জানাযার উদ্দেশে খাটিয়া টি নামিয়ে রাখা হল। কিছুক্ষণ পর শুরু হবে লাশটির জানাযা। লাশটি এক সময় কে ছিল ? কি ছিল তার পরিচয় ? এই ব্যাপারে কারো কোন বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই। অতঃপর লাশটির জানাযা শুরু হল। তারপর লাশটি কে কবরও দেওয়া হল। কবর দিয়ে একে একে মানুষ চলে গেলো। শুধু কবরে শুয়ে থাকলো লাশটি।
লোকটির নাম মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান এবং গল্পটি তার।
এক সময়ের সব থেকে ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান। তার ছিল অঢেল ধন-সম্পদ। শহরের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ছিল তার বিশাল বিশাল বাড়ি। ছিল
বিলাস বহুল ফ্ল্যাট।
যখন তিনি কাজের উদ্দেশে বের হতেন তিনি গন্তব্যে কখনও হেঁটে বা বাসের সিটে বসে বা রিকশায় চেপে যান নি। যাতায়াতের জন্য ছিল তার দামি দামি ভিন্ন মডেলের গাড়ি। সেই সকল গাড়িতে বসে এসি ছেড়ে সর্বদা নবাবি হালে তিনি ঘুরে ফিরে বেড়াতেন।
প্রতিদিন তার পড়নে থাকতো বহু মূল্যবান পোশাক। পায়ে থাকতো দামি চামড়ার জুতা। হাতের আঙ্গুলে ছিল বিদেশ থেকে আনা মূল্যবান পাথরের আংটি। গলায় থাকতো স্বর্ণের চেইন।
কোন অনুষ্ঠানে গেলে তাকে ঘিরে মেতে থাকতো সুবিধাবাদী মানুষরা । সর্বদা তার প্রসংশায় পঞ্চমুখ থাকতো তারা।
যার কারণে মোহাম্মাদ আজিজুর রহমানের মনে গড়ে উঠে অহংকারের সাম্রাজ্য। তার মনে এতো অহংকারে বিষ ছড়িয়ে পড়ে যে কখনো তিনি সমাজের অন্য লোকজনদের বড় চোখে দেখেন নি এবং নিজের চেয়ে অন্য কেউ কে বড় ভাবেন নি।
তিনি নিজেকে সর্বদা রাজার ন্যায় ভেবেছেন আর বাকিদের প্রজা। এতো অঢেল সম্পদ থাকার পরও কখনও তিনি একটি পয়সা লাভ ব্যতীত কেউ কে দেননি। এমনকি আল্লাহ্র রাস্তায়ও তিনি দান করেন নি। কেবল ভেবেছেন নিজের লাভের কথা। কেবল ভেবেছেন নিজের কথা। তার অহংকার এতো ছিল যে তিনি সব কিছু টাকার বিনিময়ে পেতে চাইতেন। অর্থ প্রাচুর্য তাকে এতো পরিমাণ অন্ধ করে তুলে যে তিনি ভুলেই যান যে এক সময় তাকেও যেতে হবে। ঠিক তাই হল।
এক রাতে নিজের বিলাস বহুল বাড়িতে তিনি হৃদ-রোগে মারা যান।
পড়নের দামি কাপড় এবং জুতা আর রইলো না তার বদলে শরীরে জুটলো সাদা রঙের কাফনের কাপড়।
যাতায়াতের জন্য রইলো না দামি দামি গাড়ি তার বদলে জুটলো কাঠের খাটিয়া ।
কোথায় গেলো সেই দামি আংটি বা অলংকার?
কোথায় গেলো তার সব প্রশংসায় পঞ্চমুখী ভক্তরা?
বিশাল বড় বাড়ির বদলে জুটলো ছোট একটি মাটির ঘর।
তার চেয়ে বড় কথা কোথায় গেলো এখন তার পরিচয়? কিসেরই বা ছিল এতো অহংকার?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১১:২১