somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদঃ খুশির প্লাবনে জীবনবোধের তরী ভাসাও!!

১৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদ আসতো। নিঁদমহলে জাগৃতির উচ্ছ্বাস আসতো। ঈদ আসতো আর খুশির প্লাবনে জীবনবোধের তরী ভাসতো। ঈদ আসতো আর চাষার চালে আশার জোনাকিরা খুশির চেরাগ জ্বালিয়ে দিতো।নীল আসমানের মিনারে দাঁড়িয়ে ঈদের চাঁদ আযান দেয়;সেই আযানের সপ্রাণ শব্দরা আসমানের শার্শিতে ছবি আঁকে ইসলামী জিন্দেগীর অতীত চিত্ররেখা;আসমানের নিচে যা ছিল মানবতার সবচে' মহাউদ্ভাস, সবচে' মহীয়ান অভিপ্রকাশ। সেই সময়ে মানবতার আসমানে ছিল রূপালী বৈভব আর ধুলোর ধরায় ছিলো মাহাত্ম্যের সোনালী শস্যের সম্ভার। সে আকাশ যখনই কালো হতো, ঈদের চাঁদের আযানে উচ্ছ্বসিত তরঙ্গ মুছে দিতো কালো আকাশের কালি!



তখন ছিলো মানবতার বসন্ত, ছিলো বিশ্বাস ও সততার সকালবেলা। তখন একজনের সৌভাগ্যে অন্যরাও অংশীদার হতো, একজনের দুঃখে অন্যজনও হতো দুঃখী। সাবই ছিল একে অপরের ভাই ভাই। সব মানুষ মিলে গড়ে উঠেছিল সাম্যের পরিবার। যেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিলো ইনসাফ ও ইহসান।সেখানে কারো জন্য বরাদ্ধ ছিলো না পাঁচতলা, কারো জন্য ছিল না গাছতলা।সবাই ছিল দায়িত্বশীল, ন্যায়ের উপাসক, সত্যের সংরক্ষক। সমাজ ছিল ন্যায় ও কল্যাণের নিকুঞ্জ। অপরাধ সেখানে তিষ্ঠাতে পারতো না, দুর্নীতি সেখানে দাঁড়াবার জায়গা পেত না, জুলুম সেখানে আক্রান্ত হতো চতুর্দিক থেকে।ফলে, জীবন সেখানে আলো-বাতাসে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছিল। সেখানে প্রত্যেকেই হুক্কুল ইবাদের সূত্রে বাঁধনে বাঁধা ছিলো।। সেই সময় ঈদের চাঁদ উঠতো তার সুষমা নিয়ে,পুরো আকাশে ছড়িয়ে পড়তো তার জীবনীশক্তি। ফলত, জনপদে প্রতিটি দুয়ারে যখন মেলতো ঈদের খুশি, তখন চমকে উঠে থমকে দাঁড়ানো বাতাস বিহ্বল হয়ে দেখতো জীবনের যৌবন কি সুন্দর! কি সুন্দর!!



ঈদ এখনো আসে। আসমানের ফিরোজা পর্দা চিরে এখনো ঈদের চাঁদ গ্রহ-তারার মাহফিল জমিয়ে তোলে।সেখানে শোনা যার নিজ্‌ঝুম নিশিপবনের নিশ্বাস, চারদিক থেকে ছুটে আসে হাসনাহেনার সুবাস,কোটি সেতারার কীলকরুদ্ধ স্বর্ণজ্যাোতিময় কোলাহল; ঈদের রাত মানেই প্রেমনহরের ঊর্মিতে সবাই মাতোয়ারা।কিন্তু সেই মাতোয়ারা মজমায় যখন ধূলির ধরণীর ক্রন্দন, হাহাকার-দীর্ঘশ্বাস আর পশুর উল্লাস আছড়ে পড়ে, তখন ঈদের চাঁদ আচ্ছাদিত হয়ে যায় মেঘের কালো চাদরে।তখন সেই চাঁদের জোছনায় তখন ধ্বনিত হয় বিষাদের রোদন আর সেই চাঁদের শরীরে তখন লেগে থাকে ক্লিন্ন ধুলোবালি। ফলে সেই চাঁদ কোনো আশা,স্বপ্ন ও নবজাগরণের শিহরণে এ ধরাকে শিহরিত করতে পারে না। বিশীর্ণ মানবতার বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বীর্যবন্ততাশূণ্য সেই চাঁদকে যেন পৃথিবী প্রত্যক্ষ করছে বহু শতাব্দী ধরে।



বহু শতাব্দী ধরে ঈদের চাঁদ অশ্রুসিক্ত চোখে দেখে আসছে বিপন্ন মানুষের ইফতার। বহু শতাব্দী ধরে কোটি কোটি মানুষের কাছে ঈদের চাঁদ মানেই ক্ষুধিত শিশুর বাঁকা পাঁজরের হাড়।বহু শতাব্দী ধরে জীবনে যাদের হররোজ রোজা ,তারা আর ঈদের দেখা পায় না। বহু শতাব্দী ধরে ইনসানিয়াতের মৃত্যুদশায় নীল আসমান পরিধান করেছে শোকের কাফন।বহু শতাব্দী ধরে ঈদের প্রাণশক্তি যেন লুকিয়ে আছে মরুর গোরস্তানে।বহু শতাব্দী ধরে মানুষ পালাচ্ছে মানুষের ঠিকানা থেকে, মানুষ নিজের বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধে লিপ্ত।বহু শতাব্দী ধরে পৃথিবী কাঁপছে পশুর পদশব্দে, সুন্দরকে করা হচ্ছে বলাৎকার।বহু শতাব্দী ধরে সত্যকে ক্ষত বিক্ষত করা হচ্ছে,আত্মাকে অপদস্থ করা হচ্ছে,বিবেককে মাটিচাপা দেয়া হচ্ছে। বহু শতাব্দী ধরে সীমারের বীভৎসতায় তপড়াচ্ছে হোসেনের কাটা মস্তক। চারদিকে বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ উঠেছে,কিন্তু সপ্তমহাদেশব্যাপী এই সুবিশাল কারবালায় কে কাকে বাঁচাবে??



যেখানে মানুষকে বাঁচানোর কেউ নেই ,সেখানে ঈদের চাঁদ হাসবে কেন? যেখানে কেউটি আর ড্রাগনেরা ফণা তোলে রাস্তা-ঘাট দখল করে আছে,সেখানে কীভাবে জমে উঠবে জীবনের ঈদগাহ? যেখানে রাজাধিরাজ হয়ে আছে পূঁজির কারুন, সেখানে কীভাবে কায়েম হবে হক্কুল ইবাদ? যেখানে আনা রাব্বুকুম আ'লা বলে দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফেরাউনী জাহেলিয়াত, সেখানে কে প্রতিষ্ঠা করবে সাম্য ও মানবাধিকার?



কিন্তু ঈদ তো কামনা করে সাম্য ও সম্পদের সুষম বণ্টন, কামনা করে বুকের সাথে মিলিত বুক।ঈদ তো কামনা করে বিশ্বাসী মানুষের মহাঐক্য। ঈদ তো কবর রচনা করতে চায় শোষণ,জুলুম ও বর্ণবাদের। ঈদ তো কামনা করে মাতৃক্রোড়ের মতো নিরাপদ বিশ্বচরাচর।ঈদ তো কামনা করে প্রেমের ঈদগাহে জীবনের সালাতে দাঁড়িয়ে মানুষ যেন অস্বীকার করে তাগুত আর জাহেলিয়াতকে। ঈদ তো দেখতে চায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সমীপে বিনীত আত্মনিবেদন। ঈদ চায় আত্মার শুদ্ধতা, কর্মের পরিচ্ছন্নতা পূর্ণ এক একান্ত মানবিক গমগমে উঠান। যেখানে পশুবাদ,ব্যক্তিবাদ, বস্তুবাদ বন্যতার থাকবেনা কোন চিহ্ন, প্রত্যেকেই লা-ইলাহা-ইল্লাহর অস্ত্র নিয়ে একজন সাহসী সৈনিক হয়ে এসবের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে নিরন্তর। ঈদ যে জীবনবোধের প্রতীক সেখানে তাই নেই কোন চপল বালখিল্যতা এবং আনন্দের সাথে সংযুক্ত আছে ইবাদতের নিষ্ঠা ও কর্ত্যবের তাগিদ,সামাজিক দায় ও পরিমিতবোধের অনিবার্য যৌথতা। এ লক্ষ্যে ঈদের জামাতে শরীক হবার আগেই সদকায়ে ফিতারা আদায়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে। যাতে উৎসবের সাথে যুক্ত হয়ে যায় সম্পদের সুষম বন্টনের অনিবার্যতা। ধনীর সাথে যেন গরীব,দুঃখী ও দুস্থরা আনন্দে সমান অংশীদার হয়ে উঠে। প্রতিষ্ঠিত হয় সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ।

জাহেলিয়াত ও পূঁজির দেবত্বের সাথে এই জীবনবোধের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। ভোগবাদ ও পুঁজিবাদের সান্ত্রী-সেপাইরা তাই ঈদের ইবাদত ও তার প্রাণসত্তাকে মাটিচাপা দিয়ে একে কেবলই উৎসব ও সম্ভোগের এক রগরগে মজমায় পরিণত করতে চায়। তাদের মিডিয়াগুলোতে এ কারণেই লাম্পট্যের কুকুরের লালা ঝরে!



ঈদ এসেছে! ইসলামে যেখানে যুদ্ধের শিকার, সেখানে ঈদ এসেছে। মানবতা, ইনসাফ,সাম্য ও নিরাপত্তা যেখান থেকে নির্বাসিত, সেখানে ফিক করে হেসে উঠেছে ঈদুল ফিতরের চাঁদ। হে ঈদের চাঁদ! তোমার হাসি বড়ই করুণ, বড়ই বেদনাময়। আমাদের পরাজিত সত্তাকে, আমাদের ক্লীবত্ব ও হীনম্মন্যতাকে তুমি আর উপহাস করো না। যদি পারো, ঝলসানো রুটি হয়ে নেমে আসো দরিদ্রজনের হাতে,যাদের উনুনে শূন্য জাড়ি,আর ক্ষুধাতুর ছেলে-মেয়ের কণ্ঠে কান্না। যেসব নিপীড়িত আঁখির কোঠরে সঞ্চিত রয়েছে ব্যথার বারিধি,যাদের কণ্ঠ রুদ্ধ, হাতে-পায়ে বেড়ি, তাদের পক্ষে তুমি হয়ে যাও উন্মুক্ত জুলফিকার।যার ঝলকে কঙ্কালেও জেগে উঠবে বজ্রের রোষ আর আমরা যার বিচরণশীল লাশ, তাদের ভেতর থেকেও উল্লাস করে জেগে উঠবে উদ্ধত যৌবন। তাই আমাদের মতো জীবন্মৃতের জন্য ইকবালের প্রার্থনাঃ
"ইয়া রব! দিলে মুসলিম কো ওহ জিন্দাহ তামান্না দে
জো কালব কো গরমা দে,জো রোহ কা তড়পা দে। "
-হে রব!তুমি মুসলমানদের অন্তরে জীবন্ত উদ্দীপনা দাও জাগিয়ে
যা কলবকে উত্তপ্ত করে,আর জীবনের উচ্ছ্বাস জাগায় নির্জীব হৃদয়ে।"

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×