somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্পিরিট অফ ভ্যালেন্টাইন ডে

২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের আঁধারে বাড়ির উঠানে বসে নিভু নিভু আলোতে গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল গুলো পানি ছিটিয়ে সুন্দর করে বালতিতে সাজিয়ে রাখছে মমিন। ভিতর থেকে মমিনের মা এসে বলে " কীরে ছাউল ঘুমাবি না তুই। রাইত তো মেলা হয়সে না ঘুমায়া তো চোহের নিসে কালি বানায়া লাইসোস"। মমিন ফুল গুলো সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললো" হ মা আইতাসি তুমি হুয়া পড়ো হাতের কামডা সাইরা আমিও হুয়া পরতাসি"। মমিনের মা বলে "হুন এদুর ছাউলের কতা। আমারে কয় হুয়া পরতে। আমি জাইতাসি হুয়তে আয় জলদি"। "হ মা যাও আইতাসি"।

মমিনের বয়স ১৫ বছর। জন্মের পর তার বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার মা বহু কষ্টে তাকে বড় করে তুলেছে। জন্মের পর থেকে মা কে মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করতে দেখেছে মমিন। তাই মার কষ্ট একটু কমাবার জন্য সেও টুকটাক কাজ করে থাকে এখন। কখনও সে বড় বাজার গুলোতে মজদুরের কাজ করে। আবার কখনও সে মাটি কাটার কাজে সাহায্য করে তার বস্তির কেরামত চাচাকে। কিন্তু এগুলার মাঝে সে আরও একটি কাজ করে থাকে আর তাহলো ফুল বিক্রি করা। এটা হলো মমিনের সিজোনাল ব্যবসা।

১৪ ফেব্রুয়ারী আজ। ভালোবাসা দিবস। তাই মমিন সকাল সকাল তার মায়ের আগে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে ফেলে। ততোক্ষণে মমিনের মা উঠে পড়ে ঘুম থেকে। মমিন তখন তার বাড়ির ভাঙ্গা আয়নাতে দেখে দেখে চুলে তেল মাখছিল। মমিনের মা জিজ্ঞেস করে " কীরে ছাউল এতো হকাল হকাল কইরা কনে যাস আবার"। মমিন বলে " আরে মা কি কউ আইজ কা ওইলো ভ্যালেন্টাইন ডে"। " ভ্যালেন্টাইন ডে! এইডা আবার কিতা"। মমিন হেঁসে বলে" আরে বেকল আইজকা হয়লো ভালোবাসা দিবস। আইজকা প্রেমিক প্রেমিকারা ঘুরব এক লগে, ফুল কিনব কিননা একটা আরেক টারে দিবো। " ও আয়ছা এই কথা তাইলে"। " হ রে মা হ"। "এহন দেহি কয়ডা ভাত দাও খাইয়া ফুলডি লইয়া বাইর হই আমি"।

বালতি কাঁধে করে নিয়ে মমিন বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য কেবল একটাই বালতির সব ফুল গুলো বিক্রি করে বাড়ি ফিরা। হেঁটে হেঁটে মমিন এসে পড়লো তাদের এলাকার বড় বড় মার্কেট গুলোর কাছে। যার দোকানের সামনে সে ফুলের দোকান দিবে তার থেকে অনুমতি নিতে গেলো মমিন। দোকানের মালিক কে মমিন আগের থেকে চিনে। কারন এই দোকানে মাঝখানে সে ১ মাস দেখা শোনার কাজ করে ছিল। লোকটি মমিনকে দেখে বললো " কীরে মমিন ফুল লয়া হাজির হয়সোস দেহি"। মমিন বললো " হ চাচা আপনে যদি অনুমতি ডা দিতেন তয় আর কি বয়তাম"। লোকটি বলে " হুর বেটা বয়া পর তুই আমার পোলার লাগান এহানে আবার অনুমতি কিয়ের"।
মমিন খুশি হয় লোকটির কথা শুনে। " চাচা টেকার বেপার টা"? লোকটি আবার বলে উঠে " লো ঠেলা পোলার কথা হুন। টেকা টুকা লাগবো না"। মমিন লোকটির কথায় খুব খুশি হয়। হাসি মুখে মমিন একটা টুলের উপর বালতি রেখে শুরু করে দেয় তার ফুলের ব্যবসা।

সকাল থেকে মমিন অনেক ফুল বিক্রি করে। দুপুর বেলা দোকানের লোকটি মমিনকে ডেকে বলে " মমিন দুপুরতো হইয়া গেলো গা খাইসোস তুই"? " না চাচা খামু নি একটু পর"। " হ বুজছি বো ভিতরে আমার লগে খায়া লো"। " চাচা কিজে কন আপনের খাওন আমি খাই কেমনে"। " আরে বো চাচার কথা হুনবি না"? লোকটির জোরাজোরিতে মমিন লোকটির সাথে খেতে বসে পড়ে। খাওয়ার আগে মমিন তার মাকে একবার ফোন করে। "হ্যালো মা"। " কীরে বাপ তুই কনে বাসায় আইবি না"। " হ মা আমু আর কয়ডা ফুল আসে বেইচা আইতাসি আমি। তুমি ভাত খাইসো মা"। " হ রে বাপ তুই খাইবি না"? " হ মা খাইতে বয়সি চাচার লগে"। কথা শেষ করে মমিন আর দোকানের মালিক ভাগাভাগি করে দুপুরের আহার করতে থাকে।

বিকালের শেষ দিকে মমিন দেখলো তার কাছে আর মাত্র ৭ টি গোলাপ ফুল আর ৫ টি রজনীগন্ধা ফুল আছে। সে ফুল গুলোতে পানি ছিটা ছিলো। তখন একটি লাল পাঞ্জাবী পড়া যুবক রিকশা থেকে নামলো। কাছে এসে বলে " ছোট ভাই ৩টা গোলাপ আর ২ টা রজনীগন্ধা এক সাথে করে দাও তো"। মমিন যুবকটির কথামতো ফুলগুলো এক সাথে কচটেপ দিয়ে বেধে দিছিলো। যুবকটির ফোনে একটি কল আসে। " আবার কেন ফোন দিসো। একটু আগে না বলাম আমি বাইরে যাচ্ছি। না আমি আস্তে পারব না এতো তাড়াতাড়ি। ফোন রাখো তো যতসব আজাইরা আলাপ তোমার"। যুবকটি ফোন রেখে দেয়। মমিন যুবকটি কে ফুল দিতে দিতে বলে " কি বড় ভাই ভাবির ফোন নাকি"। যুবকটি উত্তর দেয় " নারে ভাই আমার মা ফোন দিসে। বলে নাকি একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে। বলতো আজকের দিনে যদি এমন কথা বলে তাহলে কেমন টা লাগে"। মমিন আর কিছু বলে না। যুবক মমিন কে ২০০ টাকা দিয়ে আবার রিকশাতে উঠে চলে যায়।

মমিনের কাছে যা ফুল ছিলো সে ২ ভাগ করে ২ টি ফুলের স্টিক বানায়। বাসায় ফিরার আগে সে শেষ বারের মতো দোকানের মালিকের কাছে বিদায় নিতে যায়।" চাচা"। লোকটি বলে " কি মমিন ফুল সব বেচা শেষ"। "হ চাচা এই লন চাচা আপনের জনে একটা ফলের তোরা"। এই বলে মমিন লোকটি কে একটা ফুলের স্টিক দেয়। লোকটি ফুলের স্টিকটি পেয়ে খুব খুশি হয়। যাবার আগে লোকটি মমিনকে ডাক দিয়ে একটি বড় আকারের চকলেট দেয়। মমিন নিতে চায় না। কিন্তু চাচার আবদারের কাছে মমিন হেরে যায়। অবশেষে চাচা কে সালাম জানিয়ে বিদায় নেয় মমিন। যাওয়ার পথে মমিন তার আয় করা টাকা থেকে একটা শাড়ি কিনে তার মায়ের জন্য। সব কিছু নিয়ে মমিন হাঁটা দেয় তার বাড়ির উদ্দেশে।


এক দিকে মমিন ফিরে যায় তার অপেক্ষারত মায়ের কাছে। আর অন্য দিকে যুবক ছুটে যায় তার প্রেমিকার কাছে। দুজনের হাতেই ভ্যালেন্টাইন ডের প্রতিক গোলাপ ও রজনীগন্ধা। কিন্তু দু জনের কাছে ভ্যালেন্টাইন ডের মর্ম এক নয়।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৩২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×