somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ

১০ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সেদিন কলেজ ছুটি হওয়ার পর বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তা পার হওয়ার জন্য এসে থামলে দেখি গ্রীন সিগন্যাল শুরু হয়েছে। অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পরে লক্ষ্য করলাম যে আমার পাশে একজন বুড়ো লোক এসে দাঁড়িয়েছেন। লোকটির পড়নে ছিল সবুজ রঙের পাঞ্জাবী এবং সাদা রঙের পায়জামা। তাছাড়া লোকটির চোখে ছিল কালো রঙের চশমা। অপেক্ষার এক পর্যায়ে বুড়ো লোকটি কেউকে উদ্দেশ্য না করে জিজ্ঞেস করলেন " গ্রীন সিগন্যাল কি শেষ হয়েছে "? আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিলাম " না দাদু এখনও শেষ হয়নি"। বুড়ো লোকটি আমার কণ্ঠ শুনে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন "গ্রীন সিগন্যাল শেষ হলে আমাকে একটু জানিয়ো দাদু ভাই"। আমি বললাম" ঠিক আছে দাদু "। বুঝতে পারলাম লোকটি আসলে অন্ধ। অতঃপর রেড সিগন্যাল পড়লো। আমি বুড়ো লোকটিকে বললাম" দাদু রেড সিগন্যাল পড়েছে চলুন রাস্তা পার হয়"। আমি, বুড়ো লোকটি এবং আরো কয়েক জন লোক রাস্তা পারা-পার করলাম। রাস্তা পার হওয়ার পর বুড়ো লোকটি আমাকে ধন্যবাদ জানালো। আমি খুশি মনে বুড়ো লোকটির ধন্যবাদ গ্রহণ করলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম " দাদু আপনার কি আর কোনো সাহায্য দরকার"? বুড়ো লোকটি কিছুক্ষণ ইতশ্ত বোধ করে বললেন " যদি কিছু মনে না করো দাদু ভাই তাহলে আমাকে একটি ঠিকানায় পৌঁছে দিবে"? আমি সম্মতি জানিয়ে জিজ্ঞেস করি "কোন ঠিকানা দাদু"? বুড়ো লোকটি পাঞ্জাবীর পকেট হাতরে একটি ছোট চিরকুট বের করে আমাকে দিলেন । আমি ঠিকানাটি পড়ে দেখলাম আর বললাম যে " হ্যাঁ, চলুন দাদু আমার বাড়ি যাওয়ার পথেই পড়বে এই ঠিকানা"। বুড়ো লোকটির মুখে একটু হাসি ফুটলো । আমরা হাঁটা শুরু করলাম। বুড়ো লোকটি জিজ্ঞেস করলেন " তো দাদু ভাই তোমার নামটা জানতে পারি "? আমি বললাম " দাদু আমার নাম আদনান "। বুড়ো লোকটি বললেন " খুব সুন্দর নামটা "। আমি তাকে ধন্যবাদ জানালাম । হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেক কথা বলি। অনেকটা দূর হাঁটার পর দেখি রাস্তায় কিছু লোকজন জমাট বেধে কি যেনও দেখছে আর সেই জমাট বাঁধা ভিড় থেকে চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে। বুড়ো লোকটি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন "দাদু ভাই কিসের চেঁচামেচি শুনা যাচ্ছে"? আমি বললাম "দাঁড়ান দাদু আমি দেখে আসি"। এই বলে আমি এগিয়ে গেলাম ঘটনা কি দেখার জন্য। গিয়ে দেখলাম একজন ভদ্র লোক একজন রিকশা চালককে মারাত্মক ভাবে মারধর করছেন এবং তাকে গাল-মন্দ করছেন । আমি একজন ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম " আচ্ছা এখানে কি হয়েছে "? ভাইটি বললো " যাত্রী নিয়া আইসা ২০ টাকা বারায় দিতে বলছিলো। তারপর তর্কাতর্কি থেকে মারামারি "। ভাইটি আরও বললো " এইসব রিকশাওয়ালারা এজন্য মাইর খায়"। আমি ফিরে এলাম বুড়ো লোকটির কাছে । তাকে বললাম ঘটনাটি। বুড়ো লোকটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন " তুমি কিছু করলে না দাদু ভাই"? আমি বললাম যে "না ওখানে কেউ যাচ্ছিলো না তাই আমিও যাওয়ার সাহস পেলাম না"। আমরা আবারও হাঁটা শুরু করলাম । বুড়ো লোকটি কে এইবার আমি জিজ্ঞেস করলাম " আচ্ছা দাদু আপনার কি কোনো কষ্ট হয় না এই ভাবে যে জীবনযাপন করেন? যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়?"। বুড়ো লোকটি আমাকে উত্তর দিলেন " হুম কষ্ট হয় খুব কষ্ট। মাঝে মাঝে মনে হয় এটি আমার জীবনে একটা অভিশাপ সরূপ । কিন্তু মাঝে মাঝে আবার মনে হয় যে সৃষ্টিকর্তা হয়তো বা চান নি যে এই চোখ দিয়ে আমি আর একজনের কষ্ট দেখি"। আমি বললাম " ঠিক বুঝলাম না দাদু"? বুড়ো লোকটি আবার আমাকে বললেন " আমার হয়তো বা চোখের দৃষ্টি শক্তি নেই তাই আমি অন্ধ। কিন্তু যারা চোখ থেকেও অবিচার সহ্য করে তারা কি আমার চেয়ে বড় অন্ধ নয়"? বুড়ো লোকটির কথা শুনে আমি কিছুটা থমকে যাই । "বুড়ো লোকটি কে ছিল আমি জানি না কিন্তু বুড়ো লোকটা তো সত্যি কথাই বলেছেন। সমাজে প্রতিদিন কারো না কারো সাথে হচ্ছে অবিচার আর আমরা তা চোখ দিয়ে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাই । তাহলে প্রকৃত অন্ধ তো আমরাই । সত্যি আমরা কতটা অন্ধ"।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ৮:২১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×