয়েব কমিকটি। সোর্স ম্যাটেরিয়াল, লাইট নভেলও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যায়। এনিমে এডাপ্টেশন, গেম, সবদিকেই নিজের বিজয় নিশান উড়িয়ে দেয় সোলো লেভেলিং। সেই সাথে ডেকে নিয়ে আসে এক অপ্রত্যাশিত সুনামি, একের পর এক একই ধাঁচে, একই রকম কাহিনীর ছাঁচে বের হতে থাকে মানহুয়া আর মানোয়া। তার চাইতেও অপ্রত্যাশিতভাবে কমবেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বেশ কিছুই, তাদের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে।

দ্য স্কলারস রিইনকারনেশন, যেখানে এক মার্শাল আর্ট গড-জিন ও, জন্ম নেয় এক স্থানীয় জমিদারের পুত্র হয়ে। আগের জীবনের রক্তাক্ত অতীত ভুলে সে কি এই নতুন পরিবারে, নব জীবনে মানিয়ে নিতে পারবে?
দ্য বিগিনিং আফটার দ্য এন্ড, যেখানে রাজা গ্রে নতুন করে জন্ম নেয় আর্থার লেউইন নামের এক সাদাসিধে শিশু হয়ে। কিন্তু, তার প্রতিভার বিকাশ অল্প বয়সেই ঘটতে শুরু করলে তার ফলে পুরো পৃথিবীর ভাগ্যের চাকাই বুঝি নড়ে যাবে এবার!
রিটার্ন অফ দ্য মাউন্ট হুয়া সেক্ট, রিটার্ন অফ দ্য ফ্রোজেন প্লেয়ার, দ্য গ্রেট ম্যাইজ রিটার্ন আফটার ফোর থাউজ্যাণ্ড ইয়ারস- নাম নেওয়া যায় এরকম অসংখ্য মানোয়া বা মানহুয়ার।

মানুষ না হয়ে যদি কোনো অদ্ভুতুরে জীব হয়ে দিনশেষে জন্ম নিতে হয়, আছে সেরকমও। দ্যাট টাইম আই গট রিইনকার্নেটেড এজ এ স্লাইম, ওভারলর্ড, রিঃ মনস্টার, সো আই এম এ স্পাইডার, সো হোয়াট? ইত্যাদি।

এমনকি একটা তলোয়ার হিসেবে নতুন জীবন শুরু করার মতন ওয়েব কমিকও আছে।

এত কথা কেন বললাম। অনেকটা অযথাই। কিংবা ধরে নিতে পারেন সামু ব্লগের পাঠকদের নতুন কিছু একটার ব্যাপারে জানাতে। আসলে ইদানিং ভালো বই পড়া হচ্ছে না। গত বছরে প্রায় হাজার দশেক টাকার বই কেনা হয়েছে। পড়া হয়েছে তার মধ্যে হাতে গোণা কয়েকটি। অথচ প্রায় প্রতিদিন ফোনের মধ্যে আমাকে আঠার মতন আটকে রাখে এই পুনর্জন্ম কেন্দ্রিক রংচঙে মানহুয়া বা মানোয়াগুলো। গতকাল আর আজকে যে দুটো পড়লাম, মান বিবেচনায় সেগুলো আহামরি কিছুই না। তাও প্রায় ঘন্টা ছয়েক সময় আমি অপচয় করেছি এগুলোর পেছনে, ২০০+ চ্যাপ্টার বা ৩০০০+ ছবি ডাউনলোড করে পড়ে। আজকে উদাস হয়ে নিজের জীবনের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হলো কেনো এই অদ্ভুত নেশা আমায় ছাড়ছে না।

কারণগুলো নিম্নে লেখা হইলো -

এক, আমি পুনর্জন্ম নিয়ে দারুণ ফ্যান্টাসিতে ভুগি। এই অদ্ভুত সুন্দর পৃথিবীতে একবার মাত্র বেঁচে মরে গিয়ে সার হয়ে ঢেঁড়শ ফলাতে হবে, এটা ভাবলেই হতাশ হয়ে যাই।
দুই, আমার এটেনশন স্প্যান কমে গিয়েছে, আগের মত তিন-চারশো পৃষ্ঠার বই আর আমাকে টানতে পারছে না। সেখানে বাচ্চাদের মত ছবির মধ্যে লেখা দেওয়া কমিকস গিলতে হচ্ছে দুধের বদলে ঘোল হিসেবে।
তিন, আমি আসলে নিজে দুর্বল বিধায় একজন দুর্বল মানুষের জয় দেখতে পছন্দ করি বা হিরো ফ্যান্টাসিতে ভুগি। স্বপ্ন দেখি একদিন আমিও এমন চুটকির মধ্যে অসীম ক্ষমতাশালী হয়ে সব শত্রুদের কচুকাটা করবো। তাই এই বিশেষ কাহিনীর ধাঁচটা আমার মনে গেঁথে গিয়েছে।
চার, আমি একটা ভ্যাদাইম্মা লোক। দেহে বাড়লেও, মনে এখনও ইম্যাচিউরের একশেষ রয়ে গিয়েছি আর তাই এই বাচ্চাদের মত কমিকস গিলি বসে বসে। ইত্যাদি ইত্যাদি...

যাই হোক, দিনশেষে এই লেখার কোন সমাপ্তি নেই। ব্লগারদের বলে যেতে চাই, একজন লেখকের কল্পনাশক্তি হতে হয় অসীম, আর এই কমিকসগুলো আপনাকে কল্পনার এক চমকপ্রদ রাজ্যে নিয়ে যাবে। অবসর থাকলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন কোনো একটা লিংক থেকে আর পেতে পারেন নতুন কিছুর স্বাদ। সময়টা মন্দ কাটবে না আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১:২০
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×