somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল রক্ত

১২ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির নাম রোকসানা আক্তার। জন্ম তার একটি ছোট গ্রামের দরিদ্র পরিবারে। বয়স মাত্র ১৫ বছর হতেই গ্রামের অন্যান্য দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের মতো তার কাঁধেও পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে। যার কারণে রোকসানাকে শহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় উপার্জনের উদ্দেশে। শহরে একজন উঁচু শ্রেণির লোকের বাড়িতে রোকসানা বাঁধা কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করে । প্রতিদিনের ছোট খাটো ভুলে তাদের অত্যাচার সহ্য করা হয়ে উঠলো রোকসানার নিত্য দিনের অভ্যাস।

আজও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না। ঘর মুছার সময় ধাক্কা লেগে পড়ে যায় ড্রয়িং রুমের টেবিলে রাখা একটি ফুলের টব। টব ভেঙ্গে যাওয়ার প্রচণ্ড শব্দে ছুটে চলে আসে তার মালকিন। রোকসানার কাণ্ডে তার মালকিন রাগান্বিত হয়ে করে দিলো চেঁচামেচি। রোকসানা কিছু বলার আগেই মালকিন তার চুলের মুঠ ধরে হেঁচকা টান দেয়। একপর্যায় মালকিন তাকে ধাক্কা দিলে ছিটকে শোফার হাতলের সাথে বাড়ি খায় রোকসানা। আঘাত পায় কপালে। কিন্তু তাতে কি হবে? মালকিন তো আর সেই দিকে খেয়াল নেই কারন তিনি তো এখন ভাঙ্গা টবের শোকে শোকাহিত। কিন্তু মেয়েটিকে আবার গালমন্দ করতেও ভুলেননি তিনি। রোকসানা প্রতিদিনের মতো মুখ বুজে সহ্য করে গেলো।

পরদিন সকালে অফিস যাওয়ার পূর্বে নাস্তা শেষ করে মালিক রোকসানাকে দ্রুত এক কাপ চা নিয়ে আসতে বলেন। রোকসানা তাড়াতাড়ি করে চা বানিয়ে নিয়ে আসতে গেলে বাথরুমের দরজার কাছে পানি জমে থাকায় পা পিচ্ছলে পড়ে যায়। গরম চা রোকসানার শরীরে ছিটকে পড়ায় তীব্র জ্বালা পোড়া করছে । কিন্তু জ্বালা পোড়ার ব্যথা মালিকের অফিস যাওয়ার সময়ের কাছে ছিল খুবই তুচ্ছ। এই দশা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে আরেক কাপ চা বানিয়ে মালিককে দেয় মেয়েটি।

এই পরিবারে যে সবাই রোকসানাকে গালমন্দ করে ঠিক তা নয়। যদি কেউ তাকে ভালবেসে থাকে তাহলে সে হলো এই পরিবারের ৭ বছর বয়সী ছেলেটি । বাবা-মার একমাত্র সন্তান সে। রোকসানাকে সে দিদি বলে ডাকে। রোকসানাও ছেলেটিকে খুব আদর করে। রোকসানা যখন রান্নাঘরে এসে জ্বালা পোড়া করা স্থান গুলোতে ঠাণ্ডা পানি ঢালছিল ছেলেটি তখন পিছন থেকে এসে জিজ্ঞেস করে "কি হয়েছে দিদি"? রোকসানা বলে "কিছুনা ভাইজান আপনে টেবিলে যাইয়া বহেন আমি আপনার লাইগা নাস্তা আনতাসি"। ছেলেটি গিয়ে নাস্তার টেবিলে বসে। ছেলেটির কথায় রোকসানা মনে মনে খুব খুশি হয়। মেয়েটির মুখে যন্ত্রণাতেও একটু হাসি ফুটে উঠে।

দুপুরে রোকসানা রান্না ঘরে কাজ করছিল । হঠাৎ সে শুনতে পেলো মা বলে একটি চিৎকার। দৌড়ে এসে দেখে ছেলেটি মেঝেতে পড়ে আছে । মাথার কাছ থেকে রক্ত বের হচ্ছে অবিরাম ভাবে। রোকসানা চিৎকার করতে থাকে " ভাইজান। মেমসাহেব দেয়খা যান ভাইজানের কি হয়সে"? রোকসানার চিৎকারে মালকিন দৌড়িয়ে এসে দেখে তার ছেলে মেঝে তে পড়ে আছে। বোঝার বাকি নেই যে ছেলেটি সিঁড়ি থেকে পা ফোঁসকে পড়ে গেছে । অতঃপর তাৎক্ষনিক রক্ত পড়া কোন রকমে বন্ধ করে ছেলেটিকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো।

হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর সেখানে ছুটে আসে ছেলেটির বাবা। ডাক্তার লোকটিকে জানায় যে মাথা ফেটে অনেক রক্ত ক্ষরণ হয়েছে। আর্জেন্ট ২ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু জানা গেলো যে বাবা অথবা মা কারো সাথে ব্লাড ম্যাচ হবে না কারণ ছেলেটিকে তারা দওক নিয়েছিল একটি অনাথাশ্রম থেকে। ছেলেটির বাবা ডাক্তার কে বললেন" আপানার যত টাকা প্রয়োজন আমি দিবো কিন্তু তার বিনিময়ে আপনি ব্লাড ম্যানেজ করে দেন"। ডাক্তার ছেলেটির বাবাকে গম্ভীর মুখে উত্তর দিলেন " দেখুন আসলে টাকার বিষয় না আপনার ছেলের জন্য দরকার ও পসিটিভ ব্লাড যা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই"। কথা বলার সময় ডাক্তার রোকসানাকে লক্ষ্য করলো। রোকসানাও খুব চিন্তিত। ডাক্তার ছেলেটির বাবাকে জিজ্ঞেস করে " উনি কি আপনাদের সাথের কেউ"? ছেলেটির বাবা বলেন "আমাদের কাজের মেয়ে"। "উনার ব্লাড টেস্ট করিয়ে একবার দেখেন যদি ব্লাড ম্যাচ হয়"। বললেন ডাক্তার। ছেলেটির মা উত্তেজিত হয়ে বললেন " ওর রক্ত কেন ? অন্য কোনও উপায়ে রক্ত যোগার করা সম্ভব নয় কি? মানে গরিব মানুষ বলে কথা। রক্ত যদি পরিষ্কার না হয়"? ডাক্তার রেগে বললেন " হোয়াট ননসেনস। কি বলছেন এই সব ? সেও একজন মানুষ। আপনি এমন কথা বলতে পারেন না"। ছেলেটির বাবা বললেন "দুঃখিত। আপনি আমার স্ত্রীর কথায় কিছু মনে করবেন না আপনার যা করা লাগে আপনি করুন"। তারপর ডাক্তার রোকসানা কে নিয়ে যায় ব্লাড টেস্টের জন্য। ছেলেটির বাবা মা করিডরে চিন্তিতভাবে অপেক্ষা করছিল।

ছেলেটির বয়স এখন ১৫ বছর । সেদিনের পর থেকে রোকসানাকে তার মালিক ও মালকিন কেউ আর গালমন্দ করেননি বরং এখন রোকসানাও এই পরিবারের একজন। হ্যাঁ । সেদিন এই নিচু শ্রেণির রক্তেই জীবন বেঁচে গেছিলো এক উঁচু শ্রেণি ঘরের প্রদিপ।

হোক না মানুষ উঁচু কিংবা নিচু শ্রেণির। শরীরের ভেতর তো সবার রক্তই লাল ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×