somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রমজান আসিল,তাই......

১০ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নগণ্য কাঠের চেয়ারটিকে মহাআরামের রকিং চেয়ার বানাইয়া তাহাতে ফাহিম তাহার বিখ্যাত 'দোল' খাইতেছে। আমি তাহার কাছে অবস্থান নিলাম। খানিক পর বলিলাম, দোস্ত রমজান তো আসিতেছে। কি চিন্তা করিতেছিস?
জিনিসপত্রের দাম বাড়িবে হু হু করিয়া। কোন কিছুতেই হাত দেওয়া যাইবে না। কিন্তু পেট তো বসিয়া থাকিবে না। সুতরাং হাত দিতেই হইবে। আবার হাত দিলে বরফ দেয়া মাছ ধরিলে কিংবা ফ্রিজে রাখা দুধের দাম জিজ্ঞাসা করিলেও হাত কিংবা অন্তর পুড়িবার সম্ভাবনা রহিয়াছে। কাঁচা মরিচের যেই ঝাল বাহির হয় তখন, আর বেগুনের কদর যে কি পরিমাণে বাড়িয়া যায় তাহা তো তুইও জানিস। সেই কারণেই কি করিব ভাবিতেছি। আর সেই হিসেবেই প্রস্তুতি নিতেছি।
আর ?
প্রস্তুতি নিতেছি ঢাকার যানজটে কি করিব সেই বিষয়ে । কারণ রমজানে ঢাকা শহরে ৬ ঘণ্টা বাদ দিয়ে বাকি ১৮ ঘণ্টাই যানজটে আটকা পড়িয়া থাকিবে। সুতরাং কিভাবে সেই যানজটে না এড়াইয়া এবং নিজেকে তাহার সঙ্গে সহনশীল করিয়া তোলা যায় সেই প্রস্তুত নিতেছি।
আর?
আরও প্রস্তুতি নিতেছি রমজান মাস আসিলেই কেউ কেউ চরম ভণ্ডামি শুরু করেন। তাহারা সারাদিন ভরপেট খাইয়াও বড় বড় ইফতার মাহফিলের নামে চরম অপব্যয় করিয়া অগ্নিমূল্যের বাজারে আরো খানিকটা ঘি ঢালিয়া দেন। আর ইফতার মাহফিলে আল্লাহ রাসূলের নাম না নিয়া তাহাদের অব্যক্ত যত কথাই সবই ঢালিয়া দেন। যদি দুর্ভাগ্যক্রমে এই রকম কিছু দাওয়াত পাইয়াই যাই, তাহা হইলে কিভাবে সামলাইব সেই বিষয় নিয়াও কিঞ্চিত চিন্তিত আছি।
আর...?
আর রমজান মাসে তো শয়তানকে আটকাইতে রাখা হয়, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। ছোট বেলাতে এই কারণে শান্তিতেই দিন কাটাইতে পরিয়াছিলাম। কিন্তু ইদানীং বোধ হয় শয়তান রোযার মাসের জন্য মানুষের মধ্যেই তাহার স্পেশাল কিছু শাগরেদ তৈরি করিয়া গিয়াছে। আর সেই চেলারা রমজানের সংযম বাদ দিয়া, বেপর্দা হইয়া রাস্তাঘাটে-মার্কেটে যে কি পরিমাণ ঘুরাঘুরি করে তাহার ভিতর দিয়া কিভাবে যে পথ চলিব, মাসখানা কিভাবে কাটাইব ইহা নিয়াও প্লান-প্রোগ্রাম করিতে হইবে ভাবিতেছি।
শেষ?
আরে না, রোযার মাসটা কোনভাবে কাটাইবার পরই যে ঈদের দিন বিকট শব্দে হিন্দি-ইংরেজি গান আমাদের কর্ণগুলিকে ফাটাইবার চরম প্রতিযোগিতার নামে তাহাদের এই প্রতিযোগিতা হইতে নিজেদের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত বিকল্পহীন মাত্র দুইখানা কর্ণকে কিভাবে বাঁচাইয়া রাখিব সেই বিষয় নিয়াও কম চিন্তিত নই। বাঁচিতে হইলে ইহারও একখানা প্রোগ্রাম এখনই করিয়া ফেলিতে হইবে।
তাহার পর আর কিছু?
হ্যাঁ, কয়েক বছর ধরিয়া লক্ষ্য করিতেছি, রমজান মাস আসিলেই আমাদের টেলিভিশনগুলিতে উপস্থাপিকা খবর পাঠিকারা মাথার উপর সামান্য পরিমাণে কাপড় উঠাইয়া দেন। ইহাতে আমাদের কোন কিছু যাইত আসিত না। কিন্তু তাহাদের কয়েক বছরের শিডিউল খেয়াল করিয়া দেখিলাম তাহাদের এই মাথার কাপড় দিবার বিনিময়েই বোধ হয় ঈদের দিন হইতে ৫ দিন ৭ দিন ধরিয়া বিশাল অনুষ্ঠান দিয়া ঘরবাড়িগুলিকে একখানা মিনি সিনেমা হল বানাইবার প্রতিযোগিতা চালান। ইহা কিভাবে কি করা যায় সেই বিষয়েও তো কিছু চিন্তা করতে হয়।
আর...?
হ্যাঁ, এই রকম আরও কিছু আছে। রমজান মাস আসিলেই আমাদের বিনোদন জগতে শুরু হয় বিরাট ও বিশাল মাত্রার প্রচারণা- পবিত্র ঈদে শুভমুক্তি পাইবে...ইত্যাদি ইত্যাদি। বিষয়টা তো তুই বুঝিতে পারিতেছিস। রমজানে আর ঈদকে তাহারা তাহাদের এই কাজের জন্য 'পবিত্র' বানাইতেছে।
ইহারও তো একখানা গতিক করিতে হয়। তাই কি করা যায় এই নিয়া ব্যস্ত আছি।
আর...?
হ্যাঁ, আরো রহিয়াছে। বছরে দুই একবারই বাড়িতে যাওয়া হয়। বাসওয়ালা,লঞ্চওয়ালারাও সুযোগ বুঝিয়া সারা বছরের ইনকামের কাজটা তখনই মিটাইয়া ফেলিতে চায়। সেই চরম ও পরম মুহূর্তে নতুন আরেকখানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কিভাবে টিকিটখানা তুলনামূলক সহজে ও সুলভে সংগ্রহ করা যায় সেই বিষয়েও একখানা ফাইল তৈরি করিতে হইবে,
আর কিছু?!
হ্যাঁ, রমজান মাসে মাঝে মধ্যেই অনিয়মিত শৌখিন নামাজিদের ধাক্কায় মসজিদে জায়গা পাওয়া মুশকিল। এমনই অবস্থা তাহারা সৃষ্টি করে যে, যদি জায়গা পাইতেই হয়, তাহা হইলে এক ঘণ্টা আগে গিয়া সিট লইতে হইবে। ইহাও আমার বর্তমান চিন্তা-ভাবনার একখানা কর্নার দখল করিয়া আছে।
আর?!!
হ্যাঁ, মাঝে মাঝে কিছু ধনবান তাহাদের ধনের ফ্রি বিজ্ঞাপন দিবার জন্য জাকাতের লুঙ্গি, শাড়ি, বিতরণের ঘোষণা দেন। তাহাদের বিজ্ঞাপন হইয়া যায়। কিন্তু বিজ্ঞাপন শেষে দেখা যায় কীটপতঙ্গের মতো কিছু মানুষ মরিয়া পড়িয়া রহিয়াছে। জাতিকে এই ভণ্ডামি হইতে রক্ষা করিবার কোন পথ আছে কিনা তাহা চিন্তা করিবার ভাব তো আমারও কিঞ্চিত রহিয়াছে।
এবার তো তাহা হইলে শেষ?
আরে না, এত সহজেই শেষ হইবে কিভাবে?মাঝেমধ্যেই তো আতঙ্কে থাকিতে হয় ঘুমের মধ্যেই ঈদ কি আগাইয়া আসে, নাকি পিছাইয়া যায়। সেই সাথে রমজান কি আদতে ২৯ খানা, নাকি ৩০ খানা, নাকি ৩১ খানাই রাখিতে হইবে, তাহা নিয়াও মাঝেমাঝে কিছু টেনশন রাখিতে হয়।
তাহার কথা শুনিতে শুনিতে আমি নিজেই ক্লান্ত হইয়া পড়িলাম। বলিলাম, ফাহিম তোর এই সব চিন্তা-ভাবনা তো রমজান মাসকেন্দ্রিক। তাই না?
আলবত তাই।
আচ্ছা ফাহিম, রোজার নিয়ত যে করিতে হইবে, তোর নিজের রোজা রাখিতে হইবে, সেই বিষয়ে কি কোন চিন্তাভাবনা আছে তোর?
আরে বেদনা তো সেইখানেই। রোজা নিয়া আর চিন্তা করিতে পারিলাম কই? দোস্ত আমার জন্য খানিকটা দোয়া করিস তো যেন শেষ মুহূর্তে গিয়া রোযার নিয়ত করিতে ভুলিয়া না যাই।
আবার দোল খাওয়া শুরু করিল ফাহিম। আমি বাহির হইয়া আসিলাম। সত্যিই তো, রমজান আসিলে সাথে সাথে এতগুলি চিন্তাও মাথায় আসিয়া উপস্থিত হয় যে, রোজার কথাই চিন্তা ভুলিয়া যাইতে হয়। সেই বিখ্যাত উক্তিটি আমার মুখ দিয়া ফের উচ্চারিত হইল, হায় সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!!
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×